স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা কাজী হায়দার স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো এ পদক পেয়েছেন চুয়াডাঙ্গার কিংবদন্তী ছড়াকার আহাদ আলী মোল্লা। ছড়া সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ গতকাল শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদক তার গলায় পরিয়ে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস। সাথে ১০ হাজার টাকার নগদ অর্থ পুরস্কার। একই সাথে জেলা লেখক সংঘ আহাদ আলী মোল্লাকে ছড়াসম্রাট উপাধিতে ভূষিত করে। দু বছর পর পর শিক্ষা-সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য, চিকিৎসা বিজ্ঞান ও সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য জেলার একজন কৃতিসন্তানকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ পুরস্কারসহ এ পদক প্রদান করা হবে। যার ব্যয়ভার বহন করবে কাজী হায়দার পরিবার। প্রথমবার এ পদকপ্রাপ্ত আহাদ আলী মোল্লা দৈনিক মাথাভাঙ্গার বার্তা সম্পাদক, দৈনিক যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধি, আলমডাঙ্গার সৃজনী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক ও দৈনিক মাথাভাঙ্গার টিপ্পনী কলামের লেখক।
গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে কাজী গোলাম মোস্তফা হায়দারের চতুর্থ স্মরণসভা ও পদক প্রদান অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জেলা লেখক সংঘের সভাপতি হায়দারপত্নী ডা. শাহীনূর হায়দার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন জেলা পরিষদের প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু। বিশেষ আলোচক ছিলেন জীবননগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোর্তূজা। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবক ও সংঘের উপদেষ্টা কাজী বদরুদ্দোজা, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুন্সি আবু সাইফ, লেখক সংঘের সহসভাপতি ওমর আলী মাস্টার, বেগমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোর্তূজা, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও সংঘের উপদেষ্টা কাজী বদরুদ্দোজা, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুন্সি আবু সাইফ, লেখক সংঘের সহসভাপতি ওমর আলী মাস্টার, বেগমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সংঘের সহসভাপতি আহাম্মদ আলী, সহসভাপতি রবিউল হোসেন সুকলাল, আবুল কাশেম মাস্টার, জেলা লেখক সংঘের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. বজলুর রহমান। অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথি আহাদ আলী মোল্লা তার বক্তব্যে পদক পাওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আজ জেলার বৃহত্তর একটি সাহিত্য সংগঠন থেকে আমি মূল্যায়িত হলাম। এই প্রাপ্তি আমাকে আরও উজ্জীবিত ও প্রাণিত করবে। আমি বৈচিত্রপূর্ণ ও নিরীক্ষাধর্মী ছড়া সৃষ্টির মাধ্যমে ছড়া সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে চাই। আমার এই স্বীকৃতি একদিন জাতীয় স্বীকৃতিতে সহায়ক হবে।
জেলা লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক কবি ময়নুল হাসান প্রয়াত কাজী গোলাম মোস্তফা হায়দারের জীবন ও কর্ম নিয়ে তথ্য সমৃদ্ধ আলোচনা করেন। একই সাথে তিনি পদকপ্রাপ্ত ছড়াকার আহাদ আলী মোল্লার সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করে শোনান। কাজী হায়দারের ছোট ছেলে জুবায়ের বিন হায়দার ঋষি তার পিতার স্মৃতি তর্পণ করেন।
বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন আহাদ আলী মোল্লা প্রতিদিন তার ছড়ার মাধ্যমে সমাজের অনাচার, অবিচার, বঞ্চনা, অসঙ্গতি ও কুসংস্কারের ভিত্তিমূলে আঘাত করে চলেছেন। ছড়া সংগ্রামের মাধ্যমে মানুষের সুপ্ত বিবেক জাগ্রত করার মহান দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন ছড়া শিল্পী আহাদ আলী মোল্লা। তাই যোগ্য মানুষকেই উপযুক্ত সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দের বক্তব্যের পালা শেষে চুয়াডাঙ্গা জেলা লেখক সংঘের পক্ষ থেকে আহাদ আলী মোল্লাকে ছড়াসম্রাট উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ছড়াসম্রাট লেখা সংবলিত উত্তরীয় আহাদ আলী মোল্লার কাঁধে ঝুলিয়ে দেন সংঘের সভাপতি ডা. শাহীনূর হায়দার। এরপর তার গলায় কাজী হায়দার স্বর্ণপদক পরিয়ে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস। তিনি তার বক্তব্যে জেলা লেখক সংঘ ও কাজী হায়দার পরিবারকে ধন্যবাদ ও পদকপ্রাপ্ত আহাদ আলী মোল্লাকে অভিনন্দন জানান। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জেলা লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক কবি ময়নুল হাসান। মধাহ্ন বিরতির পর জেলা লেখক সংঘ আয়োজিত সাহিত্য পাঠের আসর প্রতিধ্বনি অনুষ্ঠিত হয়। কবিতা পাঠ করেন গোলাম মোর্তূজা, মুন্সি আবু সাইফ, কাজী সদরুল উলা, আকলিমা খাতুন, আব্দুল আলীম, আবুল কালাম আজাদ, ওমর আলী মাস্টার, আহাম্মদ আলী, রবিউল হোসেন সুকলাল, মুরশিদ, আবদুল কুদ্দুস, রব্বেল হোসেন, মিম্মা সুলতানা মিতা, লুৎফর রহমান, রাজিয়া আক্তার রেখা, শওকত আলী, ময়নুল হাসান, রোজি, দিলরুবা, আফসানা কণা, সুরোত মেহেদী, হাবিবুর রহমান, তাসফিয়া আক্তার মালা, আবু তাহের, বিপু চৌধুরী, ইমতাজুল ইসলাম, ডা. রাশেদ আহমেদ রন্টু, ডা. খালেদা খানম, শাহাজাদ হোসেন লাবলু, আশাদুজ্জামান আশা, ডা. শাহীনূর হায়দার, কেএম জেসমিন রুমা, এমএ ফয়সাল, বজলুর হুদা, আবুল কাশেম মাস্টার, সাইফুল ইসলাম, কামরুজ্জামান রানা, আজগার আলী, ঐশী মমতাজ, আফসানা মেহজাবিন শাপলা, বুলবুল আহমেদ, এএইচ এম সুমন, আবু সাইফ, সামসাদ রানু. আসিফ জাহান, ফয়সাল আহমেদ, কবি গোলাম রহমান চৌধুরী, ইসলাম উদ্দিন, মামুন জোয়ার্দ্দার, আব্দুর রহমান, শেখ আনোয়ারুল হুদা, রহমান রনজু, রাজু আহমেদ, মেঘ প্রমুখ। গান গেয়ে শোনান আহাম্মদ আলী, নিশাত শারমিন সোনিয়া, রব্বেল হোসেন মালিতা, শ্রী রঘুনাথ পাল ও ডা. শাহীনূর হায়দার। দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত উপস্থাপন ও পরিচালনা করেন জেলা লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক ময়নুল হাসান। তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেন সংঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম।
প্রসঙ্গত, জীবননগরের প্রয়াত কাজী গোলাম মোস্তফা হায়দার ছিলেন একাধারে কবি, সংগঠক, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, কলামিস্ট, সাংবাদিক, সমাজসেবী, রাজনীতিক ও আইনজীবী। তিনি ২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি ছিলেন জেলা লেখক সংঘ ও জীবননগর সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা।