স্টাফ রিপোর্টার: পবিত্র মাহে রমজানে জেলাবাসীকে অগ্রিম শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গার জনগুরুত্বপূর্ণ নির্মাণাধীন দুটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ও ৫ আগস্টের পূর্বে বিএনপির রাজনীতি করা যে কঠিন ছিলো; সে বিষয়ে দৈনিক মাথাভাঙ্গার সঙ্গে কথা বলেন, তরুণ রাজনীতিক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ। আলমডাঙ্গা উপজেলার পাঁচকমলাপুর গ্রামে পিতার তৈরি করা একটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্ধৃতি টেনে সহজসরল ভঙ্গিমায় দৈনিক মাথাভাঙ্গার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ইসলাম রকিবের সাথে একান্তে কথা বলেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি’র নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ। তিনি বলেন, আমার পিতার শেখানো আদর্শ ও আলোকিত পথে আমরা চার ভাই বড় হয়েছি। ছোটবেলা থেকেই আমার বাবা আমাদের শিখিয়েছেন দুস্থ ও অসহায়ের পাশে কিভাবে দাঁড়াতে হয়, কিভাবে ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে নিজের সন্তানদেরকে আলোকিত করা যায়। একই সাথে কোরআন ও সুন্নার আলোকে অসহায় এতিমদেরকে বিনা পয়সার শিক্ষিত করে গড়ে তোলা যায় সেটি আমরা করে চলেছি। নিজের সন্তানদেরকেও কোরআনে হাফেজ করেছি। তিনি বলেন আমার পিতা বলতেন দান করলে সম্পদ বাড়ে, কমে না। পিতা-মাতার শেখানো সেই কথা মাথায় রেখেই আমরা পথচলি। পিতা পাঁচকমলাপুরের মতো একটি গ্রামে যে দ্বীন-ই প্রতিষ্ঠান তৈরি করে গেছেন, সেটাকে আঁকড়ে ধরেই আমাদের পথচলা। সেখানে শত শত শিক্ষার্থী (কোরআনে হাফেজ) দ্বীনি শিক্ষা লাভ করছে। সেখানে কোনো কমিটি নেই। নিজেরাই আর্থিকভাবে সহায়তা করে থাকি। পবিত্র রমজান মাসে এই প্রতিষ্ঠানে যে সকল শিক্ষার্থীরা শিক্ষা লাভ করছে সবার আগে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসীকে পবিত্র মাহে রমজান ও অগ্রিম ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। একান্ত আলাপচারীতায় চুয়াডাঙ্গা শহরের দুটি জনগুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গাবাসীর দীর্ঘদিনের চাওয়া চুয়াডাঙ্গা রেলগেটের লেভেল ক্রসিংয়ের ওপর ওভারপাস নির্মাণ ও ব্রিটিশ আমলে দর্শনা হতে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত বিস্তৃত রেল লাইনের ঐতিহ্যবাহী চুয়াডাঙ্গা রেল স্টেশন ভবন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এ দুটি কাজের মধ্যে স্টেশন ভবন নির্মাণের কাজ বেশ কিছুদিন আগে ফ্যাসিস্টের মদদপুষ্ট ঠিকাদাররা পালিয়ে থাকার কারণে বন্ধ ছিল। প্রশাসনের তদারকিতে আবারো সেই কাজটি শুরু হয়েছে। এ নির্মাণ কাজটি সম্পন্ন হলে চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ মেহেরপুর অঞ্চলের জনসাধারণের ভোগান্তি অনেকটাই লাঘব হবে। তবে এখন যে গতিতে কাজ চলমান রয়েছে আশা করা যায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্মাণ কাজটি সম্পন্ন হবে। যদি মন্থর গতিতে চলে তাহলে নির্ধারিত সময়ে এ কাজ সম্পন্ন হবে না। আসন্ন বর্ষাকালের কথা উল্লেখ করে শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, লেভেল ক্রসিংয়ের ওপর নির্মাণাধীন ওভার পাসটির নির্মাণ কাজ খুবই ধীর গতিতে চলছে। এভাবে কাজ চললে নির্ধারিত সময়ের দেড় থেকে দু বছর পরে গিয়ে কাজটি সম্পন্ন হবে। আমি ওভারপাস নির্মাণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে যেটি জেনেছি, সেটি হচ্ছে জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণেই কাজের গতি মন্থর হচ্ছে। এই জটিলতার নিরসন দ্রুত না হলে নির্মাণাধীন কাজের যে সময়সীমা সিডিউলে উল্লেখ আছে সেটি আরো দীর্ঘায়িত হবে।আসন্ন বর্ষা মরসুমে নির্মানাধীন ওভারপাসের দু-পাশে যে সড়ক রয়েছে সেটির অবস্থা খুবই করুন। আমি রোডস এন্ড হাইওয়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি আগত বর্ষা মরসুমের আগেই নির্মাণাধীন ওভারপাচের দু-দিকের সড়কটি যান চলাচলের উপযোগী করতে। এছাড়া বর্ষা মরসুমের লাগাতার বৃষ্টির পানি যেন সড়কে জমাটবদ্ধ হয়ে না থাকে, সে বিষয়টির দিকেও খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়েছি। তবে চলমান ওভারপাস নির্মাণের কাজ সকল জটিলতা কাটিয়ে যত দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব, সে বিষয়ে আমার দলের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। ৫ আগস্ট এর আগে বিএনপি’র রাজনীতি করা কেমন কঠিন ছিল; সে বিষয়ে সোজাসাপটা উত্তরে শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ৫ আগস্ট এর আগে বিএনপির রাজনীতিতে টিকে থাকা খুবই কঠিন ছিল। জেলার অনেক রাজনীতিবিদ ভেবেই নিয়েছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে কোনভাবেই ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না। সেই কথা ভেবে অনেকে রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশনা মতে, সব সময় চেষ্টা করেছিলাম বিএনপি’র নেতাকর্মীদের দুঃখ দুর্দশায় পাশে থাকতে। কতোটুকু তাদের পাশে থাকতে পেরেছিলাম তা বিএনপির নেতাকর্মীরাই ভালো বলতে পারবেন। এমনও সময় গেছে, গোপনে অনেক কষ্ট করে স্কাইপের মাধ্যমে আমি ও মাহমুদ হাসান খান বাবু ভাই দেশনায়ক তারেক রহমানের সাথে যোগাযোগ রেখে তার দেয়া নির্দেশনা মতে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে উজ্জীবিত রাখতে ও ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করেছি। মাহমুদ হাসান খান বাবুকে আহবায়ক ও আমাকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এজন্য একাধিক বার ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদপুষ্ঠ পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছি; গ্রেপ্তার হয়েছি। তবে আজ একটি কথা বলতেই হয় এই ১৬-১৭ বছরের দীর্ঘপথ পাড়িয়ে অর্থাৎ ৫ই আগস্ট এর আগে কখনোই বিএনপির রাজনীতিতে সরব থাকা, নেতাকর্মীদের সাথে যেগাযোগ, তাদের দুঃখ-দুর্দশায় পাশে থেকে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ রাখা সহজ ছিলো না। সেই পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না, ছিল কণ্ঠকাকীর্ণ, বন্ধুর ও উঁচু নিচু। গত বছরও গোপনে পবিত্র মাহে রমজানের ইফতারি করেছি জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ইউনিয়নে গিয়ে। তখন অতিগোপনে কারোর ঘরের বারান্দায়, কারোর বৈঠকখানায়, স্কুলের কোনো একটি কক্ষে বসে মুষ্টিমেয়ও কিছু নেতাকর্মীদের নিয়ে ইফতারি করেছি। তখন বারবার শার্লক হোমসের গোয়েন্দা কাহিনির মতো মনে হতো; আর কতদিন পরে প্রকাশ্যে আমরা চালাতে পারবো আমাদের দলীয় কার্যক্রম। না-কি! এভাবেই কেটে যাবে সুদীর্ঘকাল। তখন বিএনপির রাজনীতি করা সত্যিই কঠিন ছিলো। তবে সে সময়ে যারা রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিলো তাদেরকে আমি ছোট করে দেখছি না। তারা যদি নিজেকে শুধরে নিয়ে শহীদ জিয়ার আদর্শকে লালন করে, বেগম খালেদা জিয়ার শান্তির ধারণ করে ও দেশ নায়ক তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে পারে তাহলে জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি তাদেরকে স্বাগত জানাবো। চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হলে চুয়াডাঙ্গা বাসীর জন্য কি করবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, আমি আমার জায়গা থেকে চুয়াডাঙ্গার বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছি, আমার ওপরে দেয়া দায়িত্ব পালন করেছি। দলের কেন্দ্রীয় কমান্ড থেকে যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি নির্বাচন করব। আর যদি মনোনয়ন না দেয়, অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি তার পক্ষেই ভোট করব। এছাড়া এমপি নির্বাচিত হলে চুয়াডাঙ্গার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ অবকাঠামগত উন্নয়নে কাজ করতে চাই। চুয়াডাঙ্গাতে আমি একটি মানসম্মত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে চাই। সংস্কার করে আরো গতিসম্পন্ন ও আধুনিক মানের কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাই বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম মর্যাদাশীল প্রতিষ্ঠান আলমডাঙ্গার কুমারী ভেটেরেনারি হাসপাতালকে। চুয়াডাঙ্গাবাসীর দীর্ঘদিনের সভা একটি বাইপাস সড়ক ব্যাপারেও আমি কথা বলেছি। সড়ক বিভাগের কর্মরত আত্মীয়স্বজনদের সাথেও কথা বলেছি। আশাকরি সেই বাইপাস সড়কটিও চুয়াডাঙ্গাবাসী পাবে। তিনি খুব জোর দিয়েই বলেন, চুয়াডাঙ্গার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে করুণদশা সেটি থেকে উত্তরণের জন্য একটি আধুনিক মানের মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল স্থাপন করতে চাই। যার মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গাবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত হবে। আমি দেখেছি চুয়াডাঙ্গাতে সামান্যতম জটিল চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। একটু জটিল রোগের চিকিৎসা করাতে গেলে হয় যেতে হয় কুষ্টিয়ায়, না হয় রাজশাহীতে কিংবা ঢাকাতে। এই ভোগান্তির অবসান করতে চাই। আমার কিছু চাওয়ার নেই। আমি চুয়াডাঙ্গাবাসী জন্য বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের জনগণের জন্য কাজ করতে চাই। আমাকে আমি রেখে যেতে চাই আমার কাজের মাধ্যমে। আমার মা আর চার বছর হলো এ পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন। মাকে ছাড়া আমার চুয়াডাঙ্গার এ বাড়ি বড্ডো শূন্য শূন্য লাগে। মা যখন ছিল তখন গ্রামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আমার মায়ের কিছু শুভাকাক্সক্ষী মানুষ আসতো। তাদের কোলাহলে সারাবাড়ি ভরে থাকতো। মা দু-হাত ভরে সাধ্যমত সেই সকল মানুষদেরকে সহযোগিতা করেছেন। আজ আর আমার বাড়িতে সেই সকল মানুষের আনাগোনা চোখে পড়ে না। পবিত্র মাহে রমজানের তাই আমার সেই গর্ভধারিণী মায়ের জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করছি।