প্রতি মিনিটে বোমা হামলা চালাচ্ছে নেতানিয়াহুর বাহিনী : বাদ যাচ্ছে না হাসপাতাল ধর্মীয় উপাসনালয়
মাথাভাঙ্গা মনিটর: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছে ইসরাইল। তিন ধাপের হামলার পর দেশটি গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। ইসরাইলি বাহিনী তিন ধাপের লড়াইয়ের পরিকল্পনাও প্রকাশ করেছে। হামাসের আকস্মিক হামলার পর গত ৭ অক্টোবর থেকে প্রতি মিনিটেই কোথাও না কোথাও বোমা হামলা চালাচ্ছে নেতানিয়াহুর বাহিনী। হাসপাতাল ও ধর্মীয় উপাসনালয় কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না। গতকাল শুক্রবারও একটি গির্জায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত আট জন নিহত হয়েছে। গাজায় গতকালও কোনো ত্রাণ আসেনি। ফলে মানবিক সংকট চরম হয়ে উঠছে। চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে সাতটি হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব জুড়ে থাকা আমেরিকার নাগরিকদের জন্য সহিংস হামলার বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে। গতকাল শুক্রবার উত্তর গাজায় আধা ঘণ্টা সময় দেয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই কার্যক্রমকে মানবতাবিরোধী বলে উল্লেখ করেছে। এভাবে জোর করে বাড়ি ত্যাগ করানোর ঘটনা বিরল। ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, খুব শিগিগরই গাজায় অভিযান চালানো হবে। বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনীর সদস্যদের
এক অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত বলেন, এখন আপনারা গাজাকে খুব দূরে দেখছেন, শিগিগরই আপনারা ভেতর থেকে দেখবেন। গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪ হাজার ছাড়িয়েছে। উত্তর গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর সতর্কবার্তার পর বাসিন্দারা আতঙ্কে আছেন। তারা জানিয়েছেন, ফিরে এসে হয়তো তারা আর তাদের বাড়ি ফিরে পাবেন না। জাহরা শহরের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে এখানকার ২৫টি ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইসরাইল। এই শহরের বাসিন্দারা খুব ভোরে তাদের মোবাইলে ইসরাইলি বাহিনীর সতর্কবার্তা দেখতে পান। ১০ মিনিট পরেই ড্রোন হামলা হয়। ২০ মিনিটের মাথায় এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে কয়েকটি ভবন গুঁড়িয়ে দেয় নেতানিয়াহুর বাহিনী।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, গাজার এক তৃতীয়াংশ তথা ১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি বাড়ি ইসরাইলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৩ হাজারের বেশি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইল এই প্রথম গাজায় তিন ধাপের সামরিক পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, আইডিএফ হামাসের বিরুদ্ধে স্থল ও আকাশপথে তিন ধাপে লড়াই চালাবে। তিনি বলেন, এই লড়াই শেষে গাজায় সাধারণ মানুষের জীবনের দায়িত্ব নেবে ইসরাইল।
বৃহস্পতিবার রাতে গাজা উপত্যকার একটি গির্জায় ইসরাইল বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ঘরহারা মানুষদের অনেকে ওই গির্জায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, সেন্ট পরফিরিয়াস নামের একটি গ্রিক অর্থোডক্স গির্জা প্রাঙ্গণে বিমান হামলায় অনেকে হতাহত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, উপাসনা করার স্থানটির খুব কাছে হামলা হয়েছে। সেখানে গাজার অনেক বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছিলেন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরের নূর শামস শরণার্থীদের সঙ্গে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ছয় জন নিহত হয়েছে। ইসরাইলের বাহিনী বলেছে, তারা একটি সন্ত্রাসী দলকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে। এদিকে ইসরাইলের কাছে হামলা থামানোর আবেদন জানিয়েছে হামাস গোষ্ঠী। ইসরাইল হামলা থামালে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে হামাসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। তবে ইসরাইল কোনো সাড়া দেয়নি।
মিশর এবং গাজা সীমান্তে খাবার, পানি এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় ত্রাণসহায়তা নিয়ে প্রায় ২০০ ট্রাক অপেক্ষা করছে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় মিশরের সঙ্গে একটি চুক্তি সই হয়েছে। যার আওতায় ২০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে দিতে রাজি হয়েছে মিশর। দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোতে বলা হচ্ছে, শুক্রবারের আগ পর্যন্ত মিশর-গাজা সীমান্ত পারাপারটি খুলবে না। সীমান্ত না খোলায় মার্কিন গণমাধ্যমের সংবাদ প্রকাশের সমালোচনা করেছে মিশর। দেশটি জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় রাফাহ ক্রসিংয়ের কাছে রাস্তা-ঘাট ধসে পড়েছে। রাস্তা মেরামত করতে সময় লাগছে। এরই মধ্যে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস রাফাহ ক্রসিংয়ে যান এবং সেখানে ত্রাণ বহর ঢুকতে না দেওয়ার সমালোচনা করেন।
ইসরাইলের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে। একই সঙ্গে ইসরাইলে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়েছে সিনেট। সিনেটে পাশ ঐ প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জরুরি পরিস্থিতিতে ইসরাইলকে নিরাপত্তা, আরো অস্ত্র সরবরাহ এবং কূটনৈতিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা দেয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়াও ফিলিস্তিনের গাজা হামাস ও ইসলামিক জিহাদসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীকে ইরান যেভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করে আসছে এ ব্যপারে নিন্দা জানানো হয়েছে প্রস্তাবে। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার জানান, তিনি শুক্রবার কংগ্রেসের কাছে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ইসরাইলের জন্য বাড়তি অর্থায়নের অনুমোদন চাইবেন। এই অর্থের পরিমাণ হবে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ইসরাইলকে বছরে ৩২০ কোটি ডলার সামরিক সহযোগিতা দিচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হতে যাচ্ছে বাড়তি এই সহযোগিতা।