স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গতকাল আরও ১০ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে পাঁচজনের করোনা পজেটিভ ছিল এবং পাঁচজন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সব মিলে উপসর্গ নিয়ে ২০ জন মারা গেছেন। এরমধ্যে বগুড়ায় তিনজন, দিনাজপুরে একজন, কুমিল্লায় তিনজন, ঝিনাইদহে একজন, মেহেরপুরে দুজন, গোপালগঞ্জে একজন ও বরিশালে চারজন মারা গেছেন। সংশ্লিষ্টদের বাড়িঘরও লকডাউন করেছে প্রশাসন। করোনা সন্দেহে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করাও হচ্ছে। অনেককে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেলে মৃত্যু ১০জনের: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সোমবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন করোনা পজেটিভ। মৃত ব্যক্তিরা হলেন ফজলুল হক (৬০), ইমদাদ হোসেন (৬৫), আবু বক্কর সিদ্দিক (৬৭), আনোয়ার বেগম (৬০), আরাফাত (১২), ডলি গমেজ (৭৫), মো. ফেরদৌস (৩৮), নূর আহম্মেদ শেখ (৬৬), সোলেমান (৭৫) ও হানিফ মিয়া (৬০)। বগুড়ায় করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন এক বৃদ্ধ (৬৬)। তার বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায়। তিনি পেশায় ইটভাটার মালিক। এছাড়া হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সোমবার সন্ধ্যায় মারা গেছেন এক নারী (৫২)। তিনি শাজাহানপুর উপজেলার বাসিন্দা। এদিকে বগুড়ার বেসরকারি টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বেলা ১টায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তিনি মারা যান। মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম এখলাসুর রহমান (৬৩)। তার বাড়ি নাটোরের লালপুর উপজেলার বালিতিতা ইসলামপুর গ্রামে। জ¦র ও শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির তিন ঘণ্টা পর মারা গেলেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জের এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া। মৃত্যুর পর তার করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা নেওয়া হয়। গতকাল বেলা ১২টার দিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সাজেদা খাতুন এসব তথ্য জানিয়েছেন। মুত ব্যক্তিরা হলেন কুমিল্লা নগরীর ঝাঁকুনিপাড়া এলাকার কানু লাল (৭৩), কুমিল্লা নগরীর পূর্ব বাগিচাগাঁও এলাকার মৃত অরিণী বকসীর ছেলে স্বপন (৬৫) এবং কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকার সামছুউদ্দিনের মেয়ে হাসিনা বেগম (৫৭)। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে করোনা উপসর্গে রাকিব হোসেন (৩৪) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি জ্বর, কাশি নিয়ে সোমবার হাসপাতালে ভর্তি হয়। মঙ্গলবার ভোরে সে মারা যায়। রাকিব হোসেন জেলার শৈলকুপা উপজেলার মীনগ্রাম এলাকার খেলাফত জোয়ার্দারের ছেলে।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধাসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে তাদের মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া দুজন হলেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম (৭০) ও জোবাইদা খাতুন (৭২)। গাংনী পশু হাসপাতাল পাড়ার আবদুল গণির স্ত্রী জোবাইদা। আর গাংনী উপজেলার বাওট গ্রামের মৃত মকছেদ আলীর ছেলে আবদুস সালাম।
গোপালগঞ্জে কভিড-১৯ রোগের উপসর্গ নিয়ে আবুল হাসান মুন্সি (৬০) নামের এক সাবেক সেনা সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বিকেলে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। কয়েক দিন থেকে তিনি জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।
বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে আরও চার রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত থেকে গতকাল সকালের মধ্যে তাদেও মৃত্যু হয়। মৃত ব্যক্তিরা হলেন বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার এক বৃদ্ধ (৬২), পটুয়াখালীর গলাচিপার এক বাসিন্দা (৬০), ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার এক বৃদ্ধ (৭২) ও বরিশাল সদরের এক ব্যক্তি (৬৫)। জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে তাদের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) প্রেসিডেন্ট ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন করোনামুক্ত হয়েছেন।