ধান ও চাল সংগ্রহের কর্মসূচিতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সরকার। যেখানে ফেব্রুয়ারির মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ টন, সেখানে এ পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে মাত্র আড়াই লাখ টন। ব্যবধানটা অনেক। ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান কিন্তু শুরু হয়েছিল দুমাস আগে। বাজারে চালের দাম বেশি হওয়ায় মিল মালিকরা সরকারের কাছে চুক্তি করেও চাল দিচ্ছেন না। কেন এই ব্যর্থতা? ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মূল্য যাচাই না করে ওপর থেকে জোর করে ধান ও চালের দর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে সংগ্রহ অভিযান সফল হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
ওদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চাল সংগ্রহ অভিযান নিবিড়ভাবে তদারকি করা হচ্ছে। সরকারের খাদ্য উপদেষ্টা বলছেন, ফেব্রুয়ারি ২৮ তারিখ পর্যন্ত সংগ্রহ অভিযান চলবে, এ সময়ের মধ্যেই টার্গেট অনুযায়ী সংগ্রহ চূড়ান্ত হবে। আমরা এটাও জেনেছি, ইতোমধ্যেই সরকারি ও বেসরকারিভাবে মোট ২২ লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আমাদের কথা হলো, কতো টন চাল আমদানি করা হচ্ছে, সেটা বড় প্রশ্ন নয়; প্রশ্ন হলো, সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান সফল হচ্ছে না কেন? খাদ্য উপদেষ্টা অবশ্য বলেছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই টার্গেট অর্জিত হবে। তার এই আশাবাদ কতোটা বাস্তবে দেখা যাবে, সেজন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আমাদের। সমস্যাটা চিহ্নিত করা দরকার। আসলে বাজারে চালের দাম বেশি হওয়ায় মিল মালিকরা চাল দিতে চাচ্ছেন না। সমন্বয় করা হয়নি বলেই সংগ্রহে এই বিপত্তি। ক্রয় অভিযানে সিদ্ধ চালের দাম প্রতি কেজি ৪৭ টাকা, আতপ চাল ৪৬ টাকা ও ধানের দাম ৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায়। তাহলে বেশি দাম দিয়ে কিনে লোকসান গুনে সরকারকে চাল দিতে যাবেন কে? এখন নাকি অনেক মিল মালিকের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হচ্ছে! এটা কি কোনো সমাধান হতে পারে? আমরা আশা করবো, সরকার মিল মালিকদের সঙ্গে বসে বিষয়টার একটা সুরাহা করবে। ধান-চালের দাম নির্ধারণের আগে কৃষকের উৎপাদন খরচও মাথায় রাখা দরকার। ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে খাদ্য খাতে একটা সংকট তৈরি হবে বৈকি।