গত কয়েক বছরের মতো এ বছরও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই নিয়ে নানারকম সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। নতুন শিক্ষাবর্ষের ১ মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। অথচ এখনো অর্ধেকের মতো বই ছাপানো বাকি রয়েছে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী পেয়েছে আংশিক বই। এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ কোটির বেশি বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানো হচ্ছে। ১৭ কোটির বেশি বই ছাপানো ও বাঁধাই করার কাজ বাকি রয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ইতোমধ্যে চাহিদার ৫৫ শতাংশ বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছেছে; যার বেশির ভাগ পেয়েছে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা। এদিকে বই না পাওয়ায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
মুদ্রণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাগজ ও বাঁধাই শ্রমিক সংকটের কারণে সব বইয়ের কাজ শেষ হতে মার্চ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। বই ছাপানোর কাগজের সংকট দূর করতে বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এ কাগজ প্রেসে পৌঁছার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, নতুন শিক্ষাবর্ষের বই ছাপানোর প্রেক্ষাপট এবার একটু ভিন্ন। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে তিন মাস দেরিতে বই ছাপানোর কাজ শুরু হয়েছে। ছাপানোর কাজ বিলম্বের অন্যান্য কারণ কারিকুলাম পরিবর্তন, বইয়ের সংশোধন ও পরিমার্জন। নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকেই পাঠ্যপুস্তকের অনলাইন ভার্সন সংগ্রহ করা যাচ্ছে। তবে হতদরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা যে এ সুবিধা নিতে পারছে না, তা বলাই বাহুল্য। কাজেই যত দ্রুত সম্ভব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।
নতুন শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষাক্রম বাদ দিয়ে পুরোনো শিক্ষাক্রমে ফিরছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এবার পাঠ্যবইয়েও অনেক প্রত্যাশিত পরিবর্তন এসেছে; অনেক বিষয়বস্তু সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তি হিসাবে গড়ে তুলতে মানসম্মত বই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার্থীরা যাতে উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধের চর্চায় আগ্রহী হয়, সে বিষয়েও তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এসব বিষয়ে সমাজ পিছিয়ে থাকলে শিক্ষার্থীরা কতটা এগিয়ে যেতে পারবে, এটাও এক প্রশ্ন। অতীতে ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। কাজেই মানসম্মত ও ত্রুটিমুক্ত বই প্রকাশে কর্তৃপক্ষকে মনোযোগী হতে হবে।