শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করতে হবে

সম্পাদকীয়

সারাদেশের লাখ লাখ নিম্নবিত্ত পরিবার আর্থিক দূরবস্থার কারণে সংকটে পড়েছেন। টান পড়েছে সংসারের খরচে। আয় না বাড়লেও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ব্যয়। করোনাকালেই বিনোদন, পোশাক ও প্রসাধনীতে ব্যয় কমিয়েছে নিম্ন-মধ্যবিত্তরা। এবার হাত দিতে হচ্ছে খাবারে। সেটিতেও তাল মেলাতে না পারলে সন্তানের পড়াশুনা বন্ধ করে পাঠানো হচ্ছে কাজে। করোনার আর্থিক প্রভাব এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। এরই মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় তাদের ক্ষেত্রে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে। ফলে একদিকে যেমন বাড়ছে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী। অন্যদিকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীই পড়াশুনা শেষ না করেই প্রবেশ করছে কর্মক্ষেত্রে।

করোনার সময়ে দেশের অনেক কিন্ডারগার্টেন এবং নন-এমপিও স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের একটি অংশ স্থায়ীভাবে ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশে বাংলা মাধ্যমের কিন্ডারগার্টেন আছে ৪০ হাজার। আর্থিক দূরবস্থার কারণে ১০ হাজার স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের ২০ ভাগ শিক্ষার্থী এরই মধ্যে ঝরে পড়েছে। প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীরই অভিভাবকের একই কথা, তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, অনুরোধ করছেন বেতন ও ভর্তি ফি কমানোর জন্য। এখনো ৬০ ভাগ শিক্ষার্থীই তাদের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনও পরিশোধ করতে পারেনি। ইউনেস্কো জানিয়েছে, মহামারি চলাকালে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে। ইউনিসেফ ও বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় গ্লোবাল এডুকেশন এভিডেন্স অ্যাডভাইজরি প্যানেলের (জিইইএপি) নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশ এবং নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থানে থাকা শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উচ্চ-আয়ের দেশগুলোর তুলনায় স্কুলগুলো গড়ে বেশি দিন বন্ধ ছিল, স্কুল বন্ধের সময় শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ বলতে গেলে পায়নি বা পেলেও খুব কম পেয়েছে এবং সংকটের চ্যালেঞ্জগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে অভিযোজন প্রক্রিয়াও ছিল কম। দূরশিক্ষণ প্রচেষ্টার কার্যকারিতা যে তুলনামূলকভাবে কম সে বিষয়ে ক্রমেই তথ্য-প্রমাণ মিলছে। তথ্য অনুযায়ী, স্কুল বন্ধ থাকার কারণে শিশুদের পড়ালেখা ও সামগ্রিক কল্যাণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে- যার পরিণাম হবে ভয়াবহ। আর ছাত্রীদের বিয়ের হারও ছিল উল্লেখযোগ্য। কেবল কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ঝরে পড়েছে ১ হাজার ৯৪৬ জন শিক্ষার্থী। যাদের বেশির ভাগই শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়েছে। এমন চিত্র প্রায় সারাদেশেই।

আর্থিক সংকটের কারণে যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না, তাদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে যতটা সাশ্রয়ী করা যায়, সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। যারা বেতনের কারণে স্কুলে যেতে পারছে না তাদের বেতন না কিছুটা হলেও রহিত করা যায় কিনা সে ব্যাপারে সরকারকে ভেবে দেখতে হবে। মনে রাখতে হবে, করোনা পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের ওপর যে মানসিক ও আর্থিক চাপ পড়েছে সেটি তাদের ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারি প্রভাব ফেলবে। কেউ কেউ হয়তো অর্ধশিক্ষিত হয়ে কর্ম ক্ষেত্রে প্রবেশ করছে, অনেকেই আবার নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

Comments (0)
Add Comment