রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয় নিয়মিত অডিট প্রকাশ করা দরকার

সম্প্রতি রাজনৈতিক দল বা ছাত্র সংগঠনের ব্যয়ভার নির্বাহের টাকা কোথা থেকে আসে, এ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। অর্থ কোন্ উৎস থেকে আসছে, এ প্রশ্নের উত্তরে কেউ কেউ বলেছেন, অর্থ প্রদানকারীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই তা বলা যাচ্ছে না। ওদিকে প্রবীণ রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেন বলেছেন, শিল্পপতি-ব্যবসায়ী বা ধনাঢ্য ব্যক্তিরা দলগুলোকে এমনি এমনি টাকা দেন না। অর্থাৎ তিনি বলতে চান, রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থ প্রদানের দূরবর্তী লক্ষ্য থাকে শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে, ছাত্রশিবিরের টাকার উৎস কী। শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল অবশ্য বলেছেন, টাকা কোথা থেকে আসে, ছাত্রদল কি তা প্রকাশ করবে? নবগঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টির অর্থের উৎস সম্পর্কেও জানতে চেয়েছে ছাত্রদল।
রাজনৈতিক দল বা ছাত্র সংগঠনের আয়ের উৎস সম্পর্কে যে বিতর্ক উঠেছে, এটাকে আমরা ইতিবাচক হিসাবে দেখতে চাই। এই বিতর্কের অবসান হওয়া উচিত প্রতিটি সংগঠনের আয়ের উৎস প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে। বস্তুত পাশ্চাত্যের দেশগুলোয় রাজনৈতিক দলগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাবে স্বচ্ছতা থাকে এবং দেশবাসী জানতে পারে দলগুলো কোন্ আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত হয়। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো রাজনৈতিক দলকে অর্থ ফান্ড করেছে, তার নাম ও টাকার অঙ্ক প্রকাশ করা হয়। শুধু তাই নয়, প্রাপ্ত টাকার নিয়মিত অ্যাকাউন্টস ও অডিটও হয়ে থাকে এবং তা জনগণ জানতে পারে। আমাদের দেশে এই নিয়ম চালু নেই বললেই চলে। শুধু নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনকে একটা দায়সারা গোছের হিসাব দেওয়া হয়। জনমনে এমন ধারণা বদ্ধমূল রয়েছে যে, নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত হিসাবে গড়মিল থাকে। রাজনৈতিক দলগুলো দলের উচ্চপর্যায় থেকে শুরু করে দলের বর্ধিত সভায় তৃণমূল পর্যায় থেকে আগত নেতাকর্মীদেরও আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রদর্শন করে না। দলের শীর্ষে অবস্থানকারী মূল নেতা এবং বড়জোর দু-চারজন ঘনিষ্ঠজনই এই হিসাব জানেন। এই প্রথার অবসান হওয়া উচিত। আমাদের কথা হলো, অভ্যন্তরীণ আর্থিক ব্যবস্থাপনায় যে দল স্বচ্ছতার পরিচয় দিতে পারে না, সেই দল রাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থাপনা সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালনা করবে, এটা বিশ্বাস করা কষ্টকর। তাই আমরা বলব, রাজনৈতিক দল অথবা ছাত্র সংগঠন, প্রতিটির আয়-ব্যয়ের হিসাব স্বচ্ছ থাকতে হবে এবং নিয়মিতভাবে তা জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে।