রোগী রোগ থেকে নিরাময়ের আশায় চিকিৎসকের নিকট গেলেন। চিকিৎসক অসুস্থতার বর্ণনা শুনলেন। লক্ষণ বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্যগত কিছু পরীক্ষা দিলেন। ফি নিলেন। পরীক্ষাগার থেকে স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা করিয়ে ফলাফল নিয়ে যখন চিকিৎসকের দেখাতে গেলেন তখনও কিছু চিকিৎসক ফি আদায় করেন। দফায় দফায় পরামর্শ ফি নেয়া কতোটা যুক্তিযুক্ত? চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই দফায় দফায় অর্থ নেয়ার প্রচলন বাড়ছে। এতে রোগী সাধারণের মধ্যে পুঞ্জীভূত হচ্ছে ক্ষোভ। যদিও এ ক্ষোভ খুব একটা প্রকাশ পায় না। কিছু ক্ষেত্রে কৃঞ্চিত ফুস করার দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসহায়ত্বের দীর্ঘশ^াস হয়ে তা উবে যায়। এটাই কি বাস্তবতা? নাকি বাধ্য হয়েই গাসওয়া করে নেয়া?
অসুস্থতার লক্ষণ দেখেই এক সময় চিকিৎসকেরা চিকিৎসা দিতেন। কালক্রমে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান এগিয়েছে অনেক দূর। আন্দাজ বা অনুমান নির্ভরতা হ্রাস পেয়েছে। চিকিৎসক রোগের বর্ণনা- লক্ষণ শুনেই শুধু নয়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে অনেকটা নিশ্চিত হয়েই চিকিৎসা দেন। তা হলে কি কি পরীক্ষা করাতে হবে তা লিখতে এবং পরীক্ষার রিপোর্ট দেখতে দফায় দফায় ফি নেয়া হবে কেন? স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা করানোর পরামর্শের সাথে কিছু পরীক্ষাগারের অলিখিত চুক্তি নিয়ে সমাজে অনেক চুটকি প্রচলন রয়েছে। বিশেষ হারে হিস্যা দেয়া- নেয়ার মধ্যে সুনাম দুর্নামেরও কিছু বিষয় লুকিয়ে থাকে বলে জনশ্রুতি আছে। এসব থাক বা না থাক, সুচিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের জ্ঞানভা-ার সমৃদ্ধতা তথা বিজ্ঞ বিচক্ষণতা থাকা খুবই জরুরি। কোন চিকিৎসক রোগীর স্বাস্থ্যগত এতো বেশি পরীক্ষার জন্য পরামর্শ দেন যে, রোগীর নাভিশ^াস উঠতে বাধ্য। তার ওপর যদি ওই রিপোর্ট দেখাতে গিয়ে অর্থ দিতে হয় তখন রোগের যন্ত্রণা ভুলে হৃদয়ে কষ্টের রক্তক্ষরণ বেড়ে যাওয়াই কি স্বাভাবিক নয়? দফায় দফায় ফি আদায়ের পক্ষাবলম্বিরা বলতেই পারেন, ‘রোগীর অসুস্থতার বর্ণনা শুনলেই তো স্বাস্থ্যগত কী কী পরীক্ষা করাতে হবে তা চিকিৎসক ছাড়া বলতে পারবে না। এজন্যও ফি নেয়া হয়, তেমনই পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর রোগীর সুস্থতার জন্য ওষুধ পথ্য লেখা তথা চিকিৎসার পরামর্শ দেয়ার জন্য দ্বিতীয় দফায় ফি আদায় করা হয়।’ পক্ষান্তরে এ যুক্তিকে হাস্যকর বলে দাবি করা হলেও ওইসব চিকিৎসকের নিকট রোগী কেন যান? এ প্রশ্নের জবাবের বদলে মলিন বদনগুলো সমাজের বিবেকবানদের দিকেই তাকিয়ে থাকে। এ হিসেবে সচেতন মহলেরই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
একটু সচেতন হলে বা সতর্কতা অবলম্বন করলে অনেক রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। তবে এমন কিছু রোগ ব্যাধী রয়েছে জীবনসংগ্রামে কখন যে শরীরে বাসা বেধে বসে টের পাওয়াই দুষ্কর হয়। বিশেষ করে আমাদের দেশে, যেখানে নিয়মিত স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা করানোর প্রবণতা গড়ে ওঠেনি সেখানে রোগ গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছুনোর পর চিকিৎসকের নিকট যাওয়ায় রেওয়াজ। এরপর সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে প্রত্যাশিত চিকিৎসা নিতে যাওয়া মানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুগান্তির শিকার হওয়া। ফলে বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রের দিকেই ঝুকতে হয় রোগী সাধারণকে। এই সুযোগটা কাজে লাগান অর্থলিপ্সুরা। পরিত্রাণে যেমন দরকার সর্বসাধারণের সচেতনতা, তেমনই দরকার সরকারি হাসপাতালগুলোতে মানসম্পন্ন সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা।