জুলাই মাস শেষ হয়ে আগস্ট মাস শুরু হলেও বর্ষার এই মরসুমে নেই কাক্সিক্ষত বৃষ্টি। প্রতিদিনের তাপমাত্রা ভয়াল আকার ধারণ করেছে দেশজুড়ে। মরসুমি ফসল ও সার্বিক কৃষি কাজে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে আমন ধান আবাদ করা হয়। আষাঢ়ের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত আমন ধানের বীজ জমিতে রোপণ করা হয়। তবে, চলতি আমন মরসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় তারা চাষাবাদ নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। অনাবৃষ্টির কারণে পানি সংকট দেখা দিয়েছে কৃষি জমিতে। কেউ কেউ পাওয়ার পাম্প দিয়ে পানি সেচ করে বীজতলা তৈরি করছেন। আবার পানি সংকটে কারো কারো রোপা বীজ মরে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও রোদে জমি ফেটে চৌচির। পাটের বেশ ভাল ফলন হলেও পানির অভাবে কৃষক পাট জাগ দিতে পারছে না। পাট কেটে বাড়িতে ফেলে রাখায় তা নষ্ট হতে শুরু করেছে অনেক জায়গায়। হাওরে হঠাৎ বন্যা ও বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের বন্যার নেতিবাচক প্রভাব এ বছরের ফসল উৎপাদনে বেশ ভালভাবেই পড়তে শুরু করেছে। এরমধ্যে অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে বড় ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে আমাদের শঙ্কা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বদলে গেছে চিরায়ত ঋতুর চিত্র, বদলে গেছে প্রকৃতি। কোনো ঋতুর সঙ্গেই যেন আজ প্রকৃতির মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিজেদের প্রয়োজনে মানুষ গাছ কেটে ফেলে বনভূমি উজাড় করছে, পাহাড় নিধন করছে সেই সঙ্গে বাড়ছে কার্বন ডাই-অক্সাইড। মানুষ শক্তি উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ায়, ফলে বায়ুম-লে কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন, মিথেন সহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক গ্যাস বৃদ্ধি পায়। ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই আজ খরা, অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, অসময়ে বন্যা, উজানে পানির ঢল এসব প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন, গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের প্রভাবে ২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বে তাপমাত্রা অনেক গুণ বৃদ্ধি পাবে এবং উষ্ণতাপ্রবণ এলাকা বেড়ে যাবে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা দেখলেও তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকা-আফ্রিকায় দাবানল তার জলন্ত প্রমাণ। জলবায়ু পরিবর্তনের এ নেতিবাচক পরিস্থিতির সাথে সম্প্রতি যোগ হয়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জীবনযাত্রায় ব্যয় বৃদ্ধি, মূল্যম্ফীতি, লোডশেডিং, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসৃষ্ট জ্বালানি সংকটসহ নানা সমস্যা। যা পুরোবিশ্বের মতো বাংলাদেশের মানুষকেও ভোগাচ্ছে। এই অবস্থা পরিবর্তনে প্রকৃতির প্রতি যত্নবান হতে হবে, প্রচুর পরিমানে গাছ লাগানোর পাশাপাশি কমাতে হবে কার্বন নিঃসরণের হার। তাহলেই হয়তো সামনের দিনগুলিতে স্বস্তি ফিরতে পারে।