ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন লুটপাট হয়েছে; দেশ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচারও হয়েছে। কেবল অর্থনীতিই নয়, বিগত সরকারের আমলে ধ্বংস করা হয়েছে এদেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতিসহ প্রতিটি খাত। ওই আমলে বিভিন্ন খাতে কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা চিহ্নিত করে সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে, ব্যাংক খাতের মূল সূচকগুলো ‘উদ্বেগজনক’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এতে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেই ‘ব্যাংক খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে’। কারণ, খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংক খাতের সম্পদের মান নিম্নমুখী হয়েছে; ঋণ ও আমানতের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে; ব্যাংক ব্যবস্থায় তারল্য কমে যাচ্ছে।
এছাড়া মূলধন কমে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর আয়ও কমে যাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে ব্যাংক খাতের এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ব্যাংক খাত সংস্কারে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। টাস্কফোর্সের কাজ চলমান রয়েছে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ইতোমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে; ব্যাংক খাতের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। ব্যাংক খাতের সার্বিক অবস্থা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এখনো অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। বস্তুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় লুটপাটের ক্ষত সেভাবে প্রকাশ্যে আসেনি। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এখন ক্ষতগুলো প্রকাশিত হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেই ব্যাংক খাত উল্লেখযোগ্যভাবে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। এ খাতের মূল সূচকগুলো উদ্বেগজনক পর্যায়ে নেমে গেছে-খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি শতকরা হারও বেড়েছে। প্রভিশন কমেছে।
এদিকে খেলাপি ঋণ মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধির কারণে ব্যাংকের সম্পদের গুণগত মান নিম্নমুখী হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানের করেছে, যা আগামী এপ্রিল থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। এটি কার্যকর হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে। চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে ঋণ ও আমানত উভয়ের প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। আমানতের সুদ বা মুনাফার হার বৃদ্ধির পরও ব্যাংকগুলোয় আমানতের প্রবৃদ্ধি আগের চেয়ে বাড়েনি, কোনো কোনো ব্যাংকে কমেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এ খাতের সংকট উত্তরণ এবং দীর্ঘমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে ব্যাপক সংস্কার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ব্যাংক খাত সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্সের দিকনির্দেশনা পাওয়ার পর তা বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখা দরকার। অনিয়ম রোধে ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। আগামীতে রাজনৈতিক সরকার গঠনের পরও ব্যাংক কর্মকর্তারা যাতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেজন্য যা যা করা দরকার, তা করতে হবে।