বৈদেশিক কর্মসংস্থান : দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে

সম্পাদকীয়

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ অন্বেষণ এবং সেখানে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার ইতোমধ্যে কয়েকটি নতুন দেশে কর্মী পাঠানো শুরু করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যথাযথ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর মাধ্যমে আমাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা অর্জনের বড় সুযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান অনুযায়ী বহির্বিশ্বে নতুন শ্রমবাজার খোঁজার পাশাপাশি বিদ্যমান শ্রমবাজারগুলোয় নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করা গেলে বিশ্বমন্দাকালীন সংকট উত্তরণে তা যেমন সহায়ক হবে, তেমনি আমাদের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে। পরিতাপের বিষয় হলো, এক্ষেত্রে আমরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছি। ফলে অনেকেই অবৈধ উপায়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টাকালে দালাল ও প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন; অনেকে মারাও যাচ্ছেন। উদ্বেগজনক হলো, দালাল ও প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে কেবল বিদেশ গমণেচ্ছু ব্যক্তি ও তার পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, দেশও অপরিমেয় ক্ষতির মুখে পড়ছে।

ইতঃপূর্বে দালাল চক্রের অসততা সম্পর্কে বিদেশ গমণেচ্ছুদের বিশেষভাবে সতর্ক করে বিদেশে দক্ষ কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা এবং ‘ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল’কে আরও কার্যকর করার তাগিদ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বিষয়টি মাথায় রেখে এ ব্যাপারে বিদেশ গমণেচ্ছুসহ সবার উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। বস্তুত প্রতারণার কারণে বহির্বিশ্বের সম্ভাবনাময় অনেক শ্রমবাজার এদেশীয় শ্রমিকদের জন্য নিষিদ্ধ জোনে পরিণত হয়েছে। এ অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে কূটনৈতিক তৎপরতাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। প্রধানমন্ত্রী বহির্বিশ্বে নতুন শ্রমবাজার খোঁজার পাশাপাশি বৈধ মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সুখবর হলো, ডলারের সংকটময় এ মুহূর্তে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রবাহ ছয় মাস পর গত মার্চে পুনরায় ২০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছে।

আমাদের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বলা যায়, প্রবাসীদের আয়েই পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু ইকোনমিক জোন, পায়রা বন্দর, কর্ণফুলী টানেল ইত্যাদি বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে যে জনশক্তি রফতানি হয়, তাদের অধিকাংশই আধা দক্ষ বা অদক্ষ পর্যায়ের। অদক্ষ হওয়ায় এসব শ্রমিকের মজুরি হয় খুবই কম। ফলে জমিজমা বিক্রি বা ঋণ করে বিদেশে পাড়ি দেয়ার পর কঠোর পরিশ্রম করেও খরচের টাকা উঠানোই তাদের পক্ষে দুরূহ হয়ে পড়ে। এ বাস্তবতা সামনে রেখে দেশে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেয়া উচিত। আশার কথা, আন্তর্জাতিক পরিম-লে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির ব্যাপক চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার এরই মধ্যে দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনসহ নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিদেশ গমণেচ্ছু শ্রমিকদের জাপানি, কোরীয়, আরবি, ইংরেজি, ক্যান্টনিজ ইত্যাদি ভাষায় প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে নারী কর্মীদের সুরক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থারও সংস্কার করা হয়েছে। দালাল ও প্রতারকদের খপ্পর থেকে বিদেশ গমণেচ্ছুদের সুরক্ষার পাশাপাশি উপযুক্ত ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তাদের গড়ে তোলা হবে এবং বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ অন্বেষণের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।

Comments (0)
Add Comment