পিলখানা হত্যাকান্ডের পুনঃতদন্ত হোক

২০০৯ সালে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে সংঘটিত পিলখানা হত্যাকান্ডের বীভৎস দৃশ্যাবলীর কথা আজও ভুলতে পারেনি এদেশের মানুষ। বিদ্রোহের নামে কারা এবং কেন বিডিআর প্রধানসহ সেনাবাহিনী থেকে আসা চৌকশ ৫৭ কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো, তা আজও রহস্য হয়েই রয়েছে। অবশ্য এ হত্যাকান্ডের তদন্তকে প্রভাবিত করার বিষয়ে বিগত সরকারের দায় রয়েছে। আশার কথা, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাগ্রহণের পর পিলখানা হত্যাকান্ডের তদন্ত গতি পেয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দীর্ঘ ১৬ বছর পর ১৭৯ জওয়ান মুক্তি পেয়েছেন। মুক্ত হওয়া প্রিয়জনদের পেয়ে তাদের স্বজনরা আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। আবেগ ধরে রাখতে পারেননি যারা সাজাভোগ শেষ করেও কারারুদ্ধ রয়েছিলেন, তারাও। তিন কারাগারের গেটের বাইরে ফুল, মিষ্টি আর চোখের পানিতে স্বজনরা যখন তাদের বরণ করে নেন, স্বাভাবিকভাবেই সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এ বিদ্রোহের বিচার বিজিবির আদালতে হয়। আর হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে হয় দুটি মামলা। তবে হত্যা মামলায় খালাস বা সাজা ভোগ শেষ হলেও বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে যায় ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের। গত ২০ জানুয়ারি হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত এবং যাদের বিরুদ্ধে কোনো আপিল হয়নি-এমন দুইশ আসামিকে জামিন দেন আদালত। সেই জামিননামা কারাগারে পৌঁছুনোর পর এদিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ ও ২ এবং হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে বন্দিরা মুক্তি পান।
বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদলেও বিগত সরকারের তাতে ভ্রুক্ষেপ হয়নি। এটা সত্যি, যে মূল্যবান সময় তারা বন্দিজীবনে হারিয়েছেন, তা আর ফিরে আসবে না। তবে দেরিতে হলেও আজ যারা মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারছেন, সমাজের কল্যাণমূলক কর্মকা-ে তারা অবদান রাখবেন, এ প্রত্যাশা আমাদের থাকবে। একইসঙ্গে বিগত সরকার কেন তাদের মুক্তির বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়নি, এ প্রশ্নের উত্তরও পেতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, যারা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সদা নিয়োজিত, সেই বাহিনীর মনোবল ও শক্তিরক্ষার স্বার্থেই সেদিনের কলঙ্কজনক ঘটনার রহস্য উন্মোচন জরুরি। কারা এ হত্যাযজ্ঞের নির্দেশ দিয়েছে, কাদের প্ররোচনায় বিডিআর সদস্যরা এ হত্যাকা-ে জড়িত হয়েছে, পর্দার আড়াল থেকে এ ঘটনার ইন্ধনদাতা কারা, তারা কি এদেশেরই সন্তান, নাকি কোনো বিদেশি শক্তি এতে জড়িত-এসব প্রশ্নের জবাব জাতীয় স্বার্থেই প্রয়োজন। এ নৃশংস ঘটনার পর যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল এবং যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল, তা নিয়ে অনেক ‘যদি’ ও ‘কিন্তু’ রয়েছে। তাই এ ঘটনার পুনঃতদন্তও প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা।
এ হত্যাকা-ের নেপথ্যে কারা আছেন, তা এদেশের মানুষের জানার অধিকার আছে। ইতিহাসের এ নির্মম ঘটনার প্রকৃত সত্যের অনুসন্ধান বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্যও প্রয়োজন। এ ঘটনার তদন্তে যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তাদের অনেকের ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে নানা মহলে। অন্তর্বর্তী সরকার পিলখানা হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে, এটাই প্রত্যাশা।