নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ জরুরি

সম্পাদকীয়

সারা দেশে হঠাৎ বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হওয়ায় রেকর্ড গরমে চরম দুর্ভোগ পোয়াচ্ছে মানুষ। এর আগে জ্বালানি সঙ্কটে ঢাকার বাইরে সারা দেশের বিদ্যুৎগ্রাহকরা লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগ পোয়ালেও গত শুক্র ও শনিবার দিনে-রাতে উপর্যুপরি তীব্র লোডশেডিংয়ে নাজেহাল হয়ে পড়েছে সারাদেশের মানুষ। গত শনিবার ভোরে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছিলো এক হাজার ৮২৫ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, গ্যাস সরবরাহ কম হওয়ায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে প্রায় এক হাজার ৭০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত দেশে মোট বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো ১২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ১০ হাজার ৭৪৯ মেগাওয়াট। এ সময় এক হাজার ৯৫৯ মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং হয়। আর বিকেলে ১৪ হাজার মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন করা সম্ভব হয় মাত্র চার হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবসহ কিছু কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে সারা দেশে। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবেই শনিবার সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। রোবাবর সারা দেশে ১৩ হাজার মেগাওয়াটের মতো চাহিদা ছিলো। সব কেন্দ্র মিলিয়ে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার মেগাওয়াট। এ কারণেই রাজধানীতেও ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। বিদ্যুৎ একটি অপরিহার্য চাহিদা। এটি মৌলিক চাহিদার চেয়ে কোনোভাবেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। গরমে ফ্যান বা এসি চালিয়ে শরীরের স্বস্তি পাওয়া ও আলো জ্বালিয়ে নির্বিঘেœ কাজকর্ম করতে পারার জন্যই কেবল বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় এমন নয়; বিদ্যুতের রয়েছে হাজারো ব্যবহার। কল-কারখানা থেকে শুরু করে কৃষিকাজ ও ব্যবসায়-বাণিজ্যের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ জরুরি। বর্তমানে কোটি কোটি মানুষ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের সাথে জড়িত যারা বিদ্যুৎ না পেলে নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে চাহিদা পূরণের মতো অবস্থায় নেই। এখানে বিদ্যুৎহীন প্রতিটি মুহূর্ত আর্থিক ক্ষতির কারণ। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বিপুল সংখ্যক মানুষ কম্পিউটারে এমনকি স্মার্ট মোবাইলফোনে ঘরে বসে নানা ধরনের কাজ করে অর্থ উপার্জন করেন। আউটসোর্সিংয়ের এসব কর্মকা- শুধু দেশে নয়; সারা বিশ্বের সাথে চলমান। বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘিœত হলে এদের অনেকের পক্ষেই সময়মতো কাজ সম্পন্ন করে গ্রাহককে বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব হয় না। ফলে ব্যক্তিগতভাবে সেই উদ্যোগী মানুষটি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এরকম হাজার হাজার মানুষের প্রতিদিনের ক্ষতি যোগ করা হলে সেটি বিরাট অঙ্কের ক্ষতি।  বিদ্যুতের এই দুঃসহ লোডশেডিংয়ের জন্য ঘূর্ণিঝড় মোখাকে বলির পঁঠা বানানো হয়েছে। বলা হচ্ছে- কক্সবাজারের মহেশখালীর দু’টি াভাসমান এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখায় সারা দেশে লোডশেডিং বেড়েছে। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব ও এর পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে না ওঠা পর্যন্ত ১০টির বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ থাকবে। একই সাথে তিতাস গ্যাসের আওতাধীন এলাকাতেও গ্যাসের চাপ কম থাকবে। পিডিবির বক্তব্যে এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের বিষয়টি জানানো হলেও ‘আরো কিছু কারণ’ও রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এই আরো কিছু কারণই মূল কারণ কি না, সেই সংশয় জাগা অস্বাভাবিক নয়। কারণ, জ্বালানি খাতের নাজুক অবস্থা সবারই জানা। কখনো কয়লা কেনার টাকা না থাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকছে, কখনো বন্ধ থাকছে যান্ত্রিক ত্রুটি সারাতে না পারায়। ভারত থেকে আমদানিও নিরবচ্ছিন্ন নয়। কিন্তু ‘লোডশেডিংকে জাদুঘরে পাঠানোর’ অঙ্গীকার করে বিদ্যুৎ খাতে নিয়মনীতি জলাঞ্জলি দিয়ে জনগণের লাখো কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এর পরও লোডশেডিংয়ে দুর্ভোগ পোয়াতে হবে এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য কি?

Comments (0)
Add Comment