আমাদের সামাজিক জীবনে আত্মহত্যা এখন রীতিমতো আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্মীয়ভাবে আত্মহত্যাকে নিরুৎসাহিত করা হলেও সে পথে ধাবিত হওয়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে মানুষের। বিবিএসের জরিপ বলছে, বাংলাদেশে বছরে আত্মহত্যা করছে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ। গড়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে ৩৫জন। তবে করোনা মহামারির প্রথম বছরে এ সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। আত্মহত্যা নিজেই যেন মহামারি হয়ে উঠেছে।
কী কী কারণে মানুষ আত্মহত্যা করছে, সেসব আমাদের সবারই জানা। আত্মহননের পথ থেকে মানুষকে ফেরাতে করণীয় কী, তাও আমরা জানি। সংবাদ মাধ্যমে মনোরোগ চিকিৎসকদের পরামর্শ, সমাজের সচেতন মানুষের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা প্রচারণা সবই আমাদের সবার চোখে পড়ে। সেখানে একটি কথা সবাই বলে থাকেন, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মানুষকে সময় দিন। তার সঙ্গে কথা বলুন। নিয়মিত তার খোঁজখবর নিন। এমন কাজই ১৪ বছর ধরে করে যাচ্ছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার শ্রীফলতলা গ্রামের আলেয়া খাতুন। যার প্রচেষ্টায় এখন পর্যন্ত ৩০০ মানুষ আত্মহননের পথ থেকে ফিরে এসেছেন। একই সময়ে ১০টি গ্রামের ৬ হাজার মানুষকে আত্মহত্যার কুফল সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন।
অথচ ৩০ বছর আগে বাল্যবিয়ের শিকার হওয়া আলেয়া খাতুন শ্বশুরবাড়িতে বঞ্চনা-গঞ্জনার শিকার হয়ে কয়েকবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। প্রতিবারই তিনি ব্যর্থ হন। শেষবার আত্মহত্যা করতে গেলে মাহফুজা বেগম নামের এক এনজিও কর্মীর সঙ্গে তার দেখা হয়।
তার স্পর্শে তিনি জীবনের পথে ফেরত আসেন। সেই মাহফুজা বেগমের মাধ্যমেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘শোভা’ থেকে আলেয়া প্রশিক্ষণ পান আত্মহননের পথ থেকে মানুষকে ফেরানোর। এরপর তিনি গ্রাম থেকে গ্রামে, বাড়ি থেকে বাড়িতে, উঠোন থেকে উঠোনে ছুটে বেড়ান। পারিবারিক গঞ্জনা বা দাম্পত্য কলহের শিকার নারীরা যখন আত্মহত্যাকেই সমাধানের পথ ভাবেন, তখন আলেয়া তাদের পাশে দাঁড়ান। তার প্রচেষ্টায় ঝিনাইদহের পূর্বাঞ্চলে আত্মহত্যা কমে এসেছে। হাটগোপালপুরের গ্রামের রাজিয়া সুলতানা, লৌহজং গ্রামের রাবেয়া খাতুনের মতো অনেকেই বলছেন, আলেয়ার জন্য তারা ভালোভাবে বাঁচতে শিখেছেন। এখন তারা আত্মহত্যার কথা ঘুণাক্ষরেও ভাবেন না।
যৌন হয়রানি, নারী নিপীড়ন, বাল্যবিয়ে, যৌতুকের বিরুদ্ধেও মানুষকে সচেতন করে তোলেন তিনি। দেশের প্রতিটি এলাকায় যদি একজন আলেয়া খাতুন উঠে আসেন, তবে বদলে যাবে অনেক কিছুই। তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।