চৈত্র মাসে এমন উত্তাপ মোটে অস্বাভাবিক নয়

সম্পাদকীয়

এ মুহূর্তে দেশে পরিবেশগত উত্তাপ প্রায় অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। চুয়াডাঙ্গাসহ পাঁচটি বিভাগের ৩৯টি জেলাতে চলছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। অর্থাৎ কোথাও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ওঠেনি। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি হলে কেবল তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা যেতে পারে। তারপরও বর্তমান তাপদাহ অনেকের কাছে তীব্র মনে হচ্ছে। কারণ, কোথাও শীতলতার স্পর্শ নেই। বৃষ্টি না হওয়ায় তাপ কমার পরিবর্তে আরো বাড়ছে। আবহাওয়া দফতরের হিসেবে আগামী ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। ফলে তাপপ্রবাহ কমারও সম্ভাবনা নেই।

চৈত্র মাসে এমন উত্তাপ মোটে অস্বাভাবিক নয়। ছেলেবেলা থেকে আমরা গ্রীষ্মের তাপদাহের রূপ পেয়েছি ছড়ায়, কবিতায়-‘রোদ যেন নয়, শুধু গনগনে ফুলকি/আগুনের ঘোড়া যেন ছুটে চলে দুলকি।’ সেই আগুনের ঘোড়ার তেজ দিন দিন আরও বাড়ছে। কারণ, সারা দেশে নদ-নদী, বিলঝিল, পুকুর-দীঘি বা অন্য জলাশয় শুকিয়ে গেছে অথবা ভরাট করে ফেলা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি রেকর্ড করা হলেও ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সমান মনে হয়।

এ গরমে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। তবে সব শ্রেণির মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। গরমের যেসব স্বাস্থ্যগত সমস্যা সেগুলোও দেখা দিতে শুরু করেছে। মানুষের শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিচ্ছে, ডায়রিয়ার মতো রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। হাসপাতালে রোগী বাড়ছে। এ গরমে পানিশূন্যতা কাটাতে রাস্তার পাশের শরবত, আখের রস ইত্যাদি যারা খান তাদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ সময় সবাইকে বেশি বেশি স্যালাইন বা লবণপানি খাবার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এ ছাড়া তরল খাবার গ্রহণের কথা বলেন তারা। গরমে বয়স্কদের হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ বিষয়েও সতর্ক থাকা উচিত।

যখন প্রচুর গাছপালা ও জলাশয় ছিলো তখন থেকে এগুলো সংরক্ষণের তাগিদ ছিলো পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশসচেতন মানুষের পক্ষ থেকে। কিন্তু আমাদের রাজনীতিকরা মুখে পরিবেশ রক্ষার কথা বললেও কার্যত সব ধ্বংস করেছেন নিজ হাতে। এখনো বিস্তারিত অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপ নিয়ে যেসব কারসাজি চলছে তা অতীতের ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা। আমরা নিছক নিজেদের অযোগ্যতা, অদক্ষতা ও হঠকারিতার কারণে এমন একটি আগামী প্রজন্মের জন্য রেখে যাচ্ছি যা আদৌ মানুষের বসবাসের উপযোগী নয় এবং ভবিষ্যতেও বাসযোগ্য করা সম্ভব হবে কি না সন্দেহ। সবচেয়ে বড় কথা, দিনের পর দিন প্রাকৃতিক সম্পদের নির্বিচার ধ্বংসের মাধ্যমে আমরা প্রকৃতিকে চরমভাবাপন্ন হওয়ার দিকে ঠেলে দিয়েছি। বিশে^র উষ্ণায়নে আমরা, মানুষই দায়ী। সমাধানের উপায় সবার জানা। কিন্তু তা বাস্তবে রূপদানের মতো সাহস, মনোবল, উদারতা বা দূরদৃষ্টি বিশে^র বর্তমান রাজনৈতিক নেতাদের নেই।

Comments (0)
Add Comment