কষ্টে থাকা মানুষেরা আদৌ উপকৃত হবে কি

সম্পাদকীয়

সরকার জ্বালানি তেল তথা ডিজেলের দাম প্রতি লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে মাত্র ৫ টাকা কমিয়েছে। ২৯ আগস্ট জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ১১৪ টাকার বদলে বিক্রি হবে ১০৯ টাকায়। পেট্রোল ১৩০ টাকার বদলে ১২৫ টাকা এবং অকটেন ১৩৫ টাকার বদলে ১৩০ টাকায় বিক্রি হবে। ৬ আগস্ট থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ এবং পেট্রোল ও অকটেনে ৪৬ টাকা বাড়ানো হয়েছিলো। এরপর পরিবহনের ভাড়া বেড়েছিল সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ। এর আগে গত নভেম্বরে প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয় ডিজেল ও কেরোসিনের দাম। ওই সময়েও পরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয় প্রায় ২৭ শতাংশ। এর পাশাপাশি খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দামও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। কৃষিকাজে ব্যবহৃত ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকেরা চরম বিপদে পড়েছেন। ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেচে বিদ্যুতের খরচও বেড়েছে। অন্যদিকে সারের দামও কেজিপ্রতি ছয় টাকা বাড়ানো হয়েছে। কোথাও কোথাও কৃষক সার না পেয়ে জমিতে ছাই ব্যবহার করছেন বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

সরকারের এ সিদ্ধান্তকে কী বলা যায়? এর মধ্য দিয়ে কি জনগণের দাবির প্রতি সম্মান জানানো হলো? জনগণ কি এতে আদৌ উপকৃত হবে? জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ডিজেলের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করে এবং ৫ শতাংশ আগাম শুল্ক প্রত্যাহার করে। সেটাও যদি মাপকাঠি ধরে নিই, তাহলে জ্বালানি তেলের দাম অন্তত ১০ শতাংশ কমানো যেতো। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম তামিমের মতে, ৫ টাকা কমানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই, অন্তত ১০ টাকা কমানো যেতো। এতে পরিবহন মালিকেরা প্রতি কিলোমিটারে ৫ পয়সা ভাড়া কমিয়েছে না। বাড়তি টাকা ব্যবসায়ীদের পকেটে যাবে; সরকারের কোনো রাজনৈতিক সুবিধা হবে না। সরকারের যে সিদ্ধান্ত জনজীবনে কোনো প্রভাব ফেলবে না, তা প্রহসন ছাড়া কিছু নয়।

সরকারের নীতিনির্ধারকেরা নিজেরাই স্বীকার করছেন, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় জনগণ কষ্টে আছে। কিন্তু সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে না যে সেই কষ্ট লাঘব কারার উদ্যোগ সরকারে আছে। যখন দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের ১৩৪ ডলারে নেমে আসে। বর্তমানে সেই তেল বিক্রি হচ্ছে ১১৮ ডলারে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমতির দিকে। আগামী দিনে আরও কমবে বলে ধারণা করা যায়। এ অবস্থায় লিটারপ্রতি ৫ টাকা জ্বালানি তেলের দাম কমালেও বাস্তবে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। জনগণকে গত ২৩ দিন প্রতি লিটার ৩৪ টাকা দামে কিনতে হয়েছে আর এখন ২৯ টাকা দামে তেল কিনতে হবে। অর্থনীতিবিদেরা শুরু থেকে কৃষিকাজে ব্যবহৃত ডিজেলের দাম না বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণেই তারা ডিজেলের দামও বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশেও দাম সমন্বয় করা হবে। কিন্তু দাম সমন্বয়ের নামে সরকার যা করলো, তাকে কষ্টে থাকা মানুষগুলোর প্রতি একধরনের পরিহাস হিসেবে বিবেচনা করার যথেষ্ট কারণ আছে।

Comments (0)
Add Comment