কনকনে শীতে পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত বছরের মতো এ বছরও প্রকৃতিতে দেরিতে শীতের আগমন ঘটেছে। পৌষের মাঝামাঝি এসে জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। বৃহস্পতিবার দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল শনিবার তাপমাত্রা বাড়লেও চুয়াডাঙ্গায় সারাদিন সূর্যের মুখ দেখা যায়। উত্তরে হিমেল হাওয়ায় শীত বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুন। এছাড়াও রাজশাহী, পঞ্চগড়, সৈয়দপুর, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, রংপুর, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলায় ছিন্নমূল মানুষের কষ্ট বেড়েছে। অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। গত কয়েকদিনে সারা দেশে বেড়েছে সর্দি-কাশিসহ শীতজনিত নানা রোগ। এ মাসেই দেশের পশ্চিম, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় মাঝারি থেকে তীব্র, অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন, রাজশাহী, রংপুর, সিলেটসহ কয়েকটি জেলার কিছু এলাকায় তাপমাত্রা ৩ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসতে পারে। কাজেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
এদিকে গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিশুদের মধ্যে শীতকালীন ডায়রিয়া বেড়ে গেছে। প্রতিদিন গড়ে ৬৭৫ শিশু ডায়রিয়া নিয়ে মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর’বি) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। চিকিৎসক ও গবেষকরা বলছেন, বর্তমানে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি; অনেক শিশুকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। সারা দেশের শীতকালীন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য জেলা-উপজেলার সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে বাড়িতে ভুলভাবে স্যালাইন খাওয়ানোর ঝুঁকি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ নেয়া দরকার।
শীতের কারণে সারা দেশে নিম্নআয়ের মানুষকে খুবই কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে। শীত নিবারণের সুযোগ ও সামর্থ্য যাদের কম, সেসব গরিব মানুষ, বিশেষত বৃদ্ধরা কম শীতেও কাবু হয়ে পড়েন। ছিন্নমূল মানুষের পক্ষে শীতবস্ত্র ও লেপ-কম্বল কিনে শীত নিবারণ করা সম্ভব হয় না। শীত মরসুমে কয়েক ধরনের ভাইরাস অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। আজকাল শহর-গ্রাম-গঞ্জে গরিব-দুঃখীদের খোঁজখবর রাখার মতো মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন অতীতের মতোই দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। হাড়কাঁপানো শীতে দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ যাতে আর না বাড়ে, সেজন্য সরকারিভাবে পর্যাপ্ত সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। ঘন কুয়াশায় দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহনের চালকদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।