অনলাইন জুয়া বন্ধে তৎপর হতে হবে

সম্পাদকীয়

বর্তমানে দেশে অন্যতম আলোচিত শব্দ হচ্ছে অর্থ পাচার। এর পেছনে কারণ হিসেবে আমরা দেখতে পাই ব্যাংক জালিয়াতি, ঋণ খেলাপ করা, ই-কমার্সের ফাঁদ পাতা কিংবা হুন্ডি ব্যবসা। এ ছাড়া আরও আরও কায়দায় পাচার হচ্ছে অর্থ। যেমন দেশি-বিদেশি একটি চক্র গোটা দেশে অনলাইন জুয়ার পসার ঘটিয়ে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। দীর্ঘদিন ধরে এ অপকর্ম চললেও কয়েক দিন আগে মেহেরপুরে অনলাইন জুয়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের কয়েকজন নেতা-কর্মীর গ্রেফতারের ঘটনায় বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। বিদেশের ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের সহায়তায়  মোবাইলফোনে জুয়ার অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে দেশে সেটি ছড়িয়ে দিয়েছে একটি চক্র। নানা এলাকায় নিয়োগ করা হয়েছে এজেন্টও। শুধু মেহেরপুরে দুই শতাধিক তরুণ অনলাইন জুয়ায় জড়িয়ে পড়েছেন। সেই হিসেবে গোটা দেশে বিপুলসংখ্যক তরুণ এখন অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন। তিন পাত্তি, লাইভ ক্যাসিনো, ক্রিকেট, ফুটবলসহ দুই শতাধিক মোবাইলফোন অ্যাপে জুয়া খেলা হয়। পুরো ব্যাংকিং প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে ডলারের মাধ্যমে জুয়ার যাবতীয় লেনদেন করা হয়। হুন্ডির মাধ্যমে সেই টাকা চলে যায় দেশের বাইরে। বিটিআরসি বলেছে, মোবাইল অ্যাপ ছাড়াও অপরাধীরা বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা ডোমেইনের মাধ্যমে সরাসরি অনলাইন গেম বা জুয়ায় অংশগ্রহণ করেন। এভাবে অপরাধী চক্র দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার করছে। এর মধ্যে কয়েকশ জুয়ার সাইট বন্ধ করা হয়েছে। গুগল প্লে-স্টোর, ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে জুয়াসংক্রান্ত কয়েক শ অ্যাপ ও লিংক বন্ধে রিপোর্টও করা হয়েছে। এতে কিছু বন্ধ করাও হয়েছে, যা যথেষ্ট নয়। এদিকে টিভি স্ক্রিনসহ ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ ও তা অপসারণে ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রোববার একটি রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। ডাক ও টেলিযোগাযোগসচিব, তথ্য ও সম্প্রচারসচিব, যুব ও ক্রীড়াসচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যানসহ চার বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

মেহেরপুরের এ অনলাইন জুয়া নিয়ন্ত্রণকারীদের পেছনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নাম আমরা জানতে পেরেছি। এছাড়া অনেক প্রভাবশালী এর সঙ্গে যুক্ত বলে পুলিশ জানিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রভাবশালীরা ছাড়া শত শত কোটি টাকার এমন অপকর্ম চালিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। যতোই প্রভাবশালী হোক, শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। মেহেরপুরের ঘটনার সূত্র ধরে গোটা দেশে অনলাইন জুয়া বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। অর্থ পাচার রোধের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে এ ধ্বংসাত্মক কর্মকা- থেকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।

Comments (0)
Add Comment