দামুড়হুদার কানাইডাঙ্গায় ১০ টাকা খরচ করায় ৮ বছরের শিশুকে গলা কেটে করে হত্যা
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার কানাইডাঙ্গায় মুড়ি কেনার অতিরিক্ত ১০ টাকা খরচ করায় ইয়ামিন হাসান নামে আট বছর বয়সী এক শিশুকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ উঠেছে সাবেক ইউপি সদস্যের ছেলের বিরুদ্ধে।
গতকাল শনিবার দুপুর ২ টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলার কানাইডাঙ্গা গ্রামের মোশারফ বিশ্বাসের আম বাগানের ভিতর একটি পুরাতন কবর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যরা। নিহত ইয়ামিন হাসান কানাইডাঙ্গা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের নাতি ও জয়রামপুর গ্রামের সেলিম রেজার ছেলে। ইয়ামিন কানাইডাঙ্গা বৃত্তিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে নিহত শিশুর মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছে পুলিশ। মরদেহ উদ্ধার করে রাখা হয়েছে থানায়। আজ রোববার নিহত শিশু ইয়ামিনের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হবে সদর হাসপাতাল মর্গে। অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম জাহিদ (১৫) কানাইডাঙ্গা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামানের ছেলে। সে কানাইডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে গাঢাকা দিয়েছে জাহিদ ও তার পরিবার। তাকে গ্রেফতারে চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নিহত শিশু ইয়ামিনের মামা আক্তারুজ্জামান বাবু জানান, পারিবারিক কলহের কারণে প্রায় ৭ বছর আগে আমার বোনের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। সেই থেকে ইয়ামিন ও তার বড় ভাই ইমন মায়ের সাথে আমাদের বাড়িতে কানাইডাঙ্গাতেই থাকে। গতকাল দুপুরে বাড়ির পাশের মোশারফ বিশ্বাসের আম বাগানে বন্ধুদের সাথে খেলছিল ইয়ামিন ও তার বড় ভাই ইমন। এসময় সাবেক ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম জাহিদ মুড়ি কিনে আনতে ৩০ টাকা দিয়ে ইয়ামিনকে দোকানে পাঠায়। মুড়ি কেনার পর অবশিষ্ট থাকা ১০ টাকা খরচ করে ফেলে ইয়ামিন। পরে বাকী টাকা চায় জাহিদ। টাকা দিতে না পারায় ইয়ামিনকে দঁড়ি দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে মারধর করে জাহিদ। ভয় পেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসে ইয়ামিনের বড় ভাই ইমন। বাড়ি ফিরে পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানায় ইমন। খবর পেয়ে ইয়ামিনকে ওই বাগানে খোঁজাখুঁজি শুরু করে পরিবারের সদস্যরা। অনেক খোঁজার পর আম বাগানের একটি পুরাতন কবরের মধ্যে পাওয়া যায় ইয়ামিনের মরদেহ।
তিনি আরও জানান, আমার বোনের দুই ছেলের মধ্যে ইয়ামিন ছোট। আমাদের খুব আদরের ছিল সে। আমরা তার হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই। আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়ে মূর্ছা যাচ্ছেন ইয়ামিনের মা রিনা খাতুন।
এদিকে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের পরিবারের সাথে কথা বলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কনক কুমার দাস ও দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, নিহত শিশু ইয়ামিনের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। মরদেহ আপতত থানায় রাখা হয়েছে। আজ রোববার নিহতের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।
তিনি আরও জানান, ঘটনার পর পলাতক রয়েছে অভিযুক্ত জাহিদ ও তার পরিবার। তাকে গ্রেফতারে চিরুনি অভিযান চালানো হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাসুয়াটি উদ্ধারও কাজ চলছে।