স্টাফ রিপোর্টার: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে টিকার প্রথম চালান জেলায় জেলায় পাঠানো হয়েছে। গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়াতেও এসে পৌঁছেছে।
চুয়াডাঙ্গায় শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিশেষ গাড়িতে করে ৩৬ হাজার ডোজ টিকা জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে পৌঁছায়। জেলার সিভিল সার্জন এএসএম মারুফ হাসানের নেতৃত্বে জেলা কমিটির সদস্যরা বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালের উপব্যবস্থাপক কামরুল আহসানের কাছ থেকে টিকার অ্যাম্পুল ভর্তি কার্টন বুঝে নেন। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনিরা পারভীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কনক কুমার দাস, ঔষধ প্রশাসন চুয়াডাঙ্গার সহকারী পরিচালক কেএম মুহসীনিন মাহবুব, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, র্যাবের প্রতিনিধি ও সদর হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।
সিভিল সার্জন এএসএম মারুফ হাসান বলেন, টিকাগুলো গ্রহণের পর তা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আইএলআর ফ্রিজে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়েছে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সম্ভাব্য টিকাদানের দিনক্ষণ ঠিক করে প্রস্তুতি চলছে।
সিভিল সার্জনের কার্যালয়সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গায় জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক ও সিভিল সার্জনকে সদস্য সচিব করে জেলা কমিটি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) আহ্বায়ক ও উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে (ইউএইচএফপিও) সদস্য সচিব করে উপজেলা টিকা বিষয়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি কমিটির সদস্য সংখ্যা ৯জন।
কর্মকর্তারা জানান, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অগ্রাধিকার পাওয়া মানুষের তালিকা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। পর্যায়ক্রমে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ স্বাস্থ্য বিভাগীয় কর্মী, প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকদের অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়েছে।
জেলায় সব মিলে ৫০টি টিকাকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১৭টি। সদর উপজেলায় ১৩, দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলায় ১০টি করে টিকা কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালে টিকা সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিনিয়র স্টাফ নার্স, উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা, পরিবারকল্যাণ পরিদর্শককে টিকাদানকর্মী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্য, বিগত দিনগুলোতে সরকারের টিকাদান কর্মসূচিতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যারা কাজ করেছেন, তাদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে রাখার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগীয় অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের কেউ আগ্রহ প্রকাশ করলে তাদেরও এই কর্মযজ্ঞে রাখা হবে।
জেলা সিভিল সার্জন এএসএম মারুফ হাসান বলেন, ৫০টি কেন্দ্রের মাধ্যমে সারা জেলায় অগ্রাধিকারভুক্ত ১৫টি পেশার মানুষকে প্রথম টিকাদান করা হবে। এর আগে কোল্ড চেইন মেনে টিকাগুলো উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। নিরাপদে টিকাদানের জন্য ১০০জন টিকাদানকর্মী ও ২০০ স্বেচ্ছাসেবককে শনিবার থেকে দুদিনের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কনক কুমার দাস বলেন, করোনাভাইরাসের টিকা সংরক্ষণে ফ্রিজের আদর্শ তাপমাত্রা ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হতে হবে। টিকা গ্রহণের সময় শীতাতপনিয়ন্ত্রিত গাড়ির তাপমাত্রা ছিলো ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী শুরু হচ্ছে করোনার টিকা প্রদান কর্মসূচি। সে আলোকে মেহেরপুরেও পৌঁছেছে বহু কাক্সিক্ষত করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম চালান। ভারতের অ্যাস্ট্রেজেনেকার তৈরি ১২ হাজার টিকা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বেক্সিমকো ফার্মার ডিস্ট্রিবিউশন শাখার ডেপুটি ম্যানেজার কামরুল হাসান সিভিল সার্জন ডা. মো. নাসির উদ্দীনের কাছে ওই ভ্যাকসিন হস্তান্তর করেন। বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপক বলেন, ‘নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ভ্যাকসিনগুলো ভারত থেকে বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। সেই কোল্ড চেইন মেইনটেইন করে টিকাগুলো রাখা হয়। একই তাপমাত্রায় গাড়িতে করে সারা দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে যেখানে রাখা হচ্ছে সেখানকার তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করার পর টিকাগুলো গাড়ি থেকে নামানো হচ্ছে।’
সিভিল সার্জন নাসির উদ্দীন জানান, ‘টিকা তাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। আগামী ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি টিকা প্রদানের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। তারপরই দুদিন উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে টিকা প্রয়োগ শুরু হবে, যা সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে চলবে। ইতোমধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকা প্রস্তুত করে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে পাঠানো হয়েছে।’
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহে প্রথম ধাপে ৬০ হাজার ডোজ করোনাভাইরাস টিকা পৌঁছেছে। গতকাল শুক্রবার বেক্সিমকো ফার্মার ফ্রিজার ভ্যানে করে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে টিকা পৌঁছে দেয়া হয়। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এ টিকা প্রয়োগ শুরু করা হবে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম বলেন, প্রথম ধাপে আমরা ৬০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছি। টিকাগুলো জেলা ইপিআই সেন্টারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। আগামী ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি টিকা প্রদানকারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে টিকা প্রদান শুরু করা হবে।
এছাড়া টিকার সাম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবেলায় মেডিকেল টিম প্রস্তুত থাকবে বলে জানান তিনি। এর আগে বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহে করোনা টিকা প্রদান সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সকল উপজেলা থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন গ্রহণে আগ্রহীদের তালিকা আগামী দুদিনের মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনকে জমা দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ায় পৌঁছেছে করোনা ভ্যাকসিনের টিকা। গতকাল শুক্রবার সকালে সুরক্ষিত ভ্যাকসিন বহনকারী পিকআপ যোগে ৫ কার্টুন ভ্যাকসিন কুষ্টিয়ায় পৌঁছায়।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, কার্টুনভর্তি ভ্যাকসিনগুলো কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই স্টোরে সংরক্ষিত করা হয়েছে। প্রতি কার্টুনে ১২০০ করে মোট ৬ হাজার ভায়াল আছে এতে ৬০ হাজার টিকা রয়েছে এবং প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে ৩০ হাজার মানুষকে টিকা দেয়া সম্ভব হবে।
আগামী রোববার ও সোমবার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী ও ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথমে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যার হাসপাতাল, পুলিশ লাইন হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যকর্মী ও ডাক্তারদের দেয়া হবে। পরবর্তীতে ইউনিয়ন পর্যায়ে দেয়া হবে। ফেব্রুয়ারি মাসে ৩য় সপ্তাহ থেকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।