স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্টোর কিপার হাফিজ বিন ফয়সালের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সরকারি ওষুধ ও এমএমআর দ্রব্যাদি খোলা বাজারে বিক্রি করে প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আমলে নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ফলে শুরু হয়েছে অনুসন্ধান। এরই অংশ হিসেবে আজ ১৬ সেপ্টম্বর দুদকের সমন্বিত কুষ্টিয়া কার্যালয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সহ তিনটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোর কিপারদের বক্তব্য নেয়ার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত হাফিজ বিন ফয়সাল। তিনি পিয়াস নামেই পরিচিত। বরাদ্দকৃত ওষুধ পথ্য দীর্ঘদিন ধরেই সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সরবরাহ করা হতো। এ সুযোগে নানা অনিয়ম করার অভিযোগ মাঝে মাঝে উত্থাপিত হলেও তা বেশিদূর না গড়ালেও যখন সিভিল সার্জন কার্যলয় থেকে সরবরাহ না করে সরাসরি হাসপাতালে বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তখন পিয়াস হাসপাতালে বদলি নেয়ার জোর চেষ্টা চালাতে শুরু করে। অপরদিকে তার বিগত দিনের ওষুধ এ এমএসআর দ্রব্যাদি বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাত করেছে মর্মে অভিযোগ উঠে। সূত্র বলেছে, এই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্তের পক্রিয়া শুরু করেছে। হাফিজ বিন ফয়সালের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর স্টোর কিপারদের বক্তব্য নেয়ার জন্য অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দিন নির্ধারণ করে নোটিশ দেন। আজ ১৬ সেপ্টম্বর ধার্য্যকৃত দিন।
প্রসঙ্গত ২০১০ সালে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে স্টোর কিপার হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে চাকরি জীবন শুরু করেন হাফিজ বিন ফয়সাল পিয়াস। তারপর থেকে তিনি একই যায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন সময় পিয়াসের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলেও অজানা কারণে তাকে সেখানেই রাখা হয়েছে। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে তাকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি করা হলেও বহাল তবিয়তে তিনি চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসেই থেকে গেছেন। সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে সরকারি হাসপাতালে বরাদ্দের যথাযথ ব্যবহার করে গরীবের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করেছিলো দুর্নীতি দমন কমিশন। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেসময় গঠন করা হয় বিশেষ অনুসন্ধান দল। দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে হাসপাতালের কেনাকাটায় লাগামহীন দুর্নীতির কারণেই স্বাস্থ্যসেবায় চরম দুরবস্থা বিরাজ করছে। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে বিভিন্ন হাসপাতালের সরঞ্জামাদি কেনাকাটায় নানা অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে ছিলো, অর্থ বরাদ্দের আগেই টেন্ডার আহ্বান, মালামাল সরবরাহের আগেই ঠিকাদারের টাকা পরিশোধ, একই ঠিকাদারের বারবার অংশগ্রহণ, ভূয়া ভাউচারে অর্থ আত্মসাৎ, বাজারমূল্যের চেয়ে অস্বাভাবিক বেশি দামে মালামাল কেনা। কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ি দেশের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেনাকাটার হিসেব খতিয়ে দেখেন তারা। সেসময় দুদকের অনুসন্ধানে শুধু চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের নামই নয়, উঠে আসে স্বয়ং সিভিল সার্জন অফিসের স্টোর কিপার হাফিজ বিন ফয়সাল ওরফে পিয়াসের নাম। এর আগে, ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে হাসপাতাল পরিদর্শন করে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিনিধি দল। সেসময় বিভিন্ন অনিয়ম লক্ষ করে তা লিখিতভাবে জানানোর জন্য চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেন দুদক কর্মকর্তা।