করোনায় মারা যাওয়া রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালের আইসিইউ প্রধানের গাংনীতে দাফন
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় পুলিশ-বিজিবি সদস্যসহ চারজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল রোববার বিকেলে চুয়াডাঙ্গায় আসা ৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। মেহেরপুরের গাংনীতে দুবাই ফেরত ব্যক্তি করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছেন। গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন। করোনা আক্রান্ত হয়ে গত শনিবার মৃত্যুবরণকারী রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালের আইসিইউ প্রধান ডা. সাজ্জাদ হোসেনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল রোববার নিজ এলাকা মেহেরপুরের গাংনীর পোস্ট অফিসপাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। গত ১১ মে তার স্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেলের করোনা ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। ঝিনাইদহে নতুন করে আরো ১১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৯৩ জনে।
চুয়াডাঙ্গায় পুলিশ-বিজিবি সদস্যসহ নতুন করে চারজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল রোববার বিকালে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে ৮৪ জনের নমুনার পরীক্ষার ফলাফল চুয়াডাঙ্গায় আসে। তার মধ্যে ৮০ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ এবং চারজনের পজেটিভ পাওয়া গেছে। গতকাল পরীক্ষার জন্য নতুন ৩২ জনের নমুনা কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় ১৪৪ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। গতকালই নতুন করে দুজন সুস্থ হয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, রোববার বিকেলে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে ৮৪টি নমুনার রিপোর্ট আসে। নতুন রিপোর্টের মধ্যে চারজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। ৮০ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এছাড়া পরীক্ষার জন্য নতুন নমুনা প্রেরণ করা হয়েছে ৩২ জনের।
আক্রান্ত চারজনের মধ্যে রয়েছেন এক বিজিবি সদস্য, দর্শনা ও দামুড়হুদা থানার দুই পুলিশ সদস্য এবং চুয়াডাঙ্গার ভেদামারী গ্রামের একজন। করোনা আক্রান্ত বিজিবির ওই সদস্য যশোর-৪৯ ব্যটালিয়নের সুবেদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি জ্বর নিয়ে গত ৬ জুন যশোর থেকে চুয়াডাঙ্গা বর্ডার গার্ড (বিজি) হাসপাতালে ভর্তি হন। গত ১১ জুন তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গতকাল রোববার তার করোনা আক্রান্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়। দুই পুলিশ সদস্যের মধ্যে একজন জেলা বিশেষ শাখার (ডিএসবি) দামুড়হুদা থানা এলাকায় কর্মরত সহকারী উপ-পরিদর্শক এবং দর্শনা থানা পুলিশের এক কনেস্টেবল। এ পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের ১৬ সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ভেদামারী গ্রামের একজন। পুলিশের দুই সদস্য বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিজিবি সদস্যকে চুয়াডাঙ্গা বর্ডার গার্ড (বিজি) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। ভেদামারী গ্রামের অপর ওই ব্যক্তি হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। আক্রান্ত চারজনের বয়স ২৮-৫৬ বছরের মধ্যে। নতুন আক্রান্ত সবাই পুরুষ।
এদিকে, পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে নমুনা রয়েছে শুক্রবারে ৩১টি, শনিবারের ৫৪টি ও রোববারের ৩২টি। এ নিয়ে গতকাল রোববার পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন ১৪৪ জন। তার মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৮ জন। উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার পর নমুনা পরীক্ষায় একজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। এছাড়া আরেকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তারেক জানান, পুলিশের দুই সদস্য নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের ১৬ জন সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন এক সদস্য।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রামের এক ব্যক্তি করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছেন। গতকাল রোববার নমুনা পরীক্ষায় তিনি কোভিড-১৯ পজিটিভ। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত গাংনী উপজেলায় ১৫ জনসহ মেহেরপুর জেলায় করোনাভাইরাস শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৪ জনে। ৪০ বছর বয়সী দুবাই ফেরত ওই ব্যক্তিকে হোম আইসোলেশন করা হয়েছে। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রিয়াজুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আক্রান্ত দুবাই ফেরত ওই ব্যক্তির বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, গেলো ৬ জুন দুবাই থেকে ওই ব্যক্তি বাড়ি ফেরেন। ওই সময় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে বাড়িতে সঙ্গরোধ (কোয়ারেন্টিন) করতে বলা হয়। ১২ জুন তার নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছিলো। গতকাল জেলার ৩টি উপজেলা থেকে পাঠানো ১৮টি নমুনা পরীক্ষায় একটি পজিটিভ ও একটি ফলোআপ পজিটিভ হয়। বাকিগুলো নেগেটিভ। আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ি লকডাউনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. এম রিয়াজুল আলম বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারে ১৩ জন সদস্য রয়েছেন। এদের সবার নমুনা সংগ্রহ করা হবে। প্রসঙ্গত, গতকাল রোববার পর্যন্ত মেহেরপুর জেলায় মোট আক্রান্ত ৩৪ জন। এর মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ৯ জন। জেলায় ৩৪ জনের মধ্যে গাংনী উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ জন। তবে মৃত্যুবরণকারী দুজনের বাড়ি সদর উপজেলার কোলা গ্রামে ও মুজিবনগর উপজেলার ভবরপাড়া গ্রামে। উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর পর তাদের নমুনা পরীক্ষায় কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়।
অপরদিকে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করা রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালের আইসিইউ প্রধান গাংনীর ডা. সাজ্জাদ হোসেন সাজুর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে গত শনিবার ঢাকা মেডিকেলের করোনা ইউনিটে মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাাহি…..রাজেউন)। ডা. সাজ্জাদ হোসেন সাজু মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার পোস্ট অফিসপাড়ার মরহুম হাবিবুর রহমানের ছেলে এবং মোয়াজ্জেম জিমন্যাস্টিক ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা মোয়াজ্জেম হোসেনের ভাই। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গতকাল রোববার বিকেলে গাংনীর পোস্ট অফিসপাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে বিশেষ ব্যবস্থায় তার দাফনকার্য সম্পন্ন হয়েছে।
বিআরবি হাসপাতালের আইসিইউ প্রধান ডা. সাজ্জাদ হোসেন সাজু করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথমে বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত ২৯ মে বিআরবি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সেদিনই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় ওইদিন রাতেই তাকে ভেন্টিলেশনে নেয়া হয়। সেখানে ১৫ দিন চিকিৎসাধীন থেকে গত ১৩ জুন রাত ৯টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গত ১১ জুন ডা. সাজ্জাদ হোসেনের স্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন।
ডা. সাজ্জাদ হোসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (সিএমসি) থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। তিনি সিএমসির ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। ডা. সাজ্জাদ কর্মজীবনে বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে মানুষের সেবা দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি স্বপরিবারে ঢাকায় বসবাস করতেন। নিজ এলাকা গাংনীতেও রয়েছে তার সুনাম। গতকাল রোববার বিশেষ ব্যবস্থায় তার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন্ করা হয়। জানাজায় গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমানসহ কিছু স্বজন অংশগ্রহণ করেন। গাংনী থানা পুলিশের কুইক রেন্সপন্স টিম ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঈমামরা দাফনকার্য সম্পন্ন করেন।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহ জেলায় নতুন করে আরও ১১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল রোববার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম। তিনি জানান, কুষ্টিয়া ও খুলনা ল্যাব থেকে ৮৫টি নমুনার রিপোর্টে নতুন করে ১১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে কোটচাঁদপুরে ৫ জন, কালীগঞ্জে ৩ জন ও হরিণাকুন্ডুতে ২ জন ও মহেশপুর উপজেলায় ১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট জেলায় ১ হাজার ২৮৮টি নমুনার রিপোর্টে ৯৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪৩ জন।