স্টাফ রিপোর্টার: দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গোপালগঞ্জে যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার ও মোটরবাইকের ত্রিমুখী সংঘর্ষে স্বামী, স্ত্রী ও ছেলেসহ ৯জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া মুন্সিগঞ্জে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুই বন্ধু, গাইবান্ধায় মোটরসাইকেল চালক, টাঙ্গাইলে বাসচালক, সাতক্ষীরায় ট্রাকচাপায় ভ্যানচালক এবং ঈশ্বরদীতে এক গরু ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।
গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় এক ডাক্তার-পরিবারসহ ৯ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কাশিয়ানীর দক্ষিণ ফুকরা এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস, একটি প্রাইভেটকার ও একটি মোটরবাইকের ত্রিমুখী সংঘর্ষে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন প্রাইভেটকারে থাকা ঢাকার বারডেম হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিয়ার ডাক্তার ও গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের প্রফুল্ল কুমার সাহার ছেলে ডা. বাসুদেব সাহা (৫১), তার স্ত্রী শিবানী সাহা (৪২) ও ছেলে ঢাকার আহসানউল্যাহ বিশ^বিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী স্বপ্নীল সাহা (১৯), প্রাইভেটকারের চালক ঢাকার দোয়ারী এলাকার আজিজুল (৪৫), মোটরবাইকের আরোহী কাশিয়ানীর দক্ষিণ ফুকরা গ্রামের জিন্দার মোল্লার ছেলে অনিক মোল্লা (২১) ও খায়েরহাট গ্রামের ইয়ার আলীর মেয়ে অনিফা (২০), বাসযাত্রী বরগুনা পাথরঘাটা উপজেলার চরদোয়ানী গ্রামের আব্দুর রশিদ খানের ছেলে আলতাফ হোসেন খান (৫৫) এবং মহাসড়কের পাশে ধান-মাড়াইরত দক্ষিণ ফুকরা গ্রামের ফিরোজ মোল্লা (৫০) ও তার স্ত্রী রুমা বেগম (৪০)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বরগুনার পাথরঘাটা থেকে ঢাকাগামী রাজীব পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস এবং ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জগামী প্রাইভেটকার ও মোটরবাইকের ত্রিমুখী সংঘর্ষে প্রাইভেটকারটি মহাসড়কের পাশে মাড়াইকলের ওপর ছিটকে পড়ে, মোটরবাইকটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং যাত্রীবাহী বাসটি উল্টে গিয়ে মহাসড়কের পাশে গাছের ওপর আছড়ে পড়ে। এতে বাসের সম্মুখভাগ ভেঙে গাছ ভেতরে ঢুকে যায়। এতে এ সময় ঘটনাস্থলেই ডাক্তার-পরিবারসহ ৮ জন নিহত হন। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ফায়ার-সার্ভিস ও পুলিশ অন্তত ৩০ জন আহতকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে আরেকজন নিহত হন। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বাসের ১৮ যাত্রী। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. অসিত কুমার মল্লিক জানিয়েছেন, একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনায় মহাসড়কের ওই স্থানে একঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে পুলিশের উদ্ধার তৎপরতায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা ও পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকাসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। ডা. বাসুদেব সাহার বড় ভাই জয়দেব সাহা জানিয়েছেন, তাদের মা বাড়িতে ভীষণ অসুস্থ। মাকে দেখতেই সে তার পরিবার নিয়ে সকালে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়। আসার পথে ফেরিতে উঠে পরিবার নিয়ে সেলফি তুলে সে তার ফেসবুকেও স্ট্যাটাস দেয়। দুর্ঘটনার ১০ মিনিট আগে মোবাইল ফোনে সর্বশেষ তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি আরও জানান, বাড়িতে তার অসুস্থ মায়ের কথা ভেবে এ দুর্ঘটনার কথা এখনও বাড়িতে জানানো হয়নি। বাড়ির লোকজন কাঁদতেও পারছে না। হাসপাতাল থেকে তাদের মরদেহ সরাসরি গোপালগঞ্জ পৌর-মহাশ্মশানে নিয়ে অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়িতে দুলাভাইয়ের প্রাইভেটকার নিয়ে ঘুরতে এসে দুর্ঘটনায় ২ বন্ধু নিহতসহ অপর ১ বন্ধু গুরুতর আহত হয়েছে। নিহতরা হলেন মুন্সিগঞ্জ সদর থানাধীন উত্তর চরমসূরার মানিক মিয়ার ছেলে জিসান (১৯) ও তার বন্ধু একই গ্রামের সর্গতুল্লাহর ছেলে ফাহিম (১৯)। আর গুরুতর আহত ব্যক্তি একই গ্রামের জাহিদ হাসান (১৬) মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টার সময় টঙ্গীবাড়ি আলদী-দীঘিরপাড় সড়কের পুরা বাজার পার হয়ে রাস্তার ওপর নির্মাণাধীন ভাঙ্গা ব্রিজের গোড়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাইভেটকার রাস্তার পাশে ৪০ ফুট নিচে খাদে পড়ে যায়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জিসান ও ফাহিমকে মৃত ঘোষণা করেন। গাড়ির মালিক তার শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসলে তার শ্যালক জিসান সঙ্গে তার দুই বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছিল।
স্থানীয়রা জানান, গভীর রাতে পুলিশের সিগন্যাল অমান্য করে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় ব্রিজের পাশে খাদের পানিতে আংশিক ডুবে যায় লাল রঙের প্রাইভেটকারটি। নিহতের স্বজনরা জানান, ভাঙ্গা ব্রিজের গোড়ায় কোন সাইনবোর্ড বা ব্যারিকেড না থাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটছে। টঙ্গীবাড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ মোল্লা সোয়েব আলী জানান, পুরাস্থ রাস্তার পাশের খাদ থেকে দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি হতে ৩ জন উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। দুজন মারা গেছে অপর জন আহত।
গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, অটোরিক্সার সঙ্গে সংঘর্ষে আমিনুল ইসলাম (৪৫) নামের এক মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছেন। এ সময় অপর এক আরোহী আহত হন। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ-জয়পুরহাট ভায়া রাজাবিরাট সড়কের মদনপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আমিনুল ইসলাম ফুলবাড়ী ইউনিয়নের সাপগাছি হাতিয়াদহ গ্রামের মৃত ফজল হকের পুত্র। গাবিন্দগঞ্জ থানার বৈরাগীহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মিলন চ্যাটার্জী দুর্ঘটনার খবরটি নিশ্চিত করে জানান, আমিনুল দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে গোবিন্দগঞ্জ শহরের দিকে আসছিলেন। এ সময় গোবিন্দগঞ্জের মদনপুর নামক স্থানে বিপরীতমুখী রাজাবিরাটগামী একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সাকে ধাক্কা দিয়ে পাকা রাস্তার ওপর পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় তার সঙ্গী অজ্ঞাতনামা অপর এক আরোহী আহত হন। আহত ব্যক্তিকে হাসাপাতালে পাঠানো হয়েছে।
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মধুপুরে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন দুইবাসের অন্তত ২৫ জন। নিহত প্রান্তিক পরিবহনের চালক শামীমের (৪৫) বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলায়। শনিবার সকালে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুরের গাংগাইর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পরে স্থানীয়, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। মধুপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামুনুর রশিদ জানান, ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা প্রান্তিক পরিবহন ও টাঙ্গাইল থেকে ছেড়ে আসা মাহি পরিবহন মধুপুরের গাংগাইর এলাকায় এই দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুই বাসেরই ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুর্ঘটনায় প্রান্তিক পরিবহনের চালক শামীম টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এছাড়াও দুই বাসের চালকসহ ২৫ যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ট্রাকচাপায় এক ইঞ্জিন ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন। শনিবার সকালে পাটকেলঘাটা থানার গরু হাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ভ্যানচালক শেখ আবু তাহের (১৭) পাটকেলঘাটার চৌগাছা গ্রামের নাসির উদ্দীন শেখের ছেলে। পুলিশ ট্রাকটি আটক করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হেলপার ট্রাকটি চালাচ্ছিল। ইঞ্জিনভ্যান চালককে চাপা দিয়ে হেলপার গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যায়। পরে চালককে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঈশ^রদী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আব্দুর রহমান নামে এক গরু ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ সময় অপর এক ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। শনিবার সকাল ৯টার দিকে দাশুড়িয়া-কুষ্টিয়া মহাসড়কের রূপপুর মোড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যবসায়ী সাথিয়া থানার কাশিনাথপুর বাজার এলাকার আব্দুল আওয়ালের ছেলে।