চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উথলী সোনালী ব্যাংক শাখায় দিনেদুপুরে ডাকাতির ঘটনার অগ্রগতি নিয়ে পুলিশের সংবাদ সম্মেলন
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে উথলী সোনালী ব্যাংক শাখায় দিনেদুপুরে ডাকাতির ঘটনায় অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই ঘটনার ঠিক ১ মাস পর অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে যশোরের চৌগাছা এলাকা থেকে সাফাতুজ্জামান রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জীবননগরের দেহাটি গ্রাম থেকে অপর তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় সনি আট টিভিতে প্রচারিত অপরাধ বিষয়ক অনুষ্ঠান ক্রাইম পেট্রোল দেখে সাফাতুজ্জামান ও তার সহযোগীরা ব্যাংক লুটের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী অনলাইন মার্কেট প্লেস দারাজ থেকে সংগ্রহ করে খেলনা পিস্তল। ডাকাতি শেষে দলনেতা রাসেল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গাঢাকা দেয়। অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে যশোর জেলার চৌগাছা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক আত্মীয় বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে জীবননগর উপজেলার দেহাটি থেকে বাকি তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে তারা আগে থেকেই অবগত ছিলো বলে পুলিশকে জানিয়েছে গ্রেফতারকৃতরা। ডাকাতির সময় ব্যবহৃত একটি পিপিই, এক জোড়া হ্যান্ডগ্লাভস, দুটি হেলমেট, একটি খেলনা রিভলবার, একটি খেলনা পিস্তলের ভাঙা অংশ, দুটি চাপাতি, দুটি মোটরসাইকেল, একটি ল্যাপটপও উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
আসামিদের গ্রেফতারে বিলম্বের কারণ উল্লেখ করে পুলিশ সুপার আরও বলেন, মূল হোতা সাফাতুজ্জামান অনলাইন দোকান থেকে খেলনা পিস্তল কিনে ব্যাংক লুটে ব্যবহার করে। ঘটনার পর থেকে সে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। মূল হোতা প্রতি মুহূর্তে স্থান পরিবর্তন করায় তাকে গ্রেফতার করতে বিলম্ব হয়েছে। ঢাকা মহানগর ও চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ যৌথভাবে এ সফল অভিযান পরিচালনা করায় সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন পুলিশ সুপার। তবে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্যাংক লুটের ঘটনায় ব্যবস্থাপক ও ক্যাশিয়ারের অবহেলাও দায়ী। তারা দায় এড়াতে পারেন না।
এসময় সোনালী ব্যাংক ফরিদপুর জোনের মহাব্যবস্থাপক খোকন কুমার বিশ্বাস চুরির ঘটনার রহস্য উন্মোচন এবং টাকা উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ ও সাংবাদিকদের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আশ্বস্ত করেন, ব্যাংকের যেসব শাখায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) নেই, উথলীসহ সেসব শাখায় অচিরেই সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হবে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন জীবননগর উপজেলার দেহাটি গ্রামের রফিক উদ্দিনের ছেলে সাফাতুজ্জামান রাসেল (৩০), একই গ্রামের জাহাঙ্গীর শাহর ছেলে মোহাম্মদ রকি (২৩), মৃত আক্তারুজ্জামান বাচ্চুর ছেলে মোহাম্মদ হৃদয় (২২) ও মফিজুল শাহর ছেলে মাহাফুজ আহমেদ আকাশ (১৯)। এদের মধ্যে মূল পরিকল্পনাকারী সাফাতুজ্জামান রাসেল। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সাফাতুজ্জামান রাসেল পেশায় ওষুধ ব্যবসায়ী এবং বাকিরা চিহ্নিত মাদকব্যবসায়ী ও মাদকসেবী। তাদের নামে জীবননগর থানায় মাদক আইনে মামলা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কনক কুমার দাস, দামুড়হুদা সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আবু রাসেল, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান, জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, পরিদর্শক (তদন্ত) ফেরদৌস ওয়াহিদ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা পরিদর্শক এএইচএম কামরুজ্জামান খান, উপ-পরিদর্শক সুলতান আহমেদ, উপ-সহকারী পরিদর্শক রজিবুল হকসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা এবং সোনালী ব্যাংক ফরিদপুর জোনের মহাব্যবস্থাপক খোকন কুমার বিশ্বাস এবং চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর অঞ্চলের উপমহাব্যবস্থাপক খোন্দকার আব্দুস সালাম উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গেলো ১৫ নভেম্বর দুপুর ১টার দিকে জীবননগর উথলী সোনালী ব্যাংক শাখায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এসময় খেলনা পিস্তলের মুখে জিম্মি করে নগদ ৮ লাখ ৮২ হাজার ৯০০ টাকা লুট করে পালিয়ে যায় ডাকাতরা। পরে ঘটনার দিন রাতে বাদী হয়ে জীবননগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন জীবননগর উথলী সোনালী ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক আবু বক্কর সিদ্দীকী।