স্টাফ রিপোর্টার: করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বন্ধ না হওয়ায় সহসাই খুলছে না দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শ্রেণিতে পরীক্ষা ছাড়াই মূল্যায়ন করে অথবা অটো প্রমোশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উপরের ক্লাসে তুলে দেয়া হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশিসূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। এ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) বাতিলের পর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা বাতিল করায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের অন্য শ্রেণিতেও বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না এটিও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
করোনার প্রকোপ বন্ধ না হওয়ায় শিক্ষাবিদরাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার পরামর্শ দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, করোনার এ পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ঝুঁকিপূর্ণ এতে সন্দেহ নেই। সারা পৃথিবীতেই করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও দ্বিতীয় সংক্রমণের ব্যাপারে সতর্ক করেছে। শীতের সময়ে দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ঠিক হবে না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা যৌক্তিক।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি একেবারেই ‘অপ্রত্যাশিত’। আমরা চেষ্টা করবো শিক্ষার্থীদের কোনোভাবে মূল্যায়ন করে ওপরের শ্রেণিতে তুলে দেয়ার। করোনা সংক্রমণ বন্ধ না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীর জীবনের নিরাপত্তা সবার আগে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিরাপদ মনে না হলে স্কুল-কলেজ খোলার সুযোগ নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের এ সময়ে শিক্ষার্থীদের টেলিভিশন, অনলাইনসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে পাঠদান চলছে।
করোনার কারণে এ বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করে ইতোমধ্যে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষা/মূল্যায়নের নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে। নভেম্বরে এসব পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিলো। এসব পরীক্ষার্থীকেও সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মূল্যায়ন করে পরবর্তী শ্রেণিতে তুলে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের গড়ের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের এইচএসসিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত জানানোর পর আর করোনার সংক্রমণ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অন্য শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা হওয়ারও আর সম্ভাবনা থাকলো না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নভেম্বরে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসবে। সে সময় করোনার সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন দ্বিতীয় ঢেউ এলে, সংক্রমণ বাড়লে তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সে হিসেবেও এ বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা অনিশ্চিত। তাছাড়া শীতকালে করোনার প্রকোপ থাকলে সে হিসেবে নতুন বছরের শুরুতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল হোসেন বলেন, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাথমিক পর্যায়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার পর্যালোচনা করে আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। এর মধ্যেও যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না যায় তবে তো অটো প্রমোশন ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। সচিব আরও বলেন, জানুয়ারিতে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শীতে করোনার প্রকোপ বাড়বে। করোনার প্রকোপ বাড়লে তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো সুযোগ থাকবে না। কবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। প্রসঙ্গত, গত করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান চালানো হচ্ছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বেতারের মাধ্যমেও শুরু হয়েছে প্রাথমিকের বিভিন্ন শ্রেণির পাঠদান। আর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনার পর দেশের বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে পাঠদান চালু রেখেছে।