স্টাফ রিপোর্টার: জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়েছেন বিএনপি, জামায়াত ও তরুণদের নেতৃত্বে নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সহ সাতটি রাজনৈতিক দলের নেতা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা (যারা পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রধান)। গতকাল শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, সংস্কারের প্রত্যাশা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, সংস্কার-নির্বাচন ইস্যুতে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারলে জাতিসংঘ সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
জাতিসংঘ ঢাকা অফিসের উদ্যোগে আয়োজিত এই গোলটেবিল বৈঠক বেলা ২টায় শুরু হয়ে চলে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। বৈঠকে শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কারগুলো শেষ করে দ্রুত সংসদ নির্বাচনের কথা বলেছে বিএনপি। জামায়াতের পক্ষ থেকে নির্বাচনের পাশাপাশি সংস্কারের ওপরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জুলাই গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচারে জাতিসংঘের সহায়তা চেয়েছে নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। একই সঙ্গে দলটি সংবিধান সংশোধনে গণপরিষদ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে করার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছে।
আলোচনায় বিএনপির দুই সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠক শেষে তার কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল জাতিসংঘের মহাসচিব কিছু বলেছেন কিনা, জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তিনি কোনো কমেন্ট (মন্তব্য) করেননি।
বিএনপির প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্য দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান বৈঠকে নির্বাচন ও সংস্কার বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে এবং জাতিসংঘের মহাসচিব কী বলেছেন। সালাহউদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, ‘জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আপনারা বসে রিফর্মস কী নেবেন, সেটা ঠিক করেন। উনি বাংলাদেশে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। পৃথিবীর মধ্যে একটা নজির সৃষ্টি করবে আগামী নির্বাচন, এমনটা উনি আশা করেছেন।’
আলোচনা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, আমরা যেন নিজেরা ঐকমত্যে আসতে পারি। আমরা যদি নিজেরা ঐকমত্যে আসতে পারি, তারা তাদের জায়গা থেকে সহযোগিতা করবে।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সংস্কারের ব্যাপারে কথা বলেছি। একটা ফেয়ার নির্বাচনের বিষয়ে বলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব আমাদের অধিকাংশ বক্তব্য সমর্থন করে বলেছেন, বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের কাজে আমাদের সহযোগিতা করবেন এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী।’
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, সদস্য ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার বৈঠকে অংশ নেন। তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও এতে উপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক দলের অন্য নেতাদের মধ্যে অংশ নেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এবং এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস, ইউএনএইচসিআরের আবাসিক প্রতিনিধি সুম্বুল রিজভী, আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটিআইনেন, ডব্লিউএফপির আবাসিক প্রতিনিধি ডমিনিকো স্কেলপেনি, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, ডব্লিউএইচওর আবাসিক প্রতিনিধি বর্ধন জং রানা, ইউএনওপিএসের আবাসিক প্রতিনিধি সুধীর মুরলীধরন, আইওএমের মিশন প্রধান ল্যানস বনেউ, ইউনেস্কোর প্রধান নির্বাহী পরিচালক ও ইউনিসেফের আবাসিক প্রতিনিধিও এই গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার বিকালে চার দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরে প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতার করেন। সফর শেষে জাতিসংঘের মহাসচিবের আজ রবিবার ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে।