মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা : প্রাণ গেলো স্বামীর মৃত্যুশয্যায় স্ত্রী

চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়িতে নববধূ ও ভাবীকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা

আফজালুল হক/নজরুল ইসলাম: চুয়াডাঙ্গায় নববধূকে নিয়ে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বেরিয়ে শামিম হোসেন (২৩) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন নববধূ সোনিয়া (১৮) ও তার ভাবী শেফালী (২০)। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সদরের দর্শনা-হিজলগাড়ি সড়কের কৃষি খামারের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শামিম সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের ফুরশেদপুর গ্রামের মৃত শফির ছেলে।

পরিবারের সদস্যরা জানায়, গত শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ফুরশেদপুর গ্রামের মাঠপাড়ার মৃত শফি উদ্দিনের ছেলে শামীম হোসেনের সঙ্গে একই উপজেলার বড়শলুয়া গ্রামের মনিরুল ইসলামের মেয়ে সোনিয়ার সঙ্গে পারিবারিকভাবে ধুমধাম করে বিয়ে হয়। বিয়ের পর দশবোধন (ফিরিনি) করতে শ্বশুরবাড়ি যান শামিম হোসেন। সেখানেই অবস্থান করছিলেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে শামিমের বন্ধুরা দেখা করতে আসেন। এ সময় এক বন্ধুর মোটরসাইকেলে স্ত্রী ও খালাতো শ্যালকের স্ত্রী শেফালিকে নিয়ে ঘুরতে বের হন শামিম। চুয়াডাঙ্গা সদরের দর্শনা-হিজলগাড়ি সড়কের হিজলগাড়ি কৃষি খামারের সামনে পৌঁছুলে সামনে হঠাৎ একটি কুকুর এসে পড়ে। শামিম জোরে ব্রেক করলে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে একটি গাছে সজোরে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই নিভে যায় শামিমের জীবন প্রদীপ। গুরুতর আহত হয় নববধূ সোনিয়া ও শ্যালকের স্ত্রী শেফালী। তাদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোনিয়াকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসক। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে দর্শনা-হিজলগাড়ি সড়কের হিজলগাড়ি কৃষি খামারের নিকট এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শামিম হোসেন স্থানীয় একটি বেকারিতে কর্মরত ছিলেন বলে জানা গেছে।

শামিমের শ্বশুরবাড়ি ও পরিবারের সদস্যদে সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার শ্বশুর বাড়িতে ছিল শামিম। বিকেলে শামিমের কয়েকজন বন্ধু দেখা করতে আসে। এরমধ্যে একবন্ধুর মোটরসাইকেল নিয়ে স্ত্রী সোনিয়া ও খালাতো শ্যালকের স্ত্রীকে সঙ্গে করে শামিম মোটরসাইকেলে ঘুরতে বের হন। দর্শনা-হিজলগাড়ি সড়কের কৃষি খামারের কাছে পৌঁছুলে সামনে একটি কুকুর চলে আসে। এ সময় শামিম জোরে ব্রেক করলে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা লাগে। স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শামিমকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে, পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের আহাজারিতে পুরো হাসপাতাল চত্বর ভারী হয়ে ওঠে। এ সময় স্বামীর নিথর দেহের দিকে নির্বাকভাবে তাকিয়ে ছিলেন গুরুতর আহত সোনিয়া। এই দৃশ্য দেখে উপস্থিত রোগীর স্বজনদের চোখে পানি দেখা যায়। সোনিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মুস্তাফিজুর রহমান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, হাসপাতালে আসার আগেই শামিমের মৃত্যু হয়েছে। সোনিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার শরীরের বিভিন্নস্থানসহ বুকের হাড় ভেঙে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আহত শেফালীকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

খুবই মর্মান্তিক ঘটনা উল্লেখ করে দর্শনা থানার ওসি এএইচএম লুৎফুল কবীর দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর এক দম্পতি মোটরসাইকেলে ঘোরাঘুরির সময় সামনে একটি কুকুর চলে আসলে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই স্বামীর মৃত্যু হয়। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযোগ না থাকায় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

Comments (0)
Add Comment