খুব বাড়াবাড়ি করছেন আপনি : তথ্য প্রমাণ ছাড়া কোনো কথা বলবেন না
মেহেরপুর অফিস: সেতু মন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ফখরুলকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তথ্য প্রমাণ ছাড়া কোনো কথা বলবেন না। খুব বাড়াবাড়ি করছেন আপনি। অর্থ পাচারের সাথে জড়িতদের তালিকা প্রকাশ করার কথা বলেছেন। মির্জা ফখরুল সাহেব আপনি কালো চশমা পরে বক্তব্য রাখছেন। বাংলাদেশের অর্থ পাচারের আসামি বিএনপি নেত্রী আপনাদের মা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তালিকায় এক নম্বরে আছেন। আওয়ামী লীগের কেউ অর্থ পাচার করলে শেখ হাসিনা কাউকে ছাড় দেন না। তার জলন্ত উদাহরণ ফরিদপুরে। গতকাল সোমবার দুপুরে মেহেরপুর শহীদ সামসুজ্জোহা পার্ক অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন কাদের। তিনি রাজধানীর নিজ বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের এই ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে। উদ্বোধনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য (এমপি) বাহাউদ্দীন নাসিম এবং প্রধান বক্তা খুলনা বিভাগীয় আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হকসহ অন্যান্য অতিথিরা।
পি.কে হালদারসহ অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করার যে কথা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তার সমালোচনা করেন ওবায়দুল কাদের। মির্জা ফখরুলের উদ্দেশে তিনি বলেন, ফখরুল সাহেব, আপনি কালো চশমা পরে বক্তব্য রাখছেন। অর্থ পাচারের আসামি বিএনপি নেত্রী ও আপনাদের মা, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এই তালিকার শীর্ষে আছেন। আওয়ামী লীগের কেউ অর্থ পাচার করলে শেখ হাসিনা কাউকে ছাড় দেন না। এর জ্বলন্ত উদাহরণ ফরিদপুর। মির্জা ফখরুলকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘তথ্য প্রমাণ ছাড়া কোনো কথা বলবেন না। খুব বাড়াবাড়ি করছেন আপনি। প্রধানমন্ত্রীর নামটি উচ্চারণের সময়ও সম্মান দেখান না আপনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, ক্ষমতা থেকে আওয়ামী লীগ নয়; বরং জনগণ মনে করে আন্দোলন ও নির্বাচনে ব্যর্থতার দায়ে মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির বড়-ছোট সব নেতার পদত্যাগ করা উচিত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের আলোয় বাংলাদেশ আজ আলোকিত হয়েছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্জন বিএনপি চোখে দেখে না। দেশের চলমান উন্নয়ন-অর্জন ধরে রাখতে হলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামীদিনেও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা রাখতে হবে। দেশের গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশকে বাঁচাতে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে এখন থেকেই দলকে সুসংগঠিত করতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, ত্যাগী ও দলের বিগত কমিটির অবহেলিত নেতাকর্মীদের জায়গা দিতে হবে। চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, অর্থ পাচারকারীর পরিবর্তে ত্যাগী নেতাকর্মীদের দলের কমিটিতে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগে অনেক ভালো লোক আছেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে তাদের আনতে হবে। বসন্তের কোকিলরা দুঃসময়ে থাকবে না। সুবিধাভোগীদের দুঃসময়ে হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়ে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেকের সঞ্চালনায় সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। মেহেরপুর শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন নাছিম। সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন খুলনা বিভাগীয় আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও সংসদ সদস্য আমিনুল আলম, সংসদ সদস্য পারভীন জামান কল্পনা, সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা, গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান।
এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছিলো। নেতৃত্বের সমর্থনে ব্যানার-ফেস্টুন, বিলবোর্ডে ছেয়ে যায় শহর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমর্থন জানিয়েছেন বিভিন্ন নেতার অনুসারীরা। এবারের সম্মেলনে কে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হবেন, তা নিয়ে তৃণমূল থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা চলছিলো।
সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক গাংনী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ খালেক। তারা দুজনই দ্বিতীয়বারের মতো এ দায়িত্বে আসলেন। আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে এই ঘোষণা দেন। এছাড়াও সহ-সভাপতি পদ পেয়েছেন অ্যাড. মিয়াজান আলী, মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জিয়াউদ্দীন বিশ্বাস, আব্দুস সামাদ বাবলুু বিশ্বাস, মো. আব্দুল মান্নান ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম। এর মধ্যে আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস পুনরায় সহসভাপতি হলেন। যুগ্মসাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ইব্রাহীম শাহীন। তিনি আবারও একই পদে নির্বাচিত হলেন। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদে তিন জনের নাম ঘোষণা করা হয়। এরা হলেন সাবেক এমপি আব্দুল মান্নান ও জয়নাল আবেদীন এবং মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন। একই সাথে জয়নাল আবেদীনকে মেহেরপুর জেলা থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য হিসেবে ঘোষণা করেন। সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কমিটির বাকি পদ পূরণ করে নতুন কমিটির সবার সামনে তুলে ধরা হবে বলে জানান আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম। ঘোষণায় আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, আমাদের সর্বোচ্চ পরামর্শ ও নির্দেশনা যিনি দেন এবং আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই কমিটির সভাপতি ও সাধাণ সম্পাদক ও অন্যান্য পদে কারা আসবেন তা ঠিক করেছি।
বিকেলে দ্বিতীয় পর্বে জেলা আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য শুধুমাত্র কাউন্সিলরদের নিয়ে অধিবেশন শুরু হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে ৬ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৭ জন প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। প্রার্থীদেরকে সমঝোতার মাধ্যমে চূড়ান্ত প্রার্থী নির্ধারণের সময় দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বেশ কিছুক্ষণ সময় ধরে প্রার্থীরা একে অপরের মাঝে আলোচনা করে প্রার্থী নির্ধারণের চেষ্টা করেন। পর্যায়ক্রমে তারা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির কাছে মতামত প্রকাশ করেন।
২০১৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ সম্মেলনে ফরহাদ হোসেন সভাপতি এবং এমএ খালেক সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছিলেন।
এদিকে সম্মেলন ঘরে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহনের বহরে নেতাকর্মীরা অংশ নেন। সেøাগানে সেøাগানে যার যার পক্ষের নেতার নাম ভাসিয়ে অসিত্ব জানান দেন তারা। সম্মেলন শুরুর বেশ আগেই শহীদ সামসুজ্জোহা পার্ক জনস্রোতের রূপ নেয়। তবে শান্তিপূর্ণভাবে সম্মেলন সম্পন্ন হওয়ায় সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
এর আগে মেহেরপুর সদর, মুজিবনগর ও গাংনী উপজেলা এবং মেহেরপুর শহর আওয়ামী লীগের সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। তিন উপজেলা থেকেই জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের জন্য কাউন্সিলর নির্ধারণ করা হয়।