মউক অফিসে উচ্ছৃঙ্খলদের হামলা : সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দুই সাংবাদিক আহত
মেহেরপুর অফিস/বারদী প্রতিনিধি: মেহেরপুরে সদর উপজেলার আমঝুপিতে দুটি মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে হুরমত আলী (৪৫) নামের একজন নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের সদর উপজেলার আমঝুপি মউক অফিসের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উচ্ছৃঙ্খল কিছু মানুষ হামলা চালায় মউক অফিসে। দুর্ঘটনা ও মউক অফিসের হামলার ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে উচ্ছৃঙ্খল কিছু মানুষের হামলার শিকার হয়েছেন চ্যানেল ২৪ মেহেরপুর স্টাফ রিপোর্টার রাশেদুজ্জামান ও জবাবদিহি প্রতিনিধি সিরাজুস দৌলা পাভেল। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত হামলাকারী হিসেবে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হুরমত আলী মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের মোল্লাপাড়ার মৃত আসেদ আলীর ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি মামলায় হাজিরা দিতে বাড়ি থেকে মোটর সাইকেলে মেহেরপুরে যাচ্ছিলেন হুরমত আলী। এসময় মোটর সাইকেলযোগে মউকের সামিউল ইসলাম নামের এক কর্মী অফিসে প্রবেশ করেন। কোনপ্রকার ইন্ডিকেটর বা সিগন্যাল না দিয়ে তিনি রাস্তা থেকে ডানে মউকের দিকে প্রবেশ করায় পেছনে থাকা সামিউল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এসময় আরেকটি মোটরসাইকেল এসে হুমরত আলীর মোটর সাইকেলের সাথে তীব্রবেগে ধাক্কা দেয়। এতে রাস্তায় ছিটকে পড়ে মাথায় রক্তাত্ত জখম হন হুরমত আলী। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে দুর্ঘটনার জন্য মউকের কর্মী সামিউলকে দায়ী করে আশেপাশের লোকজন জড়ো হতে থাকে। এক পর্যায়ে কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোকজন মাউকে অফিসে প্রবেশের চেষ্টা করে এবং হামলা চালায়।
এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সাংবাদিক রাশেদুজ্জামান ক্যামেরা পার্সন ও দুই সহকর্মীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে চলা উত্তেজনাকর পরিস্থিতির ভিডিও ধারণ শুরু করেন। এ সময় কয়েকজন তাকে উদ্দেশ্যে করে মারধর, মোবাইল ও ক্যামেরা ভাঙচুর করে। লাঠি ও রড দিয়ে রাশেদের ওপর দুই দফা হামলা চালানো হয়। তাকে বাঁচাতে ছুটে গেলে সাংবাদিক পাভেলের ওপর হামলা চালায় উচ্ছৃঙ্খল ১০-১২ জন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনায় নিহত হুরমত আলীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে।
পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে দুই সাংবাদিক হামলার শিকারের খবর ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সাংবাদিকদের ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ ও মউক অফিসের সিসিটিভি ফুটেজে নারকীয় বর্বরোচিত হামলার দৃশ্য দেখে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন সাংবাদিকরা। মেহেরপুর প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ ছাড়াও জেলায় কর্মরত বিভিন্ন মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলেই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে সাংবাদিকদের ওপরে হামলার সেই ভিডিও। ঘটনাস্থলের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় প্রতিবাদের ঝড়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার, সদর থানার ওসি, ওসি ডিবিসহ পুলিশের একাধিক টিম। সাংবাদিকদের ওপর হামলার সাথে জড়িত থাকার অপরাধে ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করে পুলিশ। আহত দুই সাংবাদিককে উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এদিকে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদের পর সন্ধ্যায় মেহেরপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন হামলার শিকার সাংবাদিক রাশেদুজ্জামান। হামলার তীব্র প্রতিবাদ আর দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেন সাংবাদিকরা।
সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না উল্লেখ করে মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কনি মিয়া বলেন, মামলা রেকর্ড প্রক্রিয়া চলমান। ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারী কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। দ্রুত তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে মেহেরপুর প্রেসক্লাব থেকে লাগাতার কর্মসূচী ঘোষণা করা হচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে গাংনী ও মুজিবনগর প্রেসক্লাব, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব, চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিক সমিতিসহ পাশর্^বর্তী জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলার সাংবাদিকরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি করেছেন।