স্টাফ রিপোর্টার: দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই অধিক সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়ে মার্কেট, দোকানপাট খুলছে আজ। সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে আজ রোববার থেকে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিংমল, মার্কেটসহ সকল প্রকার বিপণী বিতান খোলা রাখতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবন ও জীবিকা একসঙ্গে চালানোর জন্যই হয়তো সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু কীভাবে সুস্থ থাকবেন, কীভাবে করোনার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবেন, কীভাবে বেঁচে থাকবেন সে সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে হবে। তারা বলেন, মার্কেট খুললেও অতি প্রয়োজন না হলে কারোই কেনাকাটা করতে যাওয়া ঠিক হবে না। মার্কেটে জনসমাগমের ঘনত্ব বেশি হওয়ায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও অনেক বেশি।
চুয়াডাঙ্গায় তবে ১৫ শর্তে দোকান খুলতে পারবেন। গত শুক্রবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলার ব্যবসায়ীদের সাথে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া। সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঈদুল-ফিতরকে সামনে রেখে আজ থেকে সীমিত পরিসরে ব্যবসা বাণিজ্য চালু রাখার স্বার্থে দোকান-পাট খোলা রাখার বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার ব্যবসায়ীদের সাথে অনুষ্ঠিত সভায় নিম্নবর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ নেয়া হয়। ক্রয় বিক্রয়কালে পারস্পরিক ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে হবে। শপিংমল ও দোকান-পাটসমূহ সকাল ১০টা হতে বিকেল ৪টার মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। সকল শপিংমল ও মার্কেটের প্রবেশমুখে আবশ্যিকভাবে জীবাণুনাশক টানেল আগামী এক সপ্তাহের মাঝে স্থাপন করতে হবে। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় দোকানের প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। হাত না ধুয়ে কেউ দোকানে প্রবেশ করতে পারবে না। মাস্ক পরিধান ব্যতীত কোনো ক্রেতা দোকানে প্রবেশ করতে পারবে না। যারা মাস্ক না পড়ে আসবে তাদেরকে মার্কেট থেকে কিনে নিতে হবে। সকল বিক্রেতা/দোকান কর্মচারীকে মাস্ক/হ্যান্ড গ্লাভস পরিধান করতে হবে। নিরাপদ দূরত্ব অর্থাৎ ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে প্রতিটি দোকানে মার্কেটিং করতে হবে এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বেচাকেনা করতে হবে। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে যতোজন ক্রেতাকে সেবা দেয়া সম্ভব তার বেশি ক্রেতা দোকানে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। যে সকল শপিংমলে প্রবেশ ও বাহিরের জন্য পৃথক পথ ব্যবহার করার সুযোগ আছে সে সকল শপিংমলে প্রবেশ ও বাহির হবার জন্য পৃথক পথ ব্যবহার করা হবে। কেনা-কাটা শেষে মার্কেটে অযথা জটলা বা ভিড় সৃষ্টি যেন না হয় সে জন্য মার্কেট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। শপিংমলগুলোতে বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থদের প্রবেশের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করতে হবে। এক এলাকার জনগণ যেন অন্য এলাকায় বা দুই কিলোমিটার দূরত্বের বাইরে শপিং করতে না যায় সে কারণে প্রত্যেক ক্রেতাকে যথাযথ পরিচয়পত্র সাথে রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক ব্যানার যেমন ‘স্বাস্থ্য বিধি না মানলে, মৃত্যু ঝুঁকি আছে’ সম্বলিত ব্যানার ব্যবসায়ীগণ নিজ উদ্যোগে স্থাপন করবে। এছাড়াও ব্যাপক প্রচারের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য বিধি বিষয়ক তথ্যাদি মাইকের মাধ্যমে অনবরত প্রচার করতে হবে। দীর্ঘদিন যাবৎ সকল কর্মকা- বন্ধ থাকায় স্বল্পমূল্যে যেন ক্রেতাগণ পণ্য কিনতে পারেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ন্যূনতম লাভে পণ্য বিক্রয় করতে হবে এবং সকল পণ্য ক্রয়ের মেমো সংরক্ষণ করতে হবে। সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকল উপজেলায় একইভাবে সীমিত পরিসরে দোকান-পাট চালু রাখা যাবে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ইউএনওগণ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সীমিত পরিসরে দোকান-পাট চালু হলেও এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় জনসধারণের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে এবং পূর্বের ন্যায় সকল ইজিবাইক, অটো এবং অন্যান্য অবৈধ যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষেধ। জরুরি সেবা ও কৃষি পণ্য, সার, কীটনাশক, খাদ্য পণ্য, কাঁচা বাজার ও ওষুধের দোকানের ক্ষেত্রে পূর্বে জারীকৃত সকল নির্দেশনা বলবৎ থাকবে। শপিংমলে আগত যানবাহনসমূহকে অবশ্যই জীবাণুমক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। ঈদুল-ফিতরকে সামনে রেখে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার স্বার্থে আজ থেকে সীমিত পরিসরে ব্যবসা বাণিজ্য চালু রাখার স্বার্থে জনসাধারণের সুবিধার কথা বিবেচনা করে উপর্যুক্ত শর্তসাপেক্ষে আকারে দোকান পাট চালু রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। দায়িত্বশীল একজন নাগরিক হিসেবে সরকারি সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে আশা রাখি, আপনারা সবাই স্বাস্থ্যবিধি সতর্ককতার সাথে মেনে চলবেন। বিনা প্রয়োজনে বাইরে আসবেন না, নিজ বাড়িতেই অবস্থান করবেন, আপাতত আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। মনে রাখবেন, ঈদ উপহারের চেয়ে আপনার সুস্থতা আপনার প্রিয়জনের কাছে অনেক দামী। বেঁচে থাকলে করোনা পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবেলা করে আপনার প্রিয়জনের সাথে উপহারসহ দেখা করতে পারবেন।