চুয়াডাঙ্গায় শারদীয় দুর্গাপূজা-২২ উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সম্প্রীতি সভায় পুলিশ সুপার
স্টাফ রিপোর্টার: লাল সবুজ তথা জাতীয় পতাকা সাদৃশ্য উত্তরীয় পরিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণ আবহ সৃষ্টি করে সামাজিক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার। গতকাল সকাল ১১টায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইন ড্রিলশেডে আয়োজিত শারদীয় দুর্গাপূজা-২২ উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আয়োজিত সম্প্রীতি সভার শুরুতেই উপস্থিত সকলকে এ উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়। বলা হয়, মহান মুক্তিযুদ্ধে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই অংশ নিয়ে যেভাবে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন, সেইভাবেই ভাতৃত্ববোধ জাগ্রত রেখে সর্বক্ষেত্রে সম্প্রীতি রক্ষা করতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেনতা সমাজিক সম্প্রীতি রক্ষার প্রেরণা।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় পুলিশ সুপার দৃঢ়তার সাথে বলেন, কোনো প্রকারের গুজব সৃষ্টিকারী বা কারো কোনো উষ্কানীমূলক আচরণ বক্তব্য মেনে নেয়া হবে না। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীর কোনো ধর্ম নেই। ওরা সন্ত্রাসী। নিজ নিজ ধর্ম পালনের মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে পুলিশসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা সর্বক্ষেত্রে সর্বদা সজাগ রয়েছে। কোথাও কোনো প্রকারের গুজব ছড়িয়ে অপ্রীতিকর ঘটনার সূত্রপাত ঘটালে দ্রুত পুলিশে খবর দেয়া প্রত্যেক সুনাগরিকের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। হটকারিতা তথা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরা আর যাই হোক সমাজের কল্যাণ কামনা করে না। কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠি উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে চক্রান্ত সৃষ্টি করলে প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর করতে হবে। নিজের হাতে আইন তুলে নেয়ার মধ্যে কৃতিত্ব থাকে না। এটা আইনত দ-নীয় অপরাধ।
সভার শুরুতে পবিত্র কোরআান থেকে তেলাওয়াত করেন কনস্টেবল আব্দুর রহিম। পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন সজীব সরকার। জেলা ও উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্ট্রান ঐক্যপরিষদ নেতৃবৃন্দ, ওলামা পরিষদ নেতৃবৃন্দ, জেলার ৫টি থানার অফিসার ইনর্চাজ, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার চুয়াডাঙ্গা উপ-পরিচালক জামিল সিদ্দিক, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্ট্রান ঐক্য পরিষদের চুয়াডাঙ্গা সভাপতি ডা. মার্টিন হীরক চৌধুরী, বাংলাদেশ ওলামা পরিষদ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি মুফতি জুনায়েদ আল হাবিবি, পূজা উদযাপন কমিটির চুয়াডাঙ্গার সেক্রেটারির প্রতিনিধি জীবন সেন, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা শাখার সভাপতি নাজমুল হক স্বপন, প্রবীণ সাংবাদিক কালের কণ্ঠ ও ইন্ডিপেডেন্ট টিভি প্রতিনিধি মানিক আকবর, ওলামা পরিষদের চুয়াডাঙ্গা জেলা সেক্রেটারি আলহাজ মুফতি মোস্তফা কামাল কাসেমী, পূজা উদযাপন কমিটির জীবননগর উপজেলা সেক্রেটারি প্রশান্ত কুমার, দামুড়হুদা সেক্রেটারি সঞ্জয় কুমার হালদার, আলমডাঙ্গা সভাপতি অমল কুমার বিশ^াস প্রমুখ।
সভায় পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বক্তব্যে বলেন, পূজা ম-পগুলো থেকে থানার দূরুত্বসহ যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। জেলায় এবার ১২৩টি ম-পে শারদীয় দুর্গা উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। প্রতিটি ম-পেই সিসি ক্যামেরার আওতায় নেয়ার কথা বলা হয়েছে। মহালয়া থেকে শুরু করে প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত পুলিশ সকল প্রকারের দায়িত্ব পালন করবে। পুলিশের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীরও সম্প্রীতি রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রতিটি ম-পে প্রবেশ ও প্রস্থান দার করা সম্ভব হলে খুব ভাল হয়। এতে ভিড় সমালানো সহজ হবে। শারদীয় উৎসব যাতে সার্বজনীন হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে সমাজের সচেতনমহলকে। অবশ্যই সকল ধর্মালম্বিরাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে শব্দ দূষণ রোধে আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া মানবিকতা। এটা সকল মানুষেরই দায়িত্ব।
সভা শেষে পুলিশ লাইন মাঠে অগ্নি নির্বাপক মহড়া পরিদর্শন করে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদস্যরা। আকস্মিক অগ্নিকা- দ্রুত নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পদক্ষেপগুলো এ মহড়ায় তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন এএসপি (দামুড়হুদা সার্কেল) মো. মুন্না বিশ^াস। আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক, অতিরক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল আনিসুজ্জামান লালনসহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ। সভা শেষে পুলিশ সুপার সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করণের জন্য প্রদত্ত লাল সবুজ উত্তরীয়র মর্যদা রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।