স্টাফ রিপোর্টার: চক্ষুর পাশাপাশি কানের চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। নেই কোনো দাঁতের ওপর ডিগ্রি। লোকাল মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট হয়ে চিকিৎসক সেজে রোগীদের সাথে দীর্ঘ ৩৪ বছর প্রতারণা করে আসছিলেন। এমন এক ভুয়া চিকিৎসকের খোঁজ মিলেছে চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদাহ বাজারে অবস্থিত বি.এন.রয় মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল প্র্যাকটিস প্রতিষ্ঠানে। গতকাল রোববার বিকেলে সদর উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক ভুয়া চিকিৎসক লিনটন রয়কে (জিপ্পু) দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সিলগালা করা হয় প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল রোববার বিকেলে সদর উপজেলার ডিঙ্গেদাহ বাজার এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাজহারুল ইসলাম।
ভ্রাম্যমাণ আদালতসূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ৩৪ বছর যাবত দাঁত ও কানের রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসছিল ভুয়া পরিচয়ে এই চিকিৎসক লিনটন রয়কে। তার নেই বিডিএস ডিগ্রি, কোন সার্টিফিকেট বা ডিগ্রি দেখাতে পারেননি তিনি। বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেল্টাল কাউন্সিল থেকে কোনো স্বীকৃতি সনদ নেই তার। এছাড়াও তিনি দক্ষিণ কোরিয়া থেকে যে ডিগ্রি নিয়েছেন সেটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদন নয়। এমবিবিএস ডিগ্রি না থাকলেও চিকিৎসাপত্র লিখতেন তিনি। তার শুধু চক্ষুর ওপর কয়েকটি কোর্সের সার্টিফিকেট আছে। অথচ তার সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে এলএম (ঢাকা) ও ডিটি (দক্ষিণ কোরিয়া)। তিনি শুধু দাঁতের নয়, কানেরও চিকিৎসা দিতেন। লোকাল মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট হলেও দাতের রুট ক্যানাল (পুটিং) করে আসছিলেন। চিকিৎসাপত্রে এন্টিবায়োটিক লিখতেন তিনি। যা একজন এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্তরাই লিখতে পারেন। পরে দোষ স্বীকার করলে তাকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এর ৪৪ ধারায় দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সঙ্গে সিলগালা করা হয় তার প্রতিষ্ঠানটি।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক মাজহারুল ইসলাম বলেন, অপচিকিৎসা দেয়ার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বি.এন.রয় মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল প্র্যাকটিস প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়। দাঁত ও কানের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখতে চাওয়া হয়। তিনি সকল সনদ দেখাতে ব্যর্থ হয়। যা সম্পূর্ণভাবে মানুষের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। পরে তাকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একইসাথে মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল প্র্যাকটিস প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করার আদেশ দেয়া হয়। জনস্বার্থে অভিযান চলমান থাকবে। তিনি আরও বলেন, অপচিকিৎসার কারণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে অনেক মানুষ ভুগছেন। বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। আমরা চুয়াডাঙ্গায় এমন ভুয়া চিকিৎসকদের চিহ্নিত করে অভিযান চালাবো। যেন চুয়াডাঙ্গাবাসী অপচিকিৎসার হাত থেকে রক্ষা পায়। এর আগেও গত কয়েকদিনে দুইজন ভুয়া চিকিৎসককে জরিমানা ও তাদের প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয়েছে। জনস্বার্থে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে, মানুষকে এমন ভুয়া চিকিৎসক সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলার মেডিকেল অফিসার ডা. ফারজানা ববি। সহযোগিতায় ছিলেন সদর থানা পুলিশের একটি দল।
সম্প্রতি ভুয়া চিকিৎসক পরিচয়ে চুয়াডাঙ্গা রেল বাজারে জাম্মি ডেন্টাল কেয়ারের মালিক আহমদ জামিল মুজহারিকে (জাম্মি) দুই লাখ টাকা জরিমানা ও প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয়। এছাড়াও শহরের কোর্টপাড়ায় চক্ষুসেবা কেন্দ্রের মালিক সামসুর রহমানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও প্রতিষ্ঠান সাময়িক বন্ধ করে দেয়া হয়।