স্টাফ রিপোর্টার: পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার অভিঘাতে ভারত-পাক সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এই আবহে সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধির খবর আসছে। নতুন করে সেনা মোতায়েন শুরু করেছে পাকিস্তান। পাক সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির পাক সেনার নির্দিষ্ট কয়েকটি কোর এবং ইউনিটকে সক্রিয় হওয়ার বার্তা দিয়েছেন বলে সে দেশের সংবাদমাধ্যমের একাংশ জানাচ্ছে। ভারতের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ‘যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত’ বলে দাবি করে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী এক টিভি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারত যা কিছু শুরু করবে তার প্রতি আমরা আমাদের প্রতিক্রিয়া পরিমাপ করবো। এটি হবে একটি পরিমাপিত প্রতিক্রিয়া। যদি কোনো সর্বাত্মক আক্রমণ বা এরকম কিছু হয়, তাহলে অবশ্যই একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ হবে। ভারতের পক্ষ থেকে এদিন কড়া ধরনের কোনো ঘোষণা না করা হলেও রাজস্থানে ভারতীয় সেনা যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু করেছে বলে মিডিয়া সূত্রে বলা হয়েছে। ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদি নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় শ্রীনগরে পৌঁছেছেন। সেখানে তিনি স্থানীয় কমান্ডারদের কাছ থেকে নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে খোঁজখবর করেছেন। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাক সেনারা গুলি চালিয়েছে বলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযোগ। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, শুক্রবারও জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর একাধিক স্থানে গুলি চালিয়েছে পাক সেনা। ‘ইন্ডিয়া টুডে’ ভারতীয় সেনার এক আধিকারিককে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, পাক সেনারা সীমান্তে গুলি চালিয়েছে। ভারতীয় সেনারাও পাল্টা গুলি চালিয়েছে। সীমান্তের এপারে ভারতীয়দের মধ্যে কেউ হতাহত হয়নি বলে জানানো হয়েছে। পহেলগাঁও হামলার পর থেকেই জম্মু-কাশ্মীর জুড়ে সেনারা সন্ত্রাসী দমন অভিযান আরও জোরদার করেছে। কাশ্মীরের বান্দিপোরায় নিয়ন্ত্রণরেখার (এলওসি) অদূরে কুলনার বাজিপোরা জঙ্গলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী লস্কর-এ-তৈয়বার শীর্ষস্থানীয় কমান্ডার আলতাফ লাল্লির মৃত্যু হয়েছে। ভারতীয় সেনার সূত্র উদ্ধৃত করে শুক্রবার প্রকাশিত খবরে এই দাবি করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই বান্দিপোরায় কুলনার বাজিপোরা এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছিল সেনাবাহিনী। লুকিয়ে থাকা জঙ্গিরা হঠাৎ নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালাতে থাকে বলে অভিযোগ। ভারতীয় সেনারাও পাল্টা আক্রমণ করে। সে সময়ই মৃত্যু হয় আলতাফের। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের এক আধিকারিক বলেছেন, এটি বাহিনীর বড় সাফল্য। দীর্ঘদিন ধরেই আলতাফের খোঁজ চালানো হচ্ছিলো। এদিকে পহেলগাঁও হত্যাকা-ে যুক্ত থাকার অভিযোগে কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় সন্দেহভাজন দুই সন্ত্রাসবাদীর বাড়ি ভেঙে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী এবং জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন। একজনের নাম আসিফ শেখ এবং অপর জনের নাম আদিল হুসেন ঠোকর। দু’জনেই সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী লস্কর-এ-তৈয়বার সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে। সেনা সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আদিলের বাড়িটি আইইডি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দেয়া হয়। আর শুক্রবার আসিফের বাড়িটি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। পাক সীমান্তে পাহারায় নিযুক্ত বিএসএফ জানিয়েছে, তারা সীমান্ত চেকপোস্টগুলোতে বিটিং রিট্রিট সেরিমনি ছোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেইসঙ্গে পাক কমান্ডারদের সঙ্গে করমর্দন বাতিল করা হয়েছে। বিএসএফের পাঞ্জাব ফ্রন্টিয়ারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপগুলো সীমান্তের আন্তঃসম্পর্কিত শত্রুতা নিয়ে ভারতের গুরুতর উদ্বেগকে প্রতিফলিত করে এবং পুনরায় নিশ্চিত করে যে, শান্তি এবং উস্কানি একসঙ্গে চলতে পারে না। গতকাল শুক্রবার ভারতের সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেখানেই তিনি জানান যে, সংশ্লিষ্ট রাজ্যে কোনো পাকিস্তানের নাগরিক আছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখতে হবে। যদি কেউ থেকে থাকেন, তবে তাকে শনাক্ত করতে হবে এবং পাকিস্তানে ফেরত পাঠাতে হবে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে শাহের এই কথোপকথনের বিষয়ে কেন্দ্র বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। পহেলগাঁও হত্যাকা-ের প্রতিবাদে বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠনের বিক্ষোভ: ভারতের বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠনও ইতিমধ্যেই পহেলগাঁও হত্যাকা-ের প্রতিবাদে পথে নেমেছে। তাদের দাবি, এভাবে নিরীহ পর্যটকদের যারা হত্যা করেছে তারা মানবতার শত্রু। এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি শুক্রবার নিজের বাহুতে কালো ফিতে বেঁধে পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা করেন। এমন কী তিনি এদিন মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কালো আর্ম ব্যান্ড বিতরণ করেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কালো ফিতে পরার জন্য আহ্বান করেছিলেন। কলকাতার রাজাবাজারেও মুসলিমরা এই হত্যাকা-ের প্রতিবাদে সমাবেশ করেন।
কাশ্মীর ইস্যুতে মোদির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি কংগ্রেসের: ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে বন্দুকধারীদের হামলায় পাকিস্তানের সঙ্গে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে তাতে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কংগ্রেস। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার দিল্লিতে কার্যনির্বাহী কমিটির নেতাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। বৈঠকে কাশ্মীর ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারকে পূর্ণ সমর্থন করার সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, তিনি বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাকে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন। বিরোধীদলীয় এই নেতা বলেছেন, এটা দলীয় রাজনীতি করার সময় নয়। এখন সম্মিলিত সংকল্পের সময়, যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার সময়। তিনি যোগ করেন, এই মুহূর্তে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা সবাই সরকারের সঙ্গে একজোট। মল্লিকার্জুন বলেন, তার দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকার যেন হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার করতে সমস্ত শক্তি কাজে লাগায়। বৈঠক শেষে নিহতের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন কংগ্রেসের নেতারা। জম্মু-কাশ্মীর ইস্যুতে পূর্ণ যুদ্ধের হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর: ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির মধ্যকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার দিকে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। তিনি বলেছেন, পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র দু’টির মধ্যে পূর্ণমাত্রার সংঘর্ষের সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্ব নেতাদের ‘চিন্তিত’ হওয়া উচিত। খাজা আসিফ সতর্ক করে বলেছেন যে, ভারতের দখলে থাকা জম্মু ও কাশ্মীরে (আইওজেকে) প্রাণঘাতী গুলিবর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়তে পারে এবং তা ‘পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে’ রূপ নিতে পারে। বৃটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
মঙ্গলবার ভারত-অধিকৃত পহেলগাঁওয়ে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ পর্যটক নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনায় জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। একতরফাভাবে ওই হামলার পুরো দায় ইসলামাবাদের ওপর চাপিয়েছে দিল্লি। তবে ইসলামাবাদ ভারতের দাবি দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে এবং একে ‘ভুয়া’ বলে অভিহিত করেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন যে, তাদের সেনাবাহিনী যেকোনো পরিণতির জন্য প্রস্তুত। তিনি বলেন, ভারতের পক্ষ থেকে যা করা হবে আমরাও সে অনুযায়ী পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাবো। আমাদের প্রতিক্রিয়া হবে সমপরিমাণ। ভারত যদি পূর্ণমাত্রার হামলা শুরু করে তাহলে পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালাবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আসিফ। তবে চলমান উত্তেজনা নিরসনে এখনো আলোচনার পথ বন্ধ হয়নি বলে মনে করেন তিনি। ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে বিশ্ব নেতাদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত কিনা জানতে চাইলে আসিফ বলেন, দু’টি পারমাণবিক শক্তির মধ্যে সংঘর্ষ সবসময়ই চিন্তার বিষয়। যদি পরিস্থিতি খারাপের দিকে চলে যায়, তাহলে সংঘর্ষের বেশ দুঃখজনক পরিণতি হতে পারে। এই হামলার জন্য ভারতকে দায়ী করার বিষয়ে জানতে চাইলে- উত্তেজনা বৃদ্ধি সত্ত্বেও আসিফ বলেন, হ্যাঁ, অবশ্যই! এমন পরিস্থিতির জন্য তারাই দায়ী। এখন উচিত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা। এর আগে, আসিফ বলেছিলেন যে, পাকিস্তানের পহেলগাঁওয়ের হামলার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা, পাকিস্তান সর্বত্র সবধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে। তিনি বলেন, ভারতকে পহেলগাঁওয়ের ঘটনার তদন্ত করা উচিত। কেননা, শুধু অভিযোগ করেই তারা এর দায় এড়াতে পারে না।
চুয়াডাঙ্গার হরিশপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির আহম্মেদ আর নেই
বেগমপুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের হরিশপুর গ্রামের দায়েম ম-লের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির আহম্মেদ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তিনি সহধর্মীনি, ৪ ছেলে ও ২ মেয়েসহ বহুগুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সঠিক সময় জানা না গেলেও আজ শনিবার সকালের দিকে গার্ড অব অনারের পর নামাজে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হবে বলে জানাগেছে।