ভারতে পালিয়ে থাকা চরমপন্থীদের সাথে যোগসাজশ : হোয়াটসঅ্যাপে চলছে গোপন মিটিং

চুয়াডাঙ্গায় অপারেশন ডেভিল হান্টের মধ্যে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠছে আওয়ামী লীগ

স্টাফ রিপোর্টার: সারাদেশে চলছে অপারেশন ডেভিল হান্ট। কিন্তু থেমে নেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র। কর্মীদের নিয়ে নিয়মিত গোপন বৈঠক করছেন পদধারী নেতারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপেও চলছে গ্রুপ মিটিং। সূত্র বলছে, ভারতে পালিয়ে থাকা চরমপন্থীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। চরমপন্থীদের যোগসাজশে বড় ধরণের নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এদিকে, গত কয়েক মাসে চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন স্থানে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, বোমা উদ্ধার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গতকাল সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। নজরদারি বাড়ানো হয়েছে সীমান্ত এলাকায়। পালিয়ে যাওয়া সন্ত্রাসীরা ভারত থেকে যেনো দেশে ফিরতে না পারে সে লক্ষ্যে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি টহল জোরদার করা হয়েছে বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় অপারেশন ডেভিল হান্টে গত কয়েক দিনে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের ছোট পদে থাকা খুব কম সংখ্যক নেতা ও সক্রিয় কর্মী আটক হয়েছেন। এখনও কোনো বড় পদধারী নেতাকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। যদিও তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় রয়েছে অসংখ্য মামলা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলাকারীরাও রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। গত ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী গাঁ ঢাকা দিলেও আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু মুসা, জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এসএএম জাকারিয়া আলম, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক, দামুড়হুদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল কবীর ইউসুফ, নতিপোতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল হক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, জুড়ানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তালেবসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা প্রতিদিন গোপন বৈঠক করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। নিয়মিত হোয়াটসঅ্যাপে দলীয় কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা। তারা বহাল তবিয়তে চলাফেরা করলেও তাদের আটক করছে না পুলিশ। দামুড়হুদার আওয়ামী লীগের ওই নেতারা তাদের কর্মীদের বলেছেন, পুলিশকে ম্যানেজ করে তারা চলাফেরা করছেন। পুলিশ তাদের কিছু বলবে না। অপারেশন ডেভিল হান্টের মধ্যে পুলিশের এমন ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সদস্য সচিব সাফফাতুল ইসলাম বলেন, স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশত্যাগের পরেও তার দোসররা বিভিন্নভাবে দেশের সর্বত্র পরিস্থিতি ঘোলাটে এবং বিভিন্ন ধরণের অপকর্ম চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী দেশের সার্বিক অবস্থা স্থিতিশীল অর্থাৎ সন্ত্রাসী কর্মকা-, খুন, গুম, ধর্ষণ নির্মুল হোক প্রশাসনের কাছে এই চাওয়াটা শুধুমাত্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাওয়া না। এটা এখন সাধারণ জনগণের চাওয়া। তিনি বলেন, বিগত দিনের থেকে বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রশাসনের অবনতি হয়েছে। দামুড়হুদাতে ছিনতাই-ডাকাতি, আলমডাঙ্গা রোডে গাছ ফেলে ডাকাতি এছাড়াও বিগত কয়েকদিন ধরে কেরু কোম্পানিতে প্রতিদিন ৩-৪ এর অধিক বোম উদ্ধার, এসব কিছুকেই আমরা প্রশাসনের অবহেলাকেই দায়ী করছি। তিনি আরও বলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি খুনি হাসিনার লাইভ বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে শেখ মুজিবের ধানম-ি ৩২ এর বাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। সারাদেশে একই ভাবে সাধারণ মানুষ স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস এবং শেখ মুজিবের ম্যুরাল মূর্তি ভেঙে ফেলে। চুয়াডাঙ্গাতেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিন্তু ৩-৪ দিন না যেতেই আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসের সিঁড়ির কাছে মধ্যরাতে লোহার শিক লাগিয়ে দিয়েছে খুনি হাসিনার দোসররা। শহরের প্রাণকেন্দ্রে যদি স্বৈরাচারের দোসররা তাদের দলীয় কার্যালয় ভেঙ্গে ফেলার পরেও এই ব্যবস্থাপনা করতে পারে প্রশাসনের নাকের ডগা থেকে, তাহলে বাকি যায়গার অবস্থা কতটা ভয়াবহ তা আঁচ করা সম্ভব। স্বৈরাচারি দোসরদের পরিকল্পনা নীলনকশা যতই গভীর হোক না কেন? তা নস্যাৎ করে দেবে রাজপথে থাকা ছাত্র-জনতা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আহ্বায়ক আসলাম হোসেন বলেন, আওয়ামীলীগ একটি ফ্যাসিস্ট দল। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মেয়েদের কুপিয়ে ছিল। আমরা তাদের বিচার চাই। এখনও পর্যন্ত তাদের আটক করা হচ্ছে না কেন? আমরা প্রশাসনের কাছে জবাব চাই। পাশাপাশি প্রশাসন যদি তাদের সাথে সম্পর্ক রাখে বা রাখার চেষ্টা করে তবে তাদের জন্য শুভকর হবে না। জনগণ এখনও মাঠে আছে। শিক্ষার্থীরা এখনও মাঠে আছে। এর সঠিক জবাব শিক্ষার্থীরা মাঠে থেকে দিবে। শিক্ষার্থীরা এখনও ঐক্যবদ্ধ আছে। কোনো প্রমাণ যদি শিক্ষার্থীরা পায় তার দায়-দায়িত্ব প্রশাসনকেই নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, দেশের যে গোয়েন্দা সংস্থা আছে ডিজিএফআই, এনএসআই। আমরা দেখেছি আন্দোলনের সময় তারা আমাদের খুব খোঁজাখুঁজি করতো। আমাদেরকে ধরার জন্য খোঁজখবর নিতো। এখন তারা কেন কাজ করছে না? এটা জনগনের প্রশ্ন। যদি তারা কাজে অবহেলা করে তাহলে এই ডিজিএফআই, এনএসআই এর সদস্যদের পরিবর্তন করে নতুন করে নিয়োগ দেয়া হোক। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।