চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় বাড়িতে ঢুকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ভাইকে অপহরণ : পিছু নিলেন বোন
দর্শনা অফিস: চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় দুর্বৃত্তদের হাত থেকে ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন মিম খাতুন ওরফে মনজুরা (৩০) নামে এক নারী। গতকাল রোববার ভোরে দর্শনা পৌর এলাকার মোহাম্মদপুরের একটি বেগুনক্ষেত থেকে তার বিবস্ত্র মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই আলমগীরকেও গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত মনজুরা দর্শনা পৌর এলাকার মোহাম্মদপুর মহল্লার মৃত আরমান হোসেনের মেয়ে।
স্থানীয়রা জানায়, গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কয়েকজন দুর্বৃত্ত আলমগীর হোসেনের বাড়িতে আসে। দুর্বৃত্তরা আলমগীরকে বাড়ি থেকে হাত-পা বেঁধে তুলে নিয়ে পার্শ্ববর্তী মাঠের দিকে যায়। এ সময় আলমগীরের বোন মনজুরা খাতুন প্রতিবাদ করায় দুর্বৃত্তরা তাকেও তুলে নিয়ে যায়। প্রতিবেশীরা বিষয়টি টের পেয়ে থানায় খবর দিলে অপহৃতদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করে পুলিশ। ওই রাতেই আলমগীরকে হাত-পা বাঁধা ও জখম অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। তবে নিখোঁজ থাকেন মনজুরা। ভোরে স্থানীয়রা একটি বেগুনক্ষেতে মনজুরার রক্তাক্ত ও বিবস্ত্র লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মনজুরার মরদেহ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা মর্গে পাঠায়।
ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন জানান, বেশ কয়েক দিন ধরে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন মোবাইলফোনে তাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। শনিবার রাতে নামাজের জন্য বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় কয়েকজন অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত তাকে হাত-পা বেঁধে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় তার বোন দুর্বৃত্তদের পিছু নেয়। তিনি জানান, তার আগের পক্ষের স্ত্রীর পরিবারের লোকজন তাকে বিভিন্ন সময় ফোনে হুমকি দিয়ে আসছিলো। এ বিষয়ে দর্শনা থানায় তিনি একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তিনি ধারণা করছেন, এ ঘটনার পেছনে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন জড়িত থাকতে পারে।
জানা গেছে, গত পরশু শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ৫/৬ জনের মুখোশধারী দুর্বৃত্ত হানা দেয় দর্শনা মোহাম্মদপুর মসজিদপাড়ার আরমান আলী ওরফে বড় মিয়ার ছেলে আলমগীর কবীরের বাড়িতে। আলমগীরের পরিবার ও প্রতিবেশীদের কেউ কেউ বলেছে, মুখোশধারীরা বাড়িতে ঢুকে ধারালো অস্ত্রের অপহরণের চেষ্টা করে আলমগীর কবীরকে (৩২)। এ সময় বোন মনজুরা আক্তার ওরফে মিম অপহরণকারীদের প্রতিরোধের চেষ্টা করে। বাড়ি থেকে প্রায় ৫০ গজ অদুরে একটি বেগুন ক্ষেত্রে আলমগীরকে আহত অবস্থায় ফেলে মিমকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। আহত আলমগীরকে প্রতিবেশীরা উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নেয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। মহল্লাবাসী খবর দেয় দর্শনা থানা পুলিশকে। পুলিশ রাতভর অপহরণকারীদের হন্যে হয়ে খুঁজেছে। এদিকে গতকাল রোববার ভোরে আলমগীরকে ফেলে রাখা সেই বেগুন ক্ষেতেই মহল্লাবাসী পড়ে থাকতে দেখে মনজুয়ারা ওরফে মিমের মরদেহ। বিবস্ত্র অবস্থায় মিম পড়ে ছিলো বলে কেউ কেউ বললেও পুলিশসহ মহল্লাবাসী পরে দেখতে পায় পোশাক পরা অবস্থাতেই। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়ে গলা কেটে ও বাম চোখে আঘাত করে মিমকে হত্যা করা হয়। খবর পেয় ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) নিজাম উদ্দিন আল আজাদ, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জাকিয়া সুলতানা, চুয়াডাঙ্গা বিশেষ শাখার প্রধান কর্মকর্তা আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান, গোয়েন্দা শাখার ইন্সপেক্টর ফেরদৌস ওয়াহেদ, দর্শনা থানার ওসি নিরব হোসেন, ইন্সপেক্টর (অপারেশন) শফিউল আলমসহ পিআইবি ও ঝিনাইদাহ সিআইডি অপারেশন ক্রাইম জোনের সদস্যরা। দুপুর ১টার দিকে পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে উদ্ধার করে নিয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ হত্যাকা-ের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। তবে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের সার্বিক দিকনির্দেশনায় পুলিশের একাধিক দল হত্যাকা- রহস্য উৎঘাটনে মাঠে নেমেছে।
এদিকে সামাজিক যোগাযেগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুকে আহত আলমগীর কবিরের আইডি থেকে সম্প্রতি একটি কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। সাথী নামের জনৈক এক নারীর সাথে আলমগীর কবীরকে অকথ্য ভাষায় রেকর্ডটি আসলে কেন কি কারণে পোস্ট করা হয়েছে তাও খতিয়ে দেখতে পুলিশ। মোহাম্মদপুরবাসী প্রকৃত হত্যাকারীকে চিহ্নিত পূর্বক গ্রেফতারের জোর দাবি তুলেছে। সেই সাথে হত্যার রহস্য উন্মোচনেও মহল্লাবাসী সোচ্চার অবস্থানে। তবে গতকাল দিনভর আলমগীর কবীরের মাসহ পরিবারের কাউকে বাড়িতে পায়নি পুলিশ। স্বজনেরা বলেছে তার মা ছেলে আলমগীরের কাছে হাসপাতালে রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা ও জীবননগর সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা জানান, ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকা- ঘটতে পারে। ঘটনার রহস্য উন্মোচনের জন্য এরই মধ্যে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। শিগগিরই আসামিদের আইনের আওতায় আনা হবে।