ভরণপোষণের থেকে রেহাই পেতে বাবার কাণ্ড

চুয়াডাঙ্গা আদালতে চত্বরে বাবার দেয়া বিষ মেশানো চিপস খেয়ে শিশুকন্যা মৃত্যুশয্যায়

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা আদালত চত্বরে বাবা শাকিল আহমেদের বিরুদ্ধে নিজের চার বছর বয়সী মেয়ে মারিয়া খাতুনকে চিপসের সঙ্গে বিষ খাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে। গুরুতর অবস্থায় মারিয়াকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে চুয়াডাঙ্গা আদালত চত্বরে সবার অগোচরে এ ঘটনা ঘটায় বাবা শাকিল।

শিশুটির শারীরিক অবস্থার সম্পর্কে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের হাসানুর রহমান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে জানিয়েছেন, গতকাল দুপুরে শিশু মারিয়াকে জরুরি বিভাগে যখন নিয়ে আসা হয় তখন তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিলো। সাধারণত কেউ বিষপান করলে যে সব সিমটম থাকে, শিশুটির বমির ধরণ দেখে সেটিই মনে হয়েছে। শিশুটির মায়ের দাবি, ওর বাবা চিপসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে মেয়েকে খাওয়ানো হয়েছে। শিশুটির শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিশুটি সবুজ ধরণের বমি করছিলো। অনেক বেশি বমি হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে খারাপ কিছু খেয়েছে শিশুটি। তবে কেউ খাওয়ে দিয়েছে নাকি শিশুটি নিজে খেয়েছে এটা জানিনা। তবে শিশুটি শঙ্কামুক্ত নয়। ভর্তি করে আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।

জানা যায়, বেশ কয়েক বছর আগে দামুড়হুদার উপজেলার নতিপোতা ইউনিয়নের হোগলডাঙ্গা গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে শাকিল আহমেদের সঙ্গে একই উপজেলার রুশিয়া খাতুনের বিয়ে হয়। বিভিন্ন কারণে গত ৩ বছর তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। দামুড়হুদায় পারিবারিক আদালতে একটি মামলাও চলমান রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রুশিয়া খাতুনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাজমুল হাসান লাভলু।

রুশিয়া খাতুন দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে অভিযোগ করে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার আদালতের আসার নির্ধারিত দিন ছিলো। সেই মোতাবেক মেয়ে মারিয়াকে নিয়ে আদালতে আসি। অপর দিকে মেয়ের বাবা শাকিলও আসেন। সকলের অগোচলে মেয়েকে ডেকে নিয়ে চিপসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাওয়ায়। এরপরই মেয়ে আমাকে বলে তার মাথা ঘোরছে। সাথে সাথে নীল রঙের বমি ও মলত্যাগ শুরু করে মেয়ে। শরীর নেতিয়ে যেতে শুরু করলে মুহুরি কবির উদ্দিনের সহযোগীতায় মারিয়াকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রুশিয়া খাতুন আরও বলেন, আমি মেয়ের বাবার প্যান্টের পকেটে একটি বোতল দেখেছি। কিসের বোতল জিজ্ঞাসা করায় সে বললো এটা খেতে হয় না। এটাই বিষের বোতল ছিলো।

রুশিয়া খাতুনের আইনজীবী নাজমুল হাসান লাভলু দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি। মূলত ভরণপোষণ থেকে রেহাই পেতেই আদালত প্রাঙ্গনে চিপসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে নিজ মেয়েকে হত্যার চেষ্টা করেন শালিক। ২০২২ সালে দামুড়হুদা পারিবারিক আদালতে ভরণপোষণের মামলা করে রুশিয়া। গতকাল সেই মামলার কিস্তি বাবদ ৮ হাজার টাকাও পরিশোধ করেছে। মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত এই কিস্তির দিতে হবে। এই কারণেই মেয়েকে চিপসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে হত্যা চেষ্টা করেন শাকিল।

এদিকে ঘটনার পরই অভিযুক্ত শাকিল সটকে পড়েন। এমনকি বাড়ির লোকজন জানেনা তার খবর। তার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারও বন্ধ পাওয়া যায়।

নতিপোতা ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং (ইউপি) ওয়ার্ড সদস্য নজরুল ইসলামের সহযোগীতায় কথা হয় অভিযুক্ত শাকিল আহমেদের বাবা সামশুল আলমের সঙ্গে।

তিনি দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আমি আমার ভাগ্নির কাছ থেকে এ ঘটনাটি শুনেছি। সন্তান যতই খারাপ হোক না কেন একজন বাবা তার সন্তানকে হত্যা করতে চাইবে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ঘটনার পর থেকে ছেলে শাকিল বাড়িতে নেই।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মাহব্বুর রহমান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নয়। সংবাদকর্মীরা আমাকে অবগত করেছেন। তবে বিষয়টি খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

Comments (0)
Add Comment