আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বিক্রি উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হলে পরিণতি ভালো হবে না বলে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মানুষের ওপর যাদের আস্থা ও বিশ্বাস নেই, দল হিসেবে যারা সুসংগঠিত না, তারাই নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে যাচ্ছে। নির্বাচন বানচাল করলে একটি দেশের অনেক ক্ষতি হয়। জনগণের ভোটের অধিকার অনেক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা চাই জনগণের ভোটের অধিকারটা অব্যাহত থাকুক। ভোটের মধ্যদিয়ে সরকার পরিবর্তন হবে। আমাদের অনেক কষ্টে অর্জিত এই গণতান্ত্রিক ধারাটা যেন কেউ ব্যাহত করতে না পারে। গতকাল রাজধানীর ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্থাপিত ১০টি বুথ থেকে দলের মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হচ্ছে। সব বিভাগের জন্য একটি করে বুথ রাখা হলেও ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য দুটি করে বুথ করা হয়েছে। আগামী ২শ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সরাসরি ও অনলাইনে মনোনয়নপত্র ক্রয় ও জমা দিতে পারবেন। গতকাল শনিবার মনোনয়ন বিক্রির প্রথমে দিনে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে মনোনয়নপত্র কিনেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। তার পক্ষে মনোনয়নপত্র কেনেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন। এ সময় তার সাথে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দীন হেলা, শহিদুল ইসলাম সাহান, জেহালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসান উজ্জ জামান হান্নান প্রমুখ। এছাড়াও মনোনয়নপত্র কিনেছেন সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শিরীন নাঈম পুনম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য মিনিস্টার মাইওয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ রাজ্জাক খান রাজ ও চুয়াডাঙ্গা জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি আফরোজা পারভীন। এদিকে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তুলেছেন দামুড়হুদার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা এসএএম জাকারিয়া আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি নজরুল মল্লিক, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাড. শাহরিয়ার কবীর ও আলহাজ সাদিকুর রহমান বকুল। আজ রোববার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারেন এ আসনের পরপর তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর তার পক্ষে গোপালগঞ্জ-৩ আসনে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ। এ সময় গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদ আলী খান এবং সাধারণ সম্পাদক বিএম সাহাব উদ্দিন আজম উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা ছাড়াও এদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ শীর্ষ অনেক নেতাই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। প্রথম দিনে মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৭৪টি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন ঠেকাতে ২০১৩, ২০১৪ সালে অগ্নিসন্ত্রাসে বহু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এটা কোন ধরনের রাজনীতি যে অগ্নিসন্ত্রাস করে জাতীয় সম্পদ ও ব্যক্তিগত সম্পদকে নষ্ট করা? ধ্বংসাত্মক কাজ করে নির্বাচন বানচাল করা হয় অর্থাৎ গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করতে চায় তারা। এদের ব্যাপারে দেশের মানুষের কাছে আহ্বান থাকবে-যারা এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ করছে, জাতীয় সম্পদ নষ্ট করছে, আগুন দিয়ে পোড়াচ্ছে, সাধারণ মানুষের ওপর পেট্রোল বোমা মারছে অথবা আগুন দিয়ে পোড়াচ্ছে, এদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা ভেবেছিলাম যে, অন্যান্য দলও এভাবে নির্বাচনে আসবে। তবে যে সমস্ত দল নির্বাচনে আসার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদেরকে সাধুবাদ জানাই, ধন্যবাদ জানাই। শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। আগামীতে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশে গড়ে তুলবো। আমি সবার দোয়া চাই, দেশবাসীর দোয়া চাই যেন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনটা হয়।
তিনি বলেন, নির্বাচন যারা বানচাল করতে চায়, অগ্নিসন্ত্রাস করে, মানুষকে পুড়িয়ে মারে, আমাদের এতো সুন্দর রাস্তাঘাট, মেট্রোরেল থেকে শুরু করে থার্ড টার্মিনাল সবকিছু যারা ধ্বংস করতে যাবে, আমি জনগণকে আহ্বান করবো তাদেরকে প্রতিরোধ করতে। হরতাল ডেকে আজকে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা নষ্ট, মানুষকে অত্যাচার করেই যেন এই বিএনপি-জামায়াত আনন্দ পায়, এটিই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্যের বিষয়। তিনি বলেন, ভোটের অধিকার দেশবাসীর অধিকার। তারা ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের নেতা নির্বাচিত করবে। যারা সংসদে বসবে, আইন পাস করবে, রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। কাজেই এটা হচ্ছে জনগণের অধিকার। জনগণের অধিকার যারা কাটতে চেষ্টা করবে, জনগণের অধিকার কেড়ে নেয়ার জন্য যারা অগ্নিসন্ত্রাস করবে জনগণই তাদের প্রতিরোধ করবেন, আমি জনগণের কাছে সেই আহ্বান জানাই। এ সময় সংসদ সদস্যদের নম্বর অনুযায়ী ফরমগুলো সাজানো হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এরপর দলের সংসদীয় বোর্ডে উপস্থাপন করবে। সংসদীয় বোর্ড বসে প্রার্থীর যোগ্যতা দেখে, জনপ্রিয়তা বা কার্যক্রমসহ সব বিষয় বিবেচনা নিয়েই নমিনেশন দেবে। আওয়ামী লীগ সবসময় অত্যন্ত সুগঠিত ও সুন্দরভাবে প্রত্যেকটা কাজ করে থাকে, বিশেষ করে দলীয় কাজগুলো সব সময় আমাদের গঠনতন্ত্র মেনে হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এমন একটি সংগঠন, যে সংগঠনের জন্ম হয়েছিল দুঃখী মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে। শোষিত-বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য ১৯৪৯ সালে এই সংগঠনের জন্ম। জন্মলগ্ন থেকে আওয়ামী লীগ তার গঠনতন্ত্র মেনে চলে, দেশের সংবিধান মেনে চলে, প্রতিটি কাজ অত্যন্ত সুচারুভাবে করে। শেখ হাসিনা বলেন, যারাই প্রার্থী হবেন সবাই যোগ্য। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু একটি সিট দিতে হবে একজনকে, একজনকে বাছাই করা বোর্ডের কাজ, আমরা তৃণমূল থেকেও মতামত নিই, আমাদের ওরকম একটি পদ্ধতিও করা আছে। তৃণমূল থেকে আমাদের জানানো হয়, সেটি দেখে আমরা প্রার্থী নির্বাচন করবো এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। এদিকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি উপলক্ষ্যে সকাল থেকেই নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর ছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও তার আশপাশ। মিছিলে মিছিলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন নেতাকর্মীরা। ঢাকঢোল পিটিয়ে নৌকা সাজিয়ে মিছিল নিয়ে আসেন প্রার্থীরা। প্রার্থীদের চাপে বেশ গলদঘর্ম হতে হয়েছে ফরম বিক্রেতাদের। দফায় দফায় মাইকিং করে নির্দেশনা দিয়েও সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের। প্রথম দিনেই ৩০০ আসনের বিপরীতে ১ হাজার ৭৪টি মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। সন্ধ্যায় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, সশরীরে উপস্থিত হয়ে ১ হাজার ৬০ জন দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ২১৪, চট্টগ্রাম ২০১, ময়মনসিংহ ১০৫, সিলেট ৫৫, খুলনা ১২৫, বরিশাল ৭৫, রংপুর ১০৯ ও রাজশাহী ১৭৬ জন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আর অনলাইনে ১৪ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। মোট ১ হাজার ৭৪ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।