প্রতীক্ষার প্রহর শেষে প্রশান্তির বৃষ্টি নামলো চুয়াডাঙ্গায়

দাবদাহ বিদায় নিয়েছে : এবার শুরু কালবৈশাখীর দাপট

স্টাফ রিপোর্টার: প্রচ- তাপদাহের পর প্রশান্তির বৃষ্টি নেমেছে চুয়াডাঙ্গায়। টানা ২২ দিনের মৃদু, মাঝারি ও তীব্র দাবদাহ শেষে চুয়াডাঙ্গায় কাক্সিক্ষত বৃষ্টির দেখা মিলেছে। গতকাল সোমবার ৩টার পর ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রায় আধঘণ্টা ধরে বৃষ্টিপাত হয়েছে। কোথাও থেমে থেমে, আবার কোথাও একটানা বৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন পর এই বৃষ্টি ফসলের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখছে কৃষি বিভাগ। একটানা ২২ দিন প্রচ- তাপে পুড়তে হয়েছে চুয়াডাঙ্গাবাসীকে। তাই বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় ছিলেন এ অঞ্চলের মানুষ। তবে গত দুদিন ধরে আকাশ মেঘলা ছিলো। অবশেষে গতকাল নামলো স্বস্তির বৃষ্টি।

চুয়াডাঙ্গার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, গতকাল সোমবার বেলা ২টা ৫০ মিনিট থেকে বেলা ৩টা ২০ মিনিট পর্যন্ত জেলায় ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে ১ এপ্রিল ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিলো। জেলায় একটানা ১৫ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, বৃষ্টির সময় সম্ভাব্য বজ্রপাতের আশঙ্কায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ও সতর্কতার কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হননি।

চুয়াডাঙ্গা খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিভাস কুমার সাহা বলেন, এই বৃষ্টিতে বর্তমানে মাঠে থাকা ধানের জন্য সেচ খরচ যেমন বেঁচে গেলো, তেমনি পাট আবাদের জন্য জমি উপযুক্ত হতে বড় ভূমিকা রাখবে।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, ১ এপ্রিল ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেও ২ এপ্রিল থেকে জেলাজুড়ে শুরু হয় দাবদাহ। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ২ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত একটানা ১৫ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো চুয়াডাঙ্গা জেলায়। এখানে তাপমাত্রা উঠেছিলো ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। ১৭ এপ্রিল মরসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত তিন দিনের মেঘ আর বৃষ্টির দাপটে সারা দেশ থেকে দাবদাহ বিদায় নিয়েছে। এখন শুরু হচ্ছে কালবৈশাখীর দাপট। গতকাল সোমবার দুপুর থেকেই দেশের দক্ষিণ পশ্চিমের জেলাগুলোতে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ওই বাতাস দেশের মধ্যাঞ্চলের দিকে এগিয়ে আসছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে দমকা হাওয়া আর কিছুটা বৃষ্টির দাপট থাকতে পারে। তবে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারও রোদ বেড়ে গিয়ে গরম কিছুটা বাড়তে পারে। দুই দিন এ ধরনের আবহাওয়া থাকার পর বুধবার থেকে আবারও বৃষ্টি বাড়তে শুরু করবে। এর মধ্যে আগামী কয়েক দিন বজ্রপাত থাকতে পারে। বিশেষ করে হাওর এলাকায় বজ্রপাতের পরিমাণ বছরের এই সময়টাতে বেশি থাকে, আগামী কয়েক দিন বজ্রপাত বেশি থাকতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, দেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে এরই মধ্যে মেঘ, বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া শুরু হয়ে গেছে। বিকেল থেকে রাতের মধ্যে রাজধানীর কয়েকটি স্থানে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে আগামী দুই দিন দিনে গরম বাড়তে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সোমবার দুপুর থেকে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, খুলনা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোয় বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হবে।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, গত শনি ও রোববার রাজধানীর আকাশে কালো মেঘ আর দমকা হাওয়ার যে দাপট ছিলো, তা আজ (গতকাল) সোমবার সকাল থেকে বিদায় নিয়েছিলো। ফলে গতকালের তুলনায় আজ গরম কিছুটা বেশি ছিলো।

এদিকে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলায়সোমবার সকাল থেকে ঝুম বৃষ্টি হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে, ৫৩ মিলিমিটার। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গলে ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর বাইরে দেশের ১২টি জেলায় সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে আজও দেশের বেশির ভাগ জায়গায় গরম তুলনামূলক কম ছিলো।

গত ২ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া দাবদাহ এবার টানা ২০ দিন দেশের কোথাও না কোথাও ছিল। গত শুক্রবার ঈদের আগের দিন থেকে আকাশে মেঘ বেড়ে গরম কমতে থাকে। পরের দুই দিন তাপমাত্রা আরও কমে দাবদাহ সারা দেশ থেকেই বিদায় নেয়। গতকাল দেশের বিভিন্ন এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যায়।

Comments (0)
Add Comment