প্রকৃতি পুড়ছে গ্রীষ্মের তাপদাহে : হাঁপিয়ে উঠেছে খেটে খাওয়া মানুষ

টানা চারদিন চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা : অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় টানা চারদিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবারও ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, যা দেশের সর্বোচ্চ। এর আগে গত শনিবার ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রোববার ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সোমবার ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, সাধারণত তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মৃদু তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা যদি ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে, তবে তাকে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলে তা হয় প্রচ- তাপপ্রবাহ। ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলে তা হয় চরম তাপপ্রবাহ। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বলেন, গত তিনদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছে। আজও ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এটা এখনো দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিলো ১৮ শতাংশ। আগামী তিন থেকে চারদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় দিনের তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। তিনি আরও বলেন, সাগরের লঘুচাপের কারণেই তাপমাত্রা বেড়েছে। বৃষ্টিপাত হলে তবেই তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে আসবে। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত বছরের ১ থেকে ৮ মে পর্যন্ত আটদিন তাপমাত্রা ২৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছিলো। ওই আট দিনের গড় তাপমাত্রা ছিলো ৩৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এ বছরের মে মাসের প্রথম ৯ দিন তাপমাত্রা ওঠানামা করেছে ৩১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ মাসের ৯ দিনের গড় তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের একটু বেশি। এছাড়া ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছিলো। ওই বছর এপ্রিল মাসের গড় তাপমাত্রা ছিলো ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছে। এবার এপ্রিল মাসের গড় তাপমাত্রা ছিলো ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে, চৈত্রের দাবদাহের মতো এই বৈশাখের গরমেও অতিষ্ঠ জনজীবন। এখন বৈশাখী ঝড়-বৃষ্টিতে স্বস্তি ফেরার প্রার্থনা সবার। প্রকৃতি পুড়ছে গ্রীষ্মের তাপদাহে। মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে হাঁপিয়ে উঠেছে খেটে খাওয়া মানুষ। অসহনীয় গরম আর তাপদাহে বিমর্ষ প্রাণ প্রকৃতি। তীব্র দাবদাহে এ জেলার খেটে খাওয়া মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। তীব্র গরম ও রোদের তাপের কারণে শ্রমিক, দিনমজুর, ভ্যান-রিকশা চালকরা কাজ করতে না পেরে অলস সময়ও পার করছেন। একটু প্রশান্তির খোঁজে গাছের ছায়া ও ঠা-া পরিবেশে স্বস্তি খুঁজছে স্বল্প আয়ের মানুষরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা ঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ছে। আবার অনেকে জরুরি প্রয়োজন ও জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচ- দাবদাহ উপেক্ষা করে কাজে বের হচ্ছেন। জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঠ থেকে ধান সংগ্রহ ও মাড়াইয়ের কাজ চলছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আমিরপুর গ্রামের কৃষক হেলাল আলী বলেন, ‘কয়দিন ধরে যেরাম গরম, মাঠে টিকা যাচ্ছে না। এরাম চললি সব কাজকাম ছেড়ে বাড়ি বইসে থাকতি হবে।’

Comments (0)
Add Comment