ডিসি-এসপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন : পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের ঈগল মার্কা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালার নির্বাচনী প্রচারণায় বাঁধা প্রদান ও হামলার অভিযোগ উঠেছে নৌকা প্রতীকের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। গতকাল শনিবার রাত ৮টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদরের শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের নতুন ভান্ডারদহ গ্রামের মোড়ে দিলীপ কুমারের পথসভা ঘিরে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় স্বতন্ত্রপ্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে অস্ত্রে মুখে অপহরণের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন চুয়াডাঙ্গা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা, পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান (পিপিএম-সেবা), সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা-তুজ-জোহরা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাজ্জাদ হোসেন, সদর থানার ওসিসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের একাধিক টিম। সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতেই ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পরে মুহূর্তেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। অপরদিকে, এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমেদ হাসানুজ্জামান মানিকসহ চারজনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় লোকজন ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা শেষে ঈগল প্রতীকের নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন করতে নেতাকর্মীদের সাথে গাড়িবহর নিয়ে বসুভান্ডারদহ এলাকায় যাচ্ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। এসময় নির্বাচনী অফিসে পৌঁছানোর আগেই তার গাড়িবহর গতিরোধ করা হয়। গাড়ি আটকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে নৌকার সমর্থকরা। পরে প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা গাড়ি থেকে নামলে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। খবর পেয়ে সরোজগঞ্জ ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। ততক্ষণেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সেখানে পৌঁছায় সদর থানার একাধিক টিম। পরে ঘটনাস্থলে যান জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার ড. কিসিঞ্জার চাকমা, পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন প্রশাসনিক কর্তারা। সেখান থেকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয় কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হাসানুজ্জামান মানিক, ভান্ডারদহ গ্রামের ফারুক হোসেন, সুমন ও শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের যুগিরহুদা গ্রামের হাফিজুর রহমানকে।
এসময় চুয়াডাঙ্গা জেলা যুব মহিলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আফরোজা পারভীন, জেলা যুব মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলিজা ও নির্বাচনী কর্মী নাজনীন আক্তার (৪৫), রাকিব, সালমান ও আফিলসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে দিলীপ কুমারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। হামলার সময় নারী সমর্থক ও নারী নেত্রীদের ওপর শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায় বলে জানিয়েছেন যুব মহিলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আফরোজা পারভীন। অপরদিকে মুস্তাকিন নামে এক নৌকা প্রতীকের সমর্থক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
স্বতন্ত্রপ্রার্থী দিলীপ কুমারের সমর্থকরা জানান, আমরা অফিসে বসেছিলাম। রাতে দিলীপ কুমার আগারওয়ালা আসবেন। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন আমাদের অফিসের সামনে এসে সেøাগান দিতে থাকেন। এর মধ্যে দিলীপ কুমার আসার সাথে সাথেই তারা হামলা চালায়। কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মানিক ও শংকরচন্দ্র ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিলুয়ার হোসেন এবং ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদের নির্দেশনায় হত্যার উদ্দেশ্যে ঈগল মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালার উপর হামলা করে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা। এর মধ্যে স্থানীয় সরোজগঞ্জ ফাঁড়ি পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং তিনজনকে আটক করে। এরই মধ্যে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মানিক পুলিশকে গালিগালাজ করেন এবং আটককৃতদের ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালান। তার নেতৃত্বেই পুলিশের উপস্থিতিতেই ঈগল মার্কার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালানো হয়। নারী কর্মীদের ওপর হামলার সময় অত্যন্ত অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন হাসানুজ্জামান মানিকের লোকজন। এসময় বেশ কয়েকটি রিকশা ভ্যান ভাংচুর করে হামলাকারীরা। আহত মুস্তাকিন বলেন, আমি নৌকা প্রতীকের একজন কর্মী। ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর বডিগার্ডরা এলোপাথাড়ি লাঠিচার্জ করে। এসময় আমিসহ বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছি। আমি সদর হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়েছি।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আফরোজা পারভীন, আলিজা খাতুন ও মুস্তাকিম নামের তিনজন আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এ বিষয়ে জানতে জেলা যুব মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আফরোজা পারভীনের নাম্বারে কল করা হলে অন্য একজন রিসিভ করে বলেন, আপা এখন কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই। এখন ব্যস্ত আছেন। পরে কথা বলবেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।
স্বতন্ত্রপ্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা অভিযোগ করে বলেন, ‘আধা ঘণ্টা ধরে গাড়ি আটকে আমার নামের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অশালীন স্লোগান দেয়া হচ্ছিল। আমি গাড়ি থেকে নামলে তারা মারমুখী আচরণ করে। আমার মাথায় পিস্তল ধরে অপহরণের চেষ্টা চালায়। পরে পুলিশকে খবর দিলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।’ তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ধারণা ছিলো একজন প্রার্থী হিসেবে কিছুটা সম্মান পাবো। কিন্তু যে ধরনের আচরণ করা হয়েছে তা কোনভাবেই কাম্য নয়। শুধু একবার নয়, দফায় দফায় আমার এবং আমার কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আজ হামলা চালিয়েছে। এর নেতৃত্বে ছিলেন কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হাসানুজ্জামান মানিক।’
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) শেখ সেকেন্দার আলী দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে পারছি না। কাজের মধ্যে আছি, তদন্ত করছি। আগামীকাল (আজ) সকালে বিস্তারিত জানাবো বলে মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এদিকে রাত ৩টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দিলীপ কুমারের পক্ষ থেকে সদর থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল বলে জানা গেছে।