যশোরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে পৃথক দুটি অ্যাম্বুলেন্সে রাতেই লাশ নেয়া হয় বাড়িতে
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার রায় লক্ষ্মীপুর গ্রামে দুই নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত পৌনে ১১টায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এরা হলেন আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের রায় লক্ষ্মীপুর গ্রামের আজিজ ওরফে আজিজুল (৫০) ও একই গ্রামের মিন্টু ওরফে কালু (৫০)। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, অন্য সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাত ১২টার দিকে দুজনের মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে বিচারিক ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে এই ফাঁসি কার্যকরের মধ্যদিয়ে টানা ১৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নিহতদের স্বজনেরা।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান বলেন, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার আলোচিত ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দ-প্রাপ্ত দুইজনের ফাঁসি কার্যকরের জন্য কয়েক দিন আগে থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিই। শনিবার যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে শেষবারের মতো তাদের দুজনের স্বজনেরা তাদের সঙ্গে দেখা করেন। তাদের দুজনের শেষ ইচ্ছা অনুয়ারী দুই পরিবারের অর্ধশতাধিক মানুষের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিয়েছি। এছাড়া তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী শনিবার গরুর কলিজা ও ইলিশ মাছ খাওয়ানো হয়। রোববার গ্রিল ও নান রুটি আর সোমবার মুরগির মাংস, দই আর মিষ্টি খাওয়ানো হয়।
এদিকে দুই খুনির ফাঁসি কার্যকর করার জন্য কারাগারের নিরাপত্তায় সন্ধ্যার পর থেকেই গোটা এলাকায় পুলিশ ও র্যাবের নজরদারি বাড়ানো হয়। ১৩ জন অস্ত্রধারী কারারক্ষী কারাগারে দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া পুলিশ ও র্যাবের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন কারাগারের প্রধান ফটকে।
কারাসূত্রে জানা গেছে, দুই খুনির ফাঁসি কার্যকরে রাতে একে একে কারাগারে প্রবেশ করেন যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দ্দার, সিভিল সার্জন দিলিপ শেখ আবু শাহীন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান। রাতে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত ওই দুই আসামিকে গোসল করানোর পর তাদের তওবা পড়ান কারা মসজিদের ইমাম। রাতেই স্বজনদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের পর তাদের খাবার খাওয়ানো হয়। এরপর তাদের রায় পড়ে শোনানো হয়। নিম্ন আদালতের রায়, আপিল এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমার আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার বিষয়টি তাদের জানানো হয়। পরে তাদের জমটুপি পরিয়ে ফাঁসির মঞ্চে নেয়া হয়। রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে প্রথমে মিন্টু ওরফে কালু এবং এর পাঁচ মিনিট পর একই গ্রামের আজিজ ওরফে আজিজুলের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
ফাঁসি কার্যকরে পাঁচ জল্লাদ কেতু কামার, মশিয়ার রহমান, লিটু হোসেন, আজিজুর রহমান ও কাদের অংশ নেন। ফাঁসি কার্যকরের পর সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে চিকিৎসক টিম তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর ফরেনসিক টিম ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার পর মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে সন্ধ্যায় খাসকররা ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রুন্নুর নেতৃত্বে মিন্টু ও আজিজুলের পরিবারের সাতজন সদস্য তাদের মরদেহ নিতে কারাগারে আসেন। এ সময় তাদের দুজনের জন্য পৃথক দুটি অ্যাম্বুলেন্স সঙ্গে ছিলো।
ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পরিবারের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের সময় কালু ও আজিজ সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে কাঁদতে থাকেন। লাশ রাতেই বাড়িতে পৌঁছানোর পর স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে এলাকার বাতাস। পরে ভোরেই দাফন প্রক্রিয়া করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আলমডাঙ্গা উপজেলার জোড়গাছা গ্রামের দুই নারীকে রায় লক্ষ্মীপুর গ্রামের মাঠে হত্যা করা হয়। তারা দুজন বান্ধবী ছিলেন। হত্যার আগে তাদের দুজনকে ধর্ষণ করা হয় বলে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধের পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে ওই দুই নারীর গলা কাটা হয়। এ ঘটনায় নিহত এক নারীর মেয়ে বাদী হয়ে পরদিন আলমডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় দ-প্রাপ্ত ওই দুজনসহ চারজনকে আসামি করা হয়। অপর দুজন হলেন একই গ্রামের সুজন ও মহি। মামলা বিচারাধীন অবস্থায় আসামি মহি মারা যান। ২০০৭ সালের ২৬ জুলাই এই মামলায় চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সুজন, আজিজ ও কালুকে মৃত্যুদ- দেন। এরপর আসামিপক্ষের লোকজন হাইকোর্টে আপিল করেন। পরে ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় বহাল রাখেন। ২০১২ সালে ১১ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ দুই আসামির রায় বহাল রাখেন এবং অপর আসামি সুজনকে বেকসুর খালাস দেন। ২০ জুলাই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান খালাসপ্রাপ্ত সুজন। পরে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আজিজ ও কালু রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান কিন্তু তা নামঞ্জুর হয়।
দেশে প্রতিটা ধর্ষণের বিচার ফাশি চাই
ফাশিটা উত্তম হয়েছে
আমাদের কলেজে বি এম শাখায় স্যারা পড়াই না ঠিক করে শুধু টাকা নেয় ফাজলামি করে প্রাইভেট পড়িয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা খুবিই খারাপ