দামুড়হুদার নাঈম বীজ ভান্ডারের বিরুদ্ধে সার কালোবাজারি ও অবৈধভাবে মজুদ রাখার অভিযোগ

ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা : হাজার বস্তা সার জব্দ

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদা বাজারের নাঈম অটো মোবাইল এন্ড বীজ ভান্ডারের দুটি গোডাউনে তল্লাশি চালিয়েছে দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি বিভাগ। এ সময় নতুন হাউলী গ্রামস্থ দুটি গোডাউনে অবৈধভাবে মজুদ রাখা প্রায় এক হাজার বস্তা চায়না ড্যাপ সার জব্দ করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট কেএইচ তাসফিকুর রহমান অবৈধভাবে সার মজুদ রাখার অপরাধে অসাধু সার ব্যবসায়ী হাসানুজ্জামান নাঈমকে ৩০হাজার টাকা জরিমানা করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল আনুমানিক ৮টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলার নতুন হাউলী গ্রামস্থ গোডাউন থেকে অবৈধযানযোগে পলিথিন জড়ানো দুটি সার ভর্তি গাড়ি দামুড়হুদা উপজেলা শহরের অভিমুখে আসতে দেখে কৃষক ও স্থানীয়রা। বিষয়টি রহস্যজনক হওয়ায় স্থানীয়রা গাড়ি দুটি থামিয়ে চালকদের কাছে বিস্তারিত জানতে চান। এ সময় সার ভর্তি গাড়ি চালকরা বলেন, সারগুলো দামুড়হুদা বাজারের নাঈম অটো মোবাইল এন্ড বীজ ভান্ডারের মালিক হাসানুজ্জামান নাঈমের। সারগুলো নেয়া হচ্ছে হোগলডাঙ্গা ও উজিরপুর গ্রামে। এ সময় স্থানীয়রা সারগুলো পলিথিন দিয়ে ঢেকে নেয়ার কারণ জানতে ও চালান দেখতে চান। চালকদ্বয় স্থানীয়দের প্রশ্নে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে থানা পুলিশ হেফাজতে দেয়া হয় সার ভর্তি গাড়ি দুটিকে। বিষয়টি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে অবগত করা হলে নড়েচড়ে বসে কৃষি বিভাগ। দুপুর ১২টার দিকে নাঈম অটো মোবাইল এন্ড বীজ ভান্ডারের নতুন হাউলী গ্রামস্থ পৃথক দুটি গোডাউনে অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি বিভাগ। এ সময় দুটি গোডাউনে অবৈধভাবে সার মজুদ রাখা ও অবৈধভাবে সার বিক্রির বিষয়টির সত্যতা পান। তাৎক্ষণিকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। এ সময় অভিযুক্ত সার ব্যবসায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালতে তার অপরাধ স্বীকার করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কে এইচ তাসফিকুর রহমান সার ব্যবস্থাপনা আইনে অভিযুক্তকে ৩০হাজার টাকার অর্থদন্ড দেন এবং অবৈধভাবে মজুদকৃত সারগুলো জব্দ করে সরকার নির্ধারিত মূল্যে কৃষকদের মাঝে বিক্রির নির্দেশনা দেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়া সার ব্যবসায়ী হাসানুজ্জামান নাঈম তার উপর অর্পিত জরিমানার অর্থ নগদে পরিশোধ করে দায় মুক্ত হন। কৃষকদের তার বিরুদ্ধে বেশি দামে সার বিক্রি, সার থাকতেও নেই বলে কৃত্রিম সংকট দেখানোর মতো অভিযোগ নিত্যদিনের। ভ্রাম্যমাণ আদালতে সহায়তা করেন দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, দামুড়হুদা প্রেসক্লাবের সভাপতি শামসুজ্জামান পলাশ, সাধারণ সম্পাদক তানজীর ফয়সাল, দামুড়হুদা মডেল থানার এস আই মেহেদী প্রমুখ। দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবির বলেন, স্থানীয়রা অবৈধভাবে পাচারের অভিযোগে দুই গাড়ি সার আটক করে থানা হেফাজতে দিয়েছে। দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, বেশ কয়েকজন কৃষক ও স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানিয়েছেন তারা কিছু সার জব্দ করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শে আমরা নাঈম অটো মোবাইল এন্ড বীজ ভান্ডারের দুটি গোডাউনে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে সার মজুদ ও বিক্রি করার সত্যতা পাই। তিনি বিএডিসির ডিলার এবং বরাদ্দ বহির্ভূতভাবে সারগুলো নিয়ে এসেছে বলে জানতে পারি। তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে দন্ড দিয়েছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট কে এইচ তাসফিকুর রহমান বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে নাঈম আটো মোবাইল এন্ড বীজ ভান্ডারের দুটি গোডাউনে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে সার মজুদের সত্যতা মেলে। তাৎক্ষণিকভাবে সার ব্যবস্থাপনা আইনে হাসানুজ্জামান নাঈমকে দোষী সাব্যস্ত করে ৩০হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় দোষী ব্যক্তি যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যক্রম আর না করে তার জন্য তাকে সতর্ক করা হয়েছে। জব্দকৃত সারগুলো উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার জিম্মায় দিয়ে সাধারণ কৃষকদের মাঝে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করতে বলা হয়েছে। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।