দলীয় মনোনয়নে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের আলোচনায় কাজী জাফরুল্লাহ

শেখ সফি: আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াস সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেছেন, আগামী জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন; তাই এখনই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের ঝা-াতলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থেকে শত্রুদের এখনই মোকাবেলা করতে হবে। গতকাল সোমবার দুপুরে মেহেরপুরের ঐতিহাসিক মুজিবনগর আম্রকাননে মুজিবনগর দিবসের আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আপনি চেয়ারে আছেন বলে মনোনয়ন পাবেন এমন না। দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। ষড়যন্ত্র হচ্ছে; আপনারা তৎপর হোন। আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে মন্ত্রিপরিষদ পর্যন্ত সকলেই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। একই মঞ্চে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশে বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এই দলকে হুমকি-ধামকি দিয়ে কোনো লাভ হবে না। আমরা একাত্তরে আলবদর রাজাকারদের পরাস্ত করেছি, প্রয়োজন হলে আবার তাদেরকে পরাজিত করা হবে। বক্তৃতায় তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না অভিযোগ করে বলেন, তিনি ছিলেন পাকিস্তানি এজেন্ট। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কারও অবদান রাখার সুযোগ নেই। জিয়াউর রহমান দেশে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী চেতনা প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে অভিযোগ করে মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আযম ও আলবদরদের নিয়ে তিনি সরকার গঠন করেছিলেন। অসংখ্য রাজাকারদের প্রতিষ্ঠা করে তিনি প্রমাণ করলেন তিনি কখনও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেননি। সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এ নির্বাচনে যাদের নির্বাচন করার সক্ষমতা আছে তারাই শুধু নির্বাচনে আসবেন। নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রমাণ করবেন জনগণ কাকে চায় আর কাকে চায় না। রাজপথে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়ে জনগণ তার পক্ষে আছে; এটা বলার কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ জনগণের ক্ষমতা ও শক্তিতে বিশ^াসী বলেও দাবি করেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাছিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, একাত্তরে যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি, তারা এখন আরও বেশি সংগঠিত। বর্তমান সরকারকে বিব্রত ও মহান স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তারা অব্যাহতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আজ সোমবার সকালে মেহেরপুরের ঐতিহাসিক মুজিবনগর আম্রকাননে মুজিবনগর দিবসের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, শেখ হাসিনার সরকার এসব অপশক্তি দমন করে রেখেছে। তবে দেশি-বিদেশি প্ররোচনায় তারা প্রায় সময়ই দেশের স্বাভাবিক অবস্থা বিপন্ন করার জন্য ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাই সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। রাজাকারদের তালিকা প্রকাশের বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এখন রাজাকারদের নামের তালিকা তৈরি করা হবে। আইন সংশোধনের মাধ্যমে সে কাজ করার পথ খুলে গেছে। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজম্মেল হক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন, সাবেক এমপি মকবুল হোসেন, উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দীন বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ইব্রাহিম শাহীন, উপজেলা অওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম তোতা, গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

এর আগে ভোরে ৬টায় জেলা প্রশাসনের পক্ষে পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। মুজিবনগর দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মেহেরপুর জেলা প্রশাসন।  প্রথম পর্বে সকাল সাড়ে ৯টায় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। পরে শেখ হাসিনা মঞ্চের সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মন্ত্রী। এ সময় পুলিশ, বিজিবি, আনসার সদস্যদের গার্ড অব অনার গ্রহণ করেন তিনি। অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা, গালর্স গাইড, বিএনসিসি কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করে। একই স্থানে বাংলাদেশ আনসার বাহিনী অর্কেস্ট্রা দলের গীতিনাট্য জল, মাটি ও মানুষ প্রদর্শন করা হয়। সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস এবং পর্যায়ক্রমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে তা অধিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরেন আনসার অর্কেস্ট্রা দলের শিল্পীরা।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরের আমবাগানে বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিলো। এ আমবাগানের নাম তখন পর্যন্ত ছিলো ‘বৈদ্যনাথতলা’। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে একটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান হয় এখানে। নতুন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি, সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা প্রকাশ্যে শপথ গ্রহণ করেন। অধ্যাপক ইউসুফ আলী আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। বাংলাদেশ সরকার পরবর্তী সময়ে ‘মুজিবনগর সরকার বা প্রবাসী সরকার’ নামেও পরিচিতি পায়। ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি করা হয়। আর প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তাজউদ্দীন আহমদ।

Comments (0)
Add Comment