স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে ভুট্টা খেতে শিশু মরিয়মের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। নিহত শিশুর সঙ্গে থাকা অপর শিশুদের বর্ণনায় আবুল হোসেন ফটিক (৩০) নামের এক যুবককে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এ দিকে ঘটনার দিন থেকে ফটিক পলাতক রয়েছেন। পুলিশ বলছে, অভিযুক্ত ফটিক উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে ফটিকের বাড়ি থেকে দুটি হাসুয়া ও তার হলুদ রঙের একটি ভ্যান উদ্ধার করে জীবননগর থানায় নেয়া হয়েছে। শিশু মরিয়ম হত্যার বিষয়ে জীবননগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, ‘আসামিকে গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে। মরিয়মের সঙ্গে যে শিশুরা মাঠে শাক তুলতে গিয়েছিলো তাদের দেয়া বর্ণনা ও বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে ফটিকের বর্ণনার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। আমরা তাকে আটকের অভিযান পরিচালনা করছি। তাকে আটকের পর সে এই ঘটনায় জড়িত কি না তা জানা যাবে।’ জীবননগর থানার ওসি এসএম জাবীদ হাসান বলেন, ‘সুরতহাল প্রতিবেদনে হত্যার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে ধর্ষণের বিষয়টি ডাক্তারি পরীক্ষার পর জানা যাবে।’ এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭-৮ জনকে থানায় আনা হয়েছিলো। তবে তাদের সঙ্গে এর সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। তাই তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’ শিশুটির ময়নাতদন্তের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা রবিন বলেন, ‘ওই শিশুর ময়নাতদন্ত করে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। রিপোর্ট পেতে আরও সময় লাগবে।’ এদিকে শিশু মরিয়ম হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা শুনে ছেলে ফটিকের ফাঁসির দাবি করেছেন তার মা। তিনি জানান, এর আগে গ্রামের এক ঘটনায় ফটিক ১০ বছর জেলে ছিলো। ৮-৯ মাস আগে জেল থেকে সে ছাড়া পেয়েছে। গ্রামের লোকজন তখন বলছিলো তাকে বিয়ে দেয়ার জন্য। গত রমজান মাসে ফটিককে বিয়ে দেয়া হয়েছিলো। তবে এক মাসের মধ্যে তার স্ত্রী তালাক নিয়ে চলে গেছে। ফটিকের মা বলেন, ‘এমন কাজ করেছে বাবা, আপনারা পেলে তাকে হত্যা করে দিবেন। তার ওপর আমার দায় নেই। আমি আমার বাকি দুই সন্তান নিয়েই বেঁচে থাকবো।’ অন্যদিকে নিহত শিশু মরিয়মের মা বলেন, ‘আমার ঝিকে (মেয়ে) খুব কষ্ট দিয়ে মেরেছে। হত্যার করার আগে খারাপ কাজ করেছে। বাধা দেয়ায় আমার মেয়ের পা-হাত ভেঙে দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা খুব গরিব। আমার মেয়ের পায়ের স্যান্ডেল তাই কিনে দিতে পারিনি। আমার মেয়ে যে প্যান্ট পরে মাঠে গিয়েছিলো, সেটাও লোকে দান করেছে। আমি মেয়েকে কিছুই দিতে পারিনি। আমি খুনের বিচার চাই।’ শিশু মরিয়মের সঙ্গে মাঠে শাক তুলতে যাওয়া শিশুরা জানায়, ঘটনার আগের দিন তারা মাঠে খড়ি (লাকড়ি) কুড়াচ্ছিলো। ওই দিন অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি তাদের কিছু বলেনি। পরদিন আবার মাঠে শাক তুলতে গেলে ওই ব্যক্তি ইন্তাজের স্কুলের পাশ থেকে তাদের শাক তুলে দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে শাক তোলার একপর্যায়ে শাক রেখে আসার জন্য ময়িরম উঠে পরে। এরপর আর ময়িরমকে খুঁজে পায়নি তারা। শিশুরা আরও জানায়, বেশ কিছু সময় পর ওই ব্যক্তি ভুট্টা ক্ষেত থেকে বের হয়। ওই ব্যক্তি ভুট্টা ক্ষেতে ঢোকার সময় তার হাতের হেসো চকচকে ছিলো। কিন্তু বের হওয়ার পর সেটিতে কালো রঙের ছোপ-ছোপ দাগ ছিলো। পরে ওই ব্যক্তি লাল-হলুদ রঙের ভ্যানে করে চলে যায়। যেই ভ্যানটি ফটিকের বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। উল্লেখ্য, গত ২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার গোয়ালপাড়া দক্ষিণ নতুন মসজিদ পাড়ার বাসিন্দা ইকবাল ম-লের মেয়ে মরিয়মের (১১) গলা কাটা মরদেহ ভুট্টা ক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়। পরদিন ২২ ডিসেম্বর ইকবাল ম-ল বাদী হয়ে জীবননগর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন। এদিন স্থানীয়রা জানায়, ময়িরম বেলা ১১টার দিকে প্রতিবেশী কয়েকজন শিশু আর তার ছোট বোনের সঙ্গে মাঠে শাক তুলতে যায়। দুপুরের দিকে মরিয়মের সঙ্গে যারা ছিলো তারা বাড়ি এসে জানায় মরিয়মকে একজন ভুট্টার মধ্যে নিয়ে গেছে। তাকে খুঁজে পাচ্ছে না তারা। পরে পরিবারের লোকজন মাঠে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করে ভুট্টা ক্ষেতে মরিয়মের গলা কাটা দেহ পড়ে থাকতে দেখে। এ সময় মরিয়মের গায়ে গেঞ্জি থাকলেও পরনের পায়জামা পাশে পড়ে ছিলো।