জীবননগর ব্যুরো: জীবননগর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ৬টি সোনার বার উদ্ধার করেছে। এসময় আটক করা হয়েছে চায়না খাতুন (৩৮) নামে এক নারীকে। গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জীবননগর উপজেলার হরিহরনগর গ্রামের জেলেপাড়ায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ চায়না খাতুন নামে ওই নারীসহ স্বর্ণগুলো আটক করেন।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আটককৃত চায়না খাতুন জীবননগর উপজেলার চিহ্নিত এক স্বর্ণ চোরাচালানী, যিনি শহরে একটি বহুতল ভবন বিশিষ্ট মার্কেট নির্মাণ করছেন তার আপন ভাগিনা এবং হরিহননগর গ্রামের আব্দুল হান্নান শেখের স্ত্রী।
জীবননগর থানা পুলিশের ওসি মো. আব্দুল খালেক জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারেন জীবননগর উপজেলার হরিহননগর গ্রামের আব্দুল হান্নান শেখের বাড়ি থেকে সোনার বড় একটি চালান ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এ সংবাদের ভিত্তিতে জীবননগর থানা পুলিশের সদস্যরা দ্রুত ওই গ্রামে গিয়ে আব্দুল হান্নান শেখের বাড়ি ঘেরাও করে রাখেন। পরে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) মুন্না বিশ্বাস, জীবননগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ন কবীর এবং জীবননগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল খালেক হরিহননগর গ্রামের জেলেপাড়ার আব্দুল হান্নান শেখের বাড়িতে যান এবং গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে ওই বাড়িতে অভিযান চালান। এ সময় চায়না খাতুনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাড়ির শোবার ঘরে টেলিভিশনের নিচ থেকে কসটেপ দিয়ে মোড়ানো ৬টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত সোনার বৈধতা সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য দিতে না পারার কারনে চায়না খাতুনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান বাড়ির মালিক আব্দুল হান্নান শেখ। গ্রেফতারকৃত চায়না খাতুন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তার স্বামী আব্দুল হান্নান চাষাবাদের পাশাপাশি ভারতে স্বর্ণ পাচার করতো। অর্থের বিনিময়ে অন্যের স্বর্ণ পাচার কাজে জড়িয়ে গিয়েছিলো সে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) মুন্না বিশ্বাস জানান, অভিযানে উদ্ধারকৃত স্বর্ণের বারের ওজন ৫৯ ভরি ১৪ আনা। যার আনুমানিক মূল্য ৪০ লাখ টাকা। স্বর্ণের বারগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়া হবে। মূলত স্বর্ণগুলো ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। স্বর্ণের প্রকৃত মালিকের নাম ঠিকানা জানতে আটককৃত চায়না খাতুনকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চায়না খাতুনকে চুয়াডাঙ্গা আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-কালিগঞ্জ হয়ে জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে সোনা পাচার হয়ে আসছে। জীবননগরে ৭-৮টি সোনা চোরাচালানের সিন্ডিকেট রয়েছে। প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে খুব সহজে এই রুট দিয়ে ভারতে সোনা পাচার করা যায়। এ কারণে সোনা চোরাচালানীরা জীবননগর রুট বেশি ব্যবহার করে থাকেন। গত ১৮ মার্চ বিকেলে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার বন্ডবিল নামক স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ আড়াই কেজি সোনার এবং তিনজন স্বর্ণচোরাচালানীসহ একটি প্রাইভেট কার আটক করে। পরে আটককৃতরা আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের কাছে সোনা চোরাচালানের মুল হোতা ৬ জনের নাম প্রকাশ করে। এতে জীবননগর উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামের মাহাতাব উদ্দীনের ছেলে সাংবাদিক ফয়সাল মাহাতাব মানিকের নাম উঠে আসে। পরে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয় ফয়সাল মাহাতাব মানিক আন্তঃজেলা স্বর্ণ চোরাচালান ও মাদক সিন্ডিকেটের মূলহোতা।