জনগণের উন্নয়নে বর্তমান সরকার সব সময় এগিয়ে

চুয়াডাঙ্গায় রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণের উদ্বোধনকালে এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হাসিনার হাত ধরে দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। জেলায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ওভারপাস নির্মাণ উন্নয়নের বড় অর্জন। নির্মাণ কাজ শেষ হলে চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মেহেরপুর জেলার একমাত্র সংযোগ সড়কে মানুষের ভোগান্তি কমবে। চুয়াডাঙ্গায় রেলস্টেশনে ট্রেন আসার আগেই নিয়ম অনুযায়ী দরজা বন্ধ করে দিতে হয়। সে সময় রেললাইনের দু’পাশেই যানজট লেগে যায়। ট্রেন না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এতে ভোগান্তির শেষ থাকে না। কিন্তু এ ওভারপাস নির্মাণ কাজ শেষ হলে মানুষ নির্বিঘেœ তাদের যাতায়াত অব্যাহত রাখতে পারবে। তিনি গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গায় ৭৫ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে রেলগেট ওভারপাস নির্মাণের কাজ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি আরও বলেন, শোকের মাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সকল সদস্যদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে আমি বলতে চাই শোককে শক্তিতে পরিণত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। শোকের মাস হলেও আজকের এই দিনটি চুয়াডাঙ্গা বাসীর জন্য একটি সারপ্রাইজ। জনগণের উন্নয়নে বর্তমান সরকার সব সময় এগিয়ে আছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, চুয়াডাঙ্গাসহ মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া এলাকার বহু কাঙ্খিত চুয়াডাঙ্গা রেলগেটের ওভারপাস সড়ক এ অঞ্চলের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ও মূল্যবান সময় বাঁচানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শুধু এই উন্নয়নই নয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় এ জেলায় এমন কোনো সড়ক নেই, যে সড়ক পাকাকরণ হয়নি। সামনে নির্বাচন আপনারা যদি আমাদের সঙ্গে থাকেন, নৌকার পক্ষে থাকেন আবারও সরকার গঠন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন। সেই ধারাবাহিকতায় চুয়াডাঙ্গার আরো একটি উন্নয়ন আমরা চাই। সেটি হল বাইপাস সড়ক। সেটিও ইনশাল্লাহ সম্ভব হবে।

ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে দোয়া শেষে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা। সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, ওভারপাস নির্মাণে ওই এলাকার যে সকল ব্যবসায়ীগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাদেরকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এ ব্যাপারে দোকানদারগণের চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমি এমপি মহোদয়সহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পৌর মেয়র মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি। অচিরেই এসব ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গাবাসীসহ এ এলাকার মানুষের জন্য চুয়াডাঙ্গা রেলগেট একটি বোবা কান্নার জায়গা হিসেবে মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়েছে। আমি জেনেছি প্রতিদিন চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশন হয়ে গড়ে ১০-১২টি ট্রেন আপ এবং ডাউনে যাতায়াত করে। প্রতিটি ট্রেন যদি যাতায়াত মিলে ২০ মিনিট সময় নেয়। সে ক্ষেত্রে ২৪ গুনন ২০ = ২৪০ মিনিট রেলগেটে যানবাহন গুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অর্থাৎ প্রতিদিন চার ঘন্টা রেলগেট পড়ে থাকে। এতে করে অনুধাবন করা যায় যে চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ এলাকার যানবাহন ও মানুষের জন্য এই ওভারপাস সড়কটি নির্মাণ হওয়া কতো বড় গুরুত্বপূর্ণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এলাকার মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা ভেবে জনগুরুত্বপূর্ণ এ কাজটি করার একনেকে অনুমতিসহ বাজেট প্রদান করেছেন। এ ধরনের উন্নয়ন ছাড়াও এদেশের মানুষকে বর্তমান সরকার দিয়েছে অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা, এদেশের তৈরি পোশাকের আকাশচুম্বী কদর বাড়িয়েছেন বিশ্বময়, খাদ্যে এসেছে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, কমেছে  মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন, চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলা জোয়ার্দ্দার টোটন, চুয়াডাঙ্গা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনজুরুল করিম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক শওকত আলী বিশ্বাস, চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন হেলা, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের, চুয়াডাঙ্গা সদর থানা অফিসার্স ইনচার্জ মাহাব্বুর রহমান কাজল, ডিআইও ওয়ান আবু জিহাদ খন্দকার ফখরুল আলম খান, চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক প্রমুখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী কাজী আজিজুর রহমান ও মিজানুর রহমান। উদ্বোধনের শুরুতে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের ব্যানারে সাবেক সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিকের নেতৃত্বে কবরী রোড থেকে একটি শোভাযাত্রা নিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একাডেমি মোড়ে উদ্বোধনী স্থানে এসে শেষ করে ।

চুয়াডাঙ্গা সড়ক বিভাগ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৮ জুন প্রধানমন্ত্রী সেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। পরে সহজ রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব কাজ শেষ করে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ঠিকাদার চুড়ান্ত করা হয়।

নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুরুল করিম জানান, চুয়াডাঙ্গা একাডেমি মোড় থেকে শুরু হয়ে চুয়াডাঙ্গা ঝিনাহদহ বাসস্ট্যান্ড মসজিদ পর্যন্ত দীর্ঘ এ ওভার পাস হবে একটি দৃষ্টিনন্দন প্রকল্প। প্রায় ৪১৯ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০.২৫ মিটার প্রস্থ্যের ওভারপাস নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫ কোটি ১১ লাখ ৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মূল ওভারপাস তৈরি করা হবে। এছাড়া বাকী টাকা দিয়ে ভূমি অধিগ্রহণ, প্রকল্প এলাকায় বৈদ্যুতিক তার স্থানান্তরসহ সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ওভারপাসে সর্বমোট ১৩টি স্প্যান থাকবে। আগামী ২০২৪ সালের ৩০ জুন নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে ঢাকার বনানীর ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড।

Comments (0)
Add Comment