নজরুল ইসলাম: একদিকে করোনা পরিস্থিতি, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কারণে সাধারণ খেটে খাওয়া গ্রামের মানুষেরা দিশেহারা। বোরধান ঘরে না আসায় পরিবারের সদস্যদের বার্ষিক খাদ্যশস্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়ির অভিভাবকের কপালে ভাজ ঠিক সে সময়ে সরকারি ভাবে সরবরাহকৃত উচ্চ ফলন শীল জাতের ৮১, ৬৩ ও ২৮ জাতের ধানে দেখা দিয়েছে ব্লাস্ট রোগ। আক্রান্ত জমিতে আক্রান্ত রোধ করতে নানাধরণের পরামর্শ ও কিটনাশক ব্যবহার করেও মিলছে না তার প্রতিকার। পরিবার পরিজনের বার্ষিক প্রধান খাদ্য শস্যর এ পরিনতি দেখা দেওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে বিশেষ করে ৮১ জাতের ধানচাষিরা। সরকারি ভাবে সরবরাহকৃত ধানের বীজ লাগিয়ে এ ঘটনা ঘটায় বীজ লাগাতে উদ্যাক্তা কারিদের বিরুদ্ধে চাপাক্ষোভ বিরাজ করছে চাষিমহলে।
সূত্রে জানাগেছে, গত বছর চুয়াডাঙ্গায় বোর মোরসুমে বোর ধানের আবাদ হয়ে ছিলো প্রায় সাড়ে ৩৮ হাজার ৪৩ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ৬৮ হেক্টর জমিতে ২৮ জাতের বোর ধানে ভাইরাস জনিত ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। চলতি বোর মরসুমে প্রায় অনুরূপ জমিতে বোর ধানের চাষ হলেও কত হেক্টর জমিতে ব্লাস্ট রোগ লেগেছে তা নিরুপন করা যায়নি। প্রতি মরসুমেই সরকারি ভাবে তালিকা ভুক্ত কিছু চাষিদের মধ্যে বিনামূল্যে সার বীজ সহায়তা করা হয়ে থাকে। তারি ধারাবাহিকতায় চলতি বোরমরসুমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে চাষিদের মধ্যে উচ্চ ফলন শিল ৮১, ৬৩ ও ২৮ জাতের ধান বীজ সরবরাহ করা হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের দোস্ত গ্রামের ধানচাষি আবুসালেহ, বোরহান উদ্দিন, কাউছার, কুন্দিপুর গ্রামের ইব্রাহীম, আহম্মদসহ কয়েকজন চাষি অভিযোগ করে বলেন, গত বছর ২৮ জাতের বোর ধানে ভাইরাস জনিত ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর থেকে বলা হলো এ জাতের ধান এদেশে দীর্ঘদিন ধরে আবাদ হচ্ছে ফলে এর কার্যক্রম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। যার কারণে ভাইরাস লেগেছে। তাই চলতি মোরসুমে সরকারি ভাবে এ এলাকার তালিকাভুক্ত চাষিদের মধ্যে ৮১, ৬৩ ও ২৮ জাতের উচ্চ ফলশীল জাতের ধান বীজ দেয়া হয়। সেই ধান বীজ জনৈক ইব্রাহীমের জমিতে বীজতলায় চারা হিসাবে গড়ে তোলা হয়। ১ বিঘা জমিতে ধান লাগানোর জন্য ৮শ টাকা করে চারা (পাতো) নেয়া হয়। সবই চলছিলো ঠিক ঠাক,ধানের শীষে চাল ভারি হবার আগ মূহুর্তে শীষে পচন ধরেছে। আর অমনি শীষ শুকিয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে ধানের জমি। সকালে এক রকম দেখলে বিকালে জমিতে গিয়ে দেখচ্ছি অন্যরকম। চাষিরা জানান, বছরে পরিবারের সদস্যদের খাদ্য নিশ্চিত করতে ১-২ বিঘা করে বোর ধানের চাষ করেছি। শেষ মুহুর্তে দেখছি ধানের জমির এ অবস্থা। সরকারি বীজ মানে তো মানসম্পন্ন বীজ। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ এই জাতের ধান লাগিয়েছে। এখন দেখছি বিধি বাম ! চাষিদের ধানের জমির এ অবস্থা দেখে দায়িত্বরত উপসহকারি কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম চাষিদের জমিতে জান এবং ধনের জমি পরিদর্শণ করেন। তবে সরকারি বীজে ধানের এ অবস্থার কোন সদোত্তর নেই। এব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলী হাসান বলেন, এটা কোন মাটি বা বীজের কারণে হয়নি। ব্লাস্ট একটি ভাইরাস জনিত রোগ যা বাতাসে ছড়াই। আসলে বীজ তো আসে কৃষি গবেষণা খামার থেকে। গবেষকরা যে তথ্য আমাদেরকে জানায় আমারও চাষিদেরকে সে ভাবে পরামর্শ দেয় এবং আমদানিকৃত বীজ সরবরাহ করি। ৮১ জাতের ধানের বীজ ছিলো সর্বশেষ মানমন্মত বীজ। কি কারণে এমনটি হলো তা খতিয়ে দেকা হবে। সরকারি ভাবে সরবরহাকৃত ধানের বীজ লাগিয়ে যে সমস্থ চাষি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের বিষয়টি কর্তৃপক্ষ যেন গুরত্বসহকারে দেখে তার দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল।