স্টাফ রিপোর্টার:
বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করে আড়াইমাস বয়সী এক শিশুকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে পিতার বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় পিতা অভিযুক্ত ইখলাছ উদ্দিনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মাঝেরপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ইখলাছ উদ্দিন তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে মাঝেরপাড়ায় বাসাভাড়া থাকেন।
সূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার বাড়াদী ইউনিয়নের আঠারোখাদা গ্রামের ইখলাছ উদ্দিন চারবছর আগে জেহালা ইউনিয়নের সোনাতনপুরের আব্দুল মোমেনের মেয়ে স্বামী পরিত্যাক্তা মিতালী খাতুন মিতাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ইখলাছের প্রথম স্ত্রী আঁখি খাতুন নিঃসন্তান, বাড়িতে থাকেন। বিয়ের পর থেকে দ্বিতীয় স্ত্রী মিতাকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা শহরে থাকেন ইখলাছ। গত কয়েক মাস যাবৎ ইখলাছ উদ্দিন তার দ্বিতীয় স্ত্রী মিতাকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মাঝেরপাড়ার পলাশ উদ্দিনের বাড়িতে বাসাভাড়া থাকেন। আড়াইমাস আগে তাদের কোলজুড়ে আসে পুত্রসন্তান। নাম রাখা হয় ইকবাল।
গতকাল বুধবার সকাল ৮টার দিকে মাঝেরপাড়ায় ওই বাড়িতে শিশু ইকবাল অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শিশুটিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন চিকিৎসক। সেখানে নেয়ার পথে মারা যায় শিশু ইকবাল। সন্ধ্যায় খবর পেয়ে মুন্সিগঞ্জের সোনাতনপুর থেকে নিহত শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শিশু ইকবালের মা মিতালী খাতুন মিতা অভিযোগ করে বলেন, আমার অন্য এক জায়গায় বিয়ে হয়েছিলো। পারিবারিক কলহের কারণে বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। আমার আগের পক্ষের দুই ছেলে হাসান ও হোসাইন আমার পিতার কাছে থাকে। চারবছর আগে প্রথম স্ত্রীর কোনো সন্তান না হওয়ায় ইখলাছ আমাকে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে সে আমাকে সন্দেহ করতে থাকে। পরে আমাদের কোলজুড়ে আসে এক ছেলে সন্তান। ওই ছেলে তার নয় বলে জানায় ইখলাছ। মিতা আরও বলেন, বুধবার সকালে বাড়ির কাজ করছিলাম। সেসময় ইখলাছ ছেলেকে কোলে নেয়। হঠাৎ সুস্থ ছেলে কেঁদে ওঠে। পরে গিয়ে দেখি আমার ছেলের বাম পা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। ইখলাছের নিকট জানতে চাইলে সে টিকা দেয়ার স্থান থেকে রক্ত বের হচ্ছে বলে জানায়। পরে ডাক্তারের কাছে নিলে ডাক্তার জানায়, টিকা দেয়ার স্থান থেকে কোনো রক্ত বের হয়নি। ছেলের বাম পায়ের অন্য স্থানে একটি ইনজেকশন পুশ করার চিহ্ন রয়েছে। সেখানে ফুলে গেছে। আমার ছেলেকে বাম পাশে বিষ মিশ্রিত ইনজেকশন পুশ করে হত্যা করা হয়েছে বলে মিতা অভিযোগ করেন।
মিতা বলেন, ১৫ দিন আগে আমার ছেলে ইকবাল অসুস্থ হলে তাকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখান থেকে অমিডন নামের একটি সিরাপ কিনে চারদিন খাওয়ায়। ৫ দিনের দিন সেই সিরাপ থেকে বিষের গন্ধ পাই। সন্দেহ হলে দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করি। কে বা কারা আমার ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওষুধে বিষ মিশিয়ে রেখেছিলো সে সময় বুঝতে পারিনি।
বাসামালিক সাইফুল ইসলাম পলাশের স্ত্রী শিল্পী খাতুন ও প্রতিবেশি শরিফুলের স্ত্রী লতা খাতুন বলেন, সকালে শিশু ও শিশুর মায়ের কান্নায় ছুটে আসি। এসে দেখি শিশুটি খুব কান্না করছে এবং শিশুটির পা দিয়ে রক্ত ঝরছে। শিশুটির পায়ের টিকা দেয়ার স্থানের পাশে একটি ফুটা। গত ৪ দিন আগে শিশু ইকবালকে টিকা দেয়া হয়। টিকা স্থান শুকিয়ে গেছে। পাশে আরও একটি ইনজেকশনের ফুটা দেখে সন্দেহ হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন জানান, দুপুরে শিশু ইকবালকে আমার কাছে নিয়ে আসা হয়। তখন শিশুটির অবস্থা খারাপ ছিলো। শিশুটির খিচুনি হচ্ছিলো। তার মা বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করার অভিযোগ করছিলেন। শিশুটির বাম পায়ে একাধিক ইনজেকশন পুশের চিহ্ন ছিলো। শিশুটির শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়। তবে, শিশুটির পায়ে কোনো ইনজেকশন দেয়া হয়েছে তা ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাবে না। বেঁচে থাকলে রক্ত পরীক্ষা করে বলা যেতো। তার আগেই তো শিশুটি মারা গেলো।
এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে জানান, সন্ধ্যায় খবর পেয়ে মুন্সিগঞ্জের সোনাতনপুর শিশুর নানাবাড়ি থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া নিহত শিশুর পিতা ইখলাছকে আটক করা হয়েছে। নিহত শিশু ও আটক ইখলাছকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাইদ দৈনিক মাথাভাঙ্গা বলেন, ইকলাছকে আলমডাঙ্গা থানা থেকে চুয়াডাঙ্গা থানায় নেয়া হয়েছে। নিহত শিশুর মরদেহের সুরতহাল শেষে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।