দীর্ঘদিন ধরে নগদ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দেয়ার হেতু নিয়ে প্রশ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষার টাকা আদায়ে চরম অনিয়ম স্বেচ্চাচারিতার অভিযোগ উত্থাপনের সাথে সাথে মোটা অংকের অর্থের হদিস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বলা হয়েছে, গত ১০ মাসের 3 লাখ ৩৮ হাজার ৪শ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিলেও নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা হিসেবে মোটা অংকের টাকা গেলো কোথায়? তাছাড়া সরকারি এতোটাকা দীর্ঘদিন ধরে কার স্বার্থে কোথায় রাখা ছিলো? সভা আহ্বানের তাগিদের পরই কি তড়িঘড়ি করে কিছু টাকার হিসেব দেখিয়ে তা জমা দেয়া হলো? জুনমাসে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪ হাজার ৪৩ জনের। জনাপ্রতি ১শ টাকা করে নেয়া হলেও ৪ লাখ ৪ হাজার টাকা হয়। অথচ এ মাসে ১ লাখ ১০ হাজার ২শ টাকা। বাকি টাকা গেলো কোথায়?
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা দীর্ঘদিন পর গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় উঠে আসে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য টাকা আদায়ের নানা অভিযোগ। নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত অর্থ যেমন আদায় করা হয়েছে, তেমনই সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও দরিদ্র দুস্থ রোগীদের নিকট থেকেও নেয়া হয়েছে টাকা। কোনো? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতেই গতকালের সভায় গঠন করা হয়েছে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি। এ কমিটি আগামী দিনে করোনা পরীক্ষাসহ চিকিৎসার বিষয়ে তদারকিও করবে। চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়রকে প্রধান করে গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের খবর তাৎক্ষণিকভাবে ছড়িয়ে পড়লে কমিটির সভাপতি ও অভিযোগ উত্থাপনকারীকে আভিনন্দন জানান অনেকে। তাদেরই কয়েকজন প্রশ্ন তুলে বলেছেন, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা আহ্বানের তাগিদ পাওয়ার পর গত ২৫ জুলাই নমুনা পরীক্ষার ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪শ টাকা চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে সেপ্টেম্বর মাসের ৩২ হাজার ৪শ, অক্টোবরে ২৫ হাজার ৮শ, নভেম্বর মাসে ৩০ হাজার ১শ, ডিসেম্বরে ২৩ হাজার ৯শ, জানুয়ারি মাসে ১৮ হাজার ২শ, ফেব্রুয়ারি মাসে ১১ হাজার ৪শ, মার্চ মাসে ২২ হাজার, এপ্রিল মাসে ৩৯ হাজার ৭শ, মে মাসে ২৪ হাজার ৭শ, জুন মাসের ১ লাখ ১০ হাজার ২শ টাকা। মাস ভিত্তিক এ হিসেবে দেখানো হলেও অভিযোগকারীদের অভিমত, জুন মাস পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্যমতে ১৪ হাজার ১শ ৩১ জনের। এ হিসেবে যদি জনাপ্রতি ১শ টাকা করেও নেয়া হয় তা হলে মোট টাকার পরিমান দাঁড়ায় ১৪ লাখ ১৩ হাজার ১শ টাকা। অভিযোগকারীরা বলেছেন, সরকার নির্ধরিত ১শ টাকা হারে টাকা নেয়ার কথা থাকলেও ফোটকপি করাসহ নানা অজুহাতে ব্যাক্তি বুঝে টাকা নেয়া হয়েছে আরও বেশি। অধিকাংশের নিকট থেকেই ১শ ২০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। এছাড়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করার সময় আদায় করা হয়েছে ৩শ থেকে ৫শ টাকা করে। গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে এসব প্রসঙ্গ প্রকাশ্যে উত্থাপিত না হলেও অভিযোগকারীদের মুখে মুখে ঘোরে নানা অনিয়মের চিত্র। উঠে আসে পরিষ্কার পরিছন্ন কর্মী প্রসঙ্গ। অভিযোগকারীরা বলেন, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সুইপার থাকার কথা ৫০ জন। রয়েছেন ৪ জন। ফলে প্রতিদিনই পরিষ্কার পরিছন্নতার নামে হাত ভাউচারের মাধ্যমে খরচ দেখানো হয় মোটা অংকের টাকা।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক প্রতিমাসে একবার হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর এ সভা আহ্বানই করা হয়নি। গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতেই সভার সভাপতি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বয়ং প্রশ্ন তুলে বলেন, দীর্ঘদিন সভা আহ্বান করা হয়নি কেনো? নিজের তাগিদে ক’দিন আগেই জরুরীভাবে সভা আহ্বানের তাগিদ দেয়ার পরও সভা করতে সময় লেগে গেলো আরও কটা দিন। সভায় করোনা পরীক্ষার টাকা আদায় নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠন করা হয়েছে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি। পৌর মেয়রকে প্রধান করে গঠিত কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন পেশ করবে।